ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৭ এপ্রিল ২০১৭

চক্ষু মেলিয়া ॥ নিয়ামত হোসেন

মানুষের অদ্ভুত এবং উদ্ভট খেয়ালের সীমা পরিসীমা নেই যেন। কত ধরনের বিষয় নিয়ে যে তারা প্রতিযোগিতা করে তা শুনলে অবাক হতে হয়। কিছুকাল ধরে এক অদ্ভুত ধরনের প্রতিযোগিতা চালু হয়েছে রাশিয়ায়। সেখানকার উড়াল পর্বতমালার কাছের শহর বেরেজনিকী শহরের এক স্থানে মশার কামড় খাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এটা হচ্ছে মেয়েদের জন্য প্রতিযোগিতা। শহরের এক পুকুরের ধারে নির্দিষ্ট এক সময়ে লোকজন জড়ো হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মহিলারা কাছেই নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়েন। তারপর মিনিট কুড়ি সময়ের এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কুড়ি মিনিট ধরে মেয়েরা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন সেখানে। কুড়ি মিনিট পার হলে প্রতিযোগিতা শেষ! কাছেই থাকেন ডাক্তার এবং নানা পেশার লোক। শুরু হয় পরীক্ষা। বিশেষজ্ঞরা দেখেন মশারা কাকে কামড়েছে সবচেয়ে বেশি। যিনি বেশি কামড় খেয়েছেন তিনি বিজয়িনীÑ অর্থাৎ চ্যাম্পিয়ন। তারপর আনন্দ-উল্লাস। এই কামড় খাওয়ার প্রতিযোগিতা শেষ হলে শুরু হয় আরেকটি প্রতিযোগিতা। সেটা মশা মারার প্রতিযোগিতা। একটু পরেই শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। সেখানে সমবেত লোকজন তৎক্ষণাৎ শুরু করে মশা ধরার প্রতিযোগিতা। এটা কিন্তু মশা মারার প্রতিযোগিতা নয়। মশা ধরার প্রতিযোগিতা। জ্যান্ত মশা ধরে ধরে আটকাতে হবে। কে কত বেশি মশা ধরতে পারল এটা হচ্ছে তারই প্রতিযোগিতা। এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ ধরে চলে ‘মশা ধরার উৎসব। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় এই প্রতিযোগিতা। এরপর যার সংগ্রহে বেশি মশা দেখা যায়, তিনিই হন বিজয়ী চ্যাম্পিয়ন। শুরু হয় আনন্দ উল্লাস এবং বাহবা ধ্বনি। মশার কামড় খাওয়া এবং জ্যান্ত মশা ধরা- এই প্রতিযোগিতাকে নিছক একটা আনন্দদায়ক খেলা বলা যাবে কিনা সন্দেহ। নাকি এটা ‘নেই কাজ তো খই ভাজ’ এর মতো অবস্থা তাই বা কে বলবে! তবে যখন দেখা যাচ্ছে অনেক লোক এতে আনন্দ পাচ্ছে এবং বেশ কিছু মশা ধরা এবং পরে মারাও পড়ছে, তখন কাজটাকে মন্দ বলা যাবে না। ধারণা করা যায়, জায়গাটা পাহাড়ি এলাকা। সেখানকার মশাগুলো মোটা মোটা হবে। সেসব মশা ধ্বংস করাও হয়তো এই প্রতিযোগিতার একটা উদ্দেশ্য। তাহলে এর প্রশংসাই করতে হয়। জানা যায় দুনিয়াতে ৩৫০০ প্রজাতির মশা রয়েছে। তবে সব মশা মানুষকে কামড়ায় না। যেসব মশা কামড়ায় সেগুলো স্ত্রী জাতের। মশা প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ থেকে ৬০০ বার ডানা ঝাপটায় এতেই যে গুঞ্জন ওঠে সেটাই মশার গুনগুনানি মশার গান। এদেশেও রয়েছে বহু জাতের মশা। আমরা সাধারণত জানি এ্যানোফিলিস, কিউলেক্স, এডিস ইত্যাদি মশার কথা। ম্যালেরিয়া, গোদ ইত্যাদি রোগের কারণ মশা। আর এডিস হচ্ছে ডেঙ্গু রোগের কারণ। এদেশের গ্রামে গ্রামে মশা। শহরে শহরে মশা। একসময় ঢাকার নর্দমায় প্রায় নিয়ম করে মশার ওষুধ ছিটানো হতো। তখন মশার উৎপাত ছিল কম। আরও অতীতে, যখন ঢাকা ছিল ছোট শহর অথচ ঢাকায় ছিল অনেক পুকুর, জলাভূমি, তখন সেখানে ঢাকাকে মশামুক্ত করা হয়েছিল। এখন পুকুর, জলাশয়, খাল প্রায় সব শেষ। এখন শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং। আর ঘরে বাইরে, দিনে রাতে মানুষ আর মানুষ। এবং সব ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্যরে পাহাড় এখানে সেখানে। এখন এ শহরে যত মশা তা অতীতে কোন কালে ছিল না। এখন ‘কামান দেগেও’ এত মশা শেষ করা যাবে না। শেষ করা যাবে শহরটিকে আবর্জনামুক্ত, নোংরামুক্ত, ময়লামুক্ত, পরিচ্ছন্ন করতে পারলে। নিয়মিত ওষুধ ছিটালে এবং এ ব্যাপারে দীর্ঘমেয়াদে সুষ্ঠু কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে। নইলে এখন শহরে চার-পাঁচ তলায় উড়ে গিয়ে মানুষকে কামড়াচ্ছে। দুদিন পরে ২০-২২ তলা উঁচু ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হবেন দিনে-রাতে!
×