ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজনীতি বিমুখতা

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ৭ এপ্রিল ২০১৭

রাজনীতি বিমুখতা

রাজনীতির রসায়নটি বরাবরই বিচিত্র। বিভিন্ন সময় দিকবদল, পালাবদলের বাঁক ঘুরে সেই পথ অদ্যাবধি নতুন থেকে নতুনতর মাত্রা পেয়ে যায়। রাজনৈতিক আদর্শ, মূল্যবোধ ব্যাহত হওয়ার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনীতিকদের স্বচ্ছ দৃষ্টি লোপ পেয়েছে, বলা যায়। শাসনযন্ত্রে ঘটা করে পরিবর্তন ঘটলেও নীতির কোন পরিবর্তন হয় না। আবার নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সাধারণ মানুষের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় পেশিশক্তির আস্ফালন। সেই ট্র্যাডিশনের প্রতিফলন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অভিঘাতও বদল করে। মতাদর্শগত সংগ্রামকে ছাপিয়ে যুযুধান প্রতিপক্ষের সশস্ত্র সম্মুখ সমরের সংবাদ আজকাল আর মানুষের চিত্তচাঞ্চল্য ঘটায় না। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় এটিই যে, ঋণাত্মক রাজনীতির আদর্শ মানুষকে কোন বড় বিশ্বাসে বেঁধে রাখতে পারেনি। কিংবা তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে সহায়ক হয়নি। বরং কখনও মানুষের সখ্য আদায়ের জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনও বা বাহ্যজগত ব্যতিরেকে উদ্ভট রাজনৈতিক দর্শনের কল্পনা প্রকৃত সত্যের উন্মোচনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটটি আর মসৃণ, স্বচ্ছ এবং গণমুখী নেই। মানুষের জন্য রাজনীতি হলেও রাজনীতিকরা সে পথ মাড়াতে চান না অনেক সময়। ক্ষমতার দ-মু- বা হর্তাকর্তা সেজে মানব নিপীড়নের পথও বেছে নেয় কেউ কেউ। ক্ষমতাধর দেশের শক্তিগুলোর দাপটে অনুভূত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবস্থা অনেক সময় দুর্বল হয়ে যায়। রাজনীতি সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে না। রাজনীতির বর্তমানকালের যে হালচাল, তাতে তরুণদের অংশগ্রহণ তেমন নেই। প্রবীণদের হাতে নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গে তরুণরা যদি নিজেদের মেলাতে না পারে, তবে তার রাজনীতি বিমুখ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থেকে যায়। যে কারণে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে তরুণরা রাজনীতিবিমুখ। এবং এটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। রাষ্ট্রও এই তরুণদের রাজনীতিতে আসার জন্য বা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য উৎসাহ প্রদান করে, এমনটা নয়। রাজনীতিকরা পরস্পরের প্রতি যে ভাষায় তাদের ভয়, ভক্তি, শোক, করুণা, উল্লাস প্রকাশ করেন, সেখানে স্থূলতার উপাদান প্রভূত সমৃদ্ধ। কিন্তু দেখা যায়, বাস্তবতার মানদ-টি সেখানে ব্যবহৃত হয় না। সমাজ বিকাশের ধারায় পুরনো ও নতুন সমাজ ব্যবস্থার দ্বন্দ্বে, মূল্যবোধের রূপান্তর প্রত্যক্ষ করছে বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চ। তরুণরা রাজনীতিতে উৎসাহিত না হওয়ায় বৈশ্বিকভাবে ত্রিশ বছরের কম বয়সী সংসদ সদস্য মাত্র হাতেগোনা এক দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বে বর্তমানে ১২০ কোটি তরুণ ভোটার রয়েছে। যাদের ৫৭ শতাংশের বয়স কুড়ি থেকে চুয়াল্লিশ বছরের মধ্যে। কিন্তু সংসদ সদস্য মাত্র দুই ভাগেরও কম। আবার যারা সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব খুবই হতাশাজনক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরুণরা রাজনীতিতে আসতে চাইলেও তাদের নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। এছাড়া রাজনীতি চর্চার সুযোগ কম থাকা, অর্থের অভাব ও ভোটারদের আস্থার অভাব রয়েছে। ১৮ বছর বয়সে ভোটার হওয়া গেলেও এই বয়সে নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া যায় না। রাজনীতির চিন্তাজগত ও মনোজগতে দীনতা, অর্বাচীনতা বা আরও সহজ ভাষায় বললে মূর্খতা, একই সঙ্গে ক্ষুদ্র হৃদয়দৌর্বল্যও এর কারণ। আইপিইউ সম্মেলনের চতুর্থ দিনে ‘ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ানস’ শীর্ষক সংগঠনের দুদিনের বৈঠকে এসব আলোচিত হয়েছে। এরই আলোকে কতিপয় দাবি-দাওয়া পেশও করা হয়েছে। বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশের নিম্নকক্ষে কোন তরুণ সংসদ না থাকার বিষয়টি পীড়াদায়ক। বাংলাদেশও এই অবস্থার বাইরে নেই। বাংলার রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ যত বাড়বে, রাজনীতি তত গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ এবং গণমুখী হবে। সেই প্রত্যাশা নিয়ন্ত্রকদের।
×