ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিবিদ মহাসম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

গ্যাস বিক্রির চুক্তি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৭ এপ্রিল ২০১৭

গ্যাস বিক্রির চুক্তি করে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি

বিডিনিউজ ॥ ভারত সফরের ঠিক আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বললেন, প্রতিবেশী দেশটির কাছে গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিততে দেয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ২০০১ সালের ওই নির্বাচনে জিতে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পটভূমি তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এল। আর সেই ক্ষমতায় আসার পেছনে বেশ ভাল একটা চুক্তি ছিল- বাংলাদেশের সম্পদ গ্যাস। এই সম্পদ গ্যাস বিক্রি করতে চাইল আমেরিকা, কিনবে ভারত; আমেরিকান কোম্পানি গ্যাস তুলবে, ভারতের কাছে বিক্রি করবে।’ যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব তার কাছেই দিয়েছিলেন জানিয়ে নিজেকে ওই ‘ঘটনার প্রত্যক্ষ’ সাক্ষী হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। ‘তখন আমি বলেছিলাম, আমাদের দেশে কত গ্যাস আছে, আমরা এখনও জানি না। আমাদের দেশের মাত্র সামান্য কয়েক পার্সেন্ট মানুষ এই গ্যাসের সুবিধাটা পাচ্ছে। ‘দেশের সম্পদের মালিক জনগণ। আগে জনগণের চাহিদা আমাকে পূরণ করতে হবে। চাহিদা পূরণ করার পর ৫০ বছরের মজুদ রাখব ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য.. তার অতিরিক্ত গ্যাস যদি থাকে, তখন আমরা তা বিক্রি করতে পারি। তার আগে বিক্রি করতে পারি না।’ পাকিস্তান আমলে বিদেশী কোম্পানির কাছে ইজারা দেয়া প্রত্যেকটা গ্যাসফিল্ড যে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর জাতির জনক নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে বাংলাদেশের সম্পত্তিতে রূপান্তরিত করেছিলেন সেই প্রেক্ষাপটও সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সামনে তুলে ধরেছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। ২০০০ সালের ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশ সফরে আসেন বিল ক্লিনটন। ১৭ বছর আগে ক্লিনটনের সঙ্গে ওই বৈঠকের ফল নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব স্বাভাবিকভাবে অত বড় একটা দেশের প্রেসিডেন্ট.. তাকে আমি এ কথা শোনালে.. এটা তো কিছু নাখোশ হওয়া স্বাভাবিক। ‘আর বিএনপি তাদের মুচলেকা দিয়ে দিল, ক্ষমতায় গেলে গ্যাস তারা বিক্রি করবে।’ এর আগেও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, তিনি গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হননি বলেই ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছিল। তবে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ওই পরিকল্পনায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ এ্যান্ড এ্যানালাইসিস উইং (র) এবং বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রথমবারের মতো তুলেন তিনি। শুক্রবার চারদিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এবারের সফরে সাইবার নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, পারমাণবিক শক্তি, বিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৩৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা। তবে দীর্ঘদিন থেকে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও সে বিষয়ে কোন অগ্রগতি হয়নি। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওই প্রসঙ্গ আবার তুলেন শেখ হাসিনা। বক্তব্যে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সফরে আসা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সৌজন্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমানের সরকারী বাসভবন যমুনায় মধ্যাহ্ন ভোজের স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা। ওই মধ্যাহ্ন ভোজে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিল্লুর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গ্যাস বিক্রির বিষয়টি আলোচনায় আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওখানেও এই আলোচনা। আমি বলে দিলাম, আমার যা বলার ছিল; আমি তা আপনাদের প্রেসিডেন্টকে বলে দিয়েছি। তিনি যখন ঢাকায় আসলেন তখনও বলেছি, আমাকে যখন রাষ্ট্রীয় সফরে দাওয়াত দিয়ে আমেরিকায় নিয়ে গেল; তখনও একই কথা বলেছি। আমার এই নীতির কোন পরিবর্তন হবে না। ‘এই আলোচনা যখন এক পর্যায় শেষ হলো, আমরা চলে আসলাম। বিএনপির নেতারা ওখানে থেকে গেলেন,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা। ‘তারপর, তাদের মধ্যে গ্যাস বেচার চুক্তি করেই ২০০১ এ তারা ক্ষমতায় আসল। ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কিন্তু বেশি ভোট পেয়েছে, কিন্তু সিট পেল না।’ ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সংগঠনটির সভাপতি এটিএম আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের মহাসচিব আব্দুর রশীদ খান। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। ঠিক একই সময়ে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সভাপতি এ টি এম আবুল কাশেম।
×