স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত কয়েক মাস ধরেই বেশ আলোচনা হচ্ছে। ৪২ বছর হয়ে গেছে বয়স, কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও খেলে যাচ্ছেন মিসবাহ-উল-হক। ওয়ানডে ও টি২০ ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ালেও টেস্ট ক্রিকেট খেলছেন নিয়মিত। তবে পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দলকে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরেও তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স তেমন ভাল না হওয়াতে তীব্র সমালোচনার মুখে আছেন মিসবাহ। অবসর নিয়ে ফেলা উচিত এমন পরামর্শও শুনেছেন। তবে প্রতিবারই সেসবে কর্ণপাত করেননি তিনি। এবার নিজে থেকেই ঘোষণা দিলেন অবসরের। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৩ টেস্টের সিরিজ খেলবে পাকিস্তান দল। আর এ সিরিজ শেষেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
৪২ বছর বয়সী মিসবাহর টেস্ট অভিষেক হয় ২০০১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অকল্যান্ডে। এরপর থেকেই দলের অপরিহার্য ক্রিকেটার হয়ে ওঠেন। নিয়মিত খেলেছেন গত ১৬ বছর। ২০১০ সালে দলের অধিনায়ক হিসেবে হাল ধরেন। গত ৭ বছর দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। গত বছরের শেষদিকে টেস্ট ক্রিকেটে দলকে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে তোলেন। ৭২ টেস্ট খেলেন তিনি। এর মধ্যে ৫৩ টেস্টেই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে দলকে জিতিয়েছেন ২৪ বার, হেরেছেন ১৮ বার এবং ১১ ম্যাচ ড্র করেছেন। অন্তত ১৫ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেয়া পাক অধিনায়কদের মধ্যে সাফল্যের হারে তৃতীয় সেরা মিসবাহ। ওয়াকার ইউনুস ১৭ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে ১০ জয়ের বিপরীতে হেরেছিলেন ৭টি। তিনিই পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে সেদিক থেকে সেরা অধিনায়ক। এরপর আছেন ওয়াসিম আকরাম, তিনি ২৫ টেস্টে দলকে জিতিয়েছেন ১২ বার। গত বছর থেকে অবশ্য ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে কিছুটা ভাটা পড়ে মিসবাহর। এ কারণে দাবি ওঠে অবসরে যাওয়া উচিত তার। কিন্তু মিসবাহ সেদিকে কোন গুরুত্ব দেননি। খেলা চালিয়ে গেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডও তার ওপর আস্থা রেখেছে। কিন্তু এবার অবসরের ঘোষণাটা দিয়েই দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজটি আমার শেষ সিরিজ। যতদিন খেলেছি আমি সন্তুষ্ট নিজের পারফর্মেন্সে।’
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বয়সী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার মিসবাহ। তার সময়ের ক্রিকেটাররা অনেক আগেই অবসরে গেছেন। কিন্তু ২০১০ সালে স্পট ফিক্সিং কা-ে কেঁপে ওঠা পাকিস্তান দলটির নেতৃত্বভার নিয়ে আবার মর্যাদা ফিরিয়ে আনেন। অবশ্য ২০১২ সালেই টি২০ ক্যারিয়ার এবং ২০১৫ সালে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টেনেছিলেন। এরপরও টেস্ট খেলা চালিয়ে গেছেন। নিরাপত্তা সমস্যায় পাকরা ঘরের মাটিতে টেস্ট খেলতে পারেনি। কিন্তু দেশের বাইরে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একের পর এক সাফল্য এনে দিয়ে পাকিস্তানকে স্বল্প সময়ের জন্য টেস্টের এক নম্বর দলে পরিণত করেন তিনি। তবে গত বছর নিউজিল্যান্ড সফরে ২-০ এবং এ বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর দাবি তোলেন সাবেক সেরা ক্রিকেটার মিসবাহকে অবসরের। সবমিলিয়ে টানা ১২ টেস্ট হারে পাকিস্তান। অবশেষে নিজেও উপলব্ধি করলেন সরে দাঁড়িয়ে তরুণদের সুযোগ করে দেয়ার সময় এসেছে। কিন্তু সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমার সময় দরকার।’ কিন্তু বৃহস্পতিবার বললেন, ‘আমার ক্রিকেট অভিযানটা খুবই ভাল হয়েছে। ক্যারিয়ারে অনেক কঠিন সময় এসেছিল। কিন্তু এখন সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েই ভাবছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সিরিজের মধ্যে দিয়ে দলকে আবার জয়ের ধারায় ফেরাতে চাই। সর্বশেষ ৬ টেস্টের ফলাফল কখনও আমাদের দলের শক্তিমত্তার প্রমাণ দেয় না।’ মিসবাহ ৭২ টেস্টে ৪৫.৮৪ গড়ে করেছেন ৪৯৫১ রান। আছে ১০ সেঞ্চুরি ও ৩৬ ফিফটি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: