ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জুবায়ের বারি

রোবটের সাহায্যে অপারেশন

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ৭ এপ্রিল ২০১৭

রোবটের সাহায্যে অপারেশন

হামবুর্গের মার্টিনি হাসপাতালে বিশ্বের অন্য সব হাসপাতালের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্টেট অপারেশন করা হয়। সেই অপারেশন যারা করেন, তাদের মধ্যে নামকরা শল্যচিকিৎসক ছাড়া একটি রোবটও আছে! প্রফেসর আলেক্সান্ডার হ্যেজে প্রস্টেট অপারেশনের স্পেশালিস্ট। তার সহকারী কিন্তু একটি ব্যতিক্রম, সে হলো একটি রোবট। এই রোবটই প্রফেসর হ্যেজেকে রোগীর শরীরের ক্যানসারগ্রস্ত একটি অংশ পুরোপুরি কেটে বাদ দিতে সাহায্য করে। প্রফেসর হ্যেজে বলেন, ‘প্রস্টেট অপারেশনে একেবারে নিখুঁতভাবে কাজ করাটা খুব জরুরী। খুব অল্প জায়গার মধ্যে মিলিমিটার বাই মিলিমিটার কাজ করতে হয়। কারণ সেখানে পেশি, স্নায়ু, প্রস্টেট গ্ল্যান্ড, সবই থাকে।’ এমন জটিল অপারেশনে রিমোর্ট কন্ট্রোল শল্যচিকিৎসক ‘দ্যা ভিঞ্চি’ রোবটের ডাক পড়ে। অপারেশনটা এতই জটিল যে, এই হাই-টেক এ্যাসিস্টেন্ট ছাড়া তা এত নিখুঁতভাবে করা সম্ভব নয়। তবে ‘দা ভিঞ্চি’ কাজ শুরু করার আগে ডাক্তাররা পেশেন্টের পেটে গ্যাস পাম্প করে স্ক্রিনের ইমেজটাকে আরও বড় করে নেন। এর পর ক্যামেরা আর ইনস্ট্রুমেন্ট ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ভার্চুয়াল অপারেশন প্রফেসর হ্যেজে বলেন, ‘অনেক পেশেন্ট জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি আমার থেকে অনেক বেশি দূরে আছেন? আপনি তো আমার পেটের মধ্যে না দেখে, টেলিভিশনের স্ক্রিনটায় দেখছেন।’ অথচ স্ক্রিনে যা দেখা যাচ্ছে আর আমার হাত যা করছে, তাতে আমি যে কোন ম্যানুয়াল অপারেশনের চেয়ে পেশেন্টের বেশি কাছে রয়েছি।’ সার্জন ভার্চুয়াল অপারেশন করছেন চোখ স্ক্রিনের ওপর, হাতের আঙ্গুগুলো ‘লুপ‘-এর মধ্যে। প্রফেসর হ্যেজের হাতগুলো যা করছে, অপারেশন টেবিলে তার হাই-টেক সহযোগী রোবট পেশেন্টের পেটের মধ্যে পিন্সেট আর কাঁচি ঢুকিয়ে ঠিক সেই মুভমেন্টগুলো করছে। হাত কাঁপার ঝুঁকিটা এভাবে বাদ দেয়া সম্ভব হয়েছে। প্রফেসর হ্যেজে বললেন, ‘আমি সত্যিই ত্রিমাত্রিক দেখতে পাচ্ছি, তার ওপর আবার দশগুণ বড় করে। বিশেষ করে যেসব অপারেশনে অতি স্বল্প পরিসরের মধ্যে ছোট ছোট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কাজ করতে হয়, সেখানে এটা একটা বড় সুবিধা রয়েছে।’ রোবট আর সার্জন মিলে এ পর্যন্ত মোট ৭৫০টি অপারেশন করেছেন। মিলিমিটার মিলিমিটার করে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডটি ছাড়িয়ে নেয়া হলো। এবার সেই নাটকীয় মুহূর্ত। নাইকুণ্ডুলীতে একটি ছোট ফুটো দিয়ে রোগগ্রস্ত অঙ্গটিকে টেনে বার করে নিয়ে আসা হলো। এখনই পরীক্ষা করে দেখা হবে, ক্যানসারগ্রস্ত টিস্যু পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হয়েছে কিনা। হামবুর্গের এই হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি প্রস্টেট অপারেশন করা হয়। মোট তিন ঘণ্টা অপারেশনের পর ডাক্তার আর রোবটের টিম টিউমারটিকে বাদ দিতে পেরেছেন। পেশেন্ট এখন ক্যানসার মুক্তÑ তিনি এবার তাঁর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। সূত্র : বিবিসি, ডয়েচ ভেলে
×