ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য সম্মেলন আয়োজনে বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্বনেতবৃন্দ

প্রকাশিত: ০৮:০১, ৬ এপ্রিল ২০১৭

বর্ণাঢ্য সম্মেলন আয়োজনে বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্বনেতবৃন্দ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সব নিরাপত্তা শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বর্ণাঢ্য ও মনোলোভা সফল আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনে বুধবার সমাপনী দিনে বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বিশ্ব নেতারা। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশ। এই আয়োজনকে অনন্য ও স্মরণীয় হিসেবে উল্লেখ করে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। এরমাধ্যমে বিশ্ববাসীর ধারণা পাল্টেছে বলে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া ২৫ মার্চ গণহত্যার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি আদায়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সংসদীয় সংস্থা ইন্টারপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আরপিইউ) আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী দিনে আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশ্ব নেতারা বলেন, যোগদানের আগে অনেকেরই শঙ্কা ছিল বাংলাদেশ এতো বড় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে পারবে কি না। কিন্তু আমাদের দেখা বাংলাদেশেই সবচেয়ে ভাল, সফল ও বর্ণাঢ্যময় সম্মেলন সফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। আর এ মাধ্যমে বাংলাদেশের সক্ষমতাও প্রমাণ হয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পীকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনী অধিবেশনে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুনগুংও বক্তব্য রাখেন। এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোর পক্ষ থেকে আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতের প্রতিনিধি আর পি সিং বলেন, এর আগেও কয়েকটি আইপিইউ সম্মেলনে যোগ দিয়েছি। কিন্তু আমার দেখা বাংলাদেশই সবচেয়ে ভাল ও সফলতম সম্মেলন উপহার দিয়েছে। এবারের সম্মেলন আমার দেখা সফলতম সম্মেলন। আমি এখানে এসে অভিভূত হয়েছি। আর এতো বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। বাংলাদেশ যে এখন অনেক সমৃদ্ধ ও সক্ষমতাও বেড়েছে এই সম্মেলন তার প্রমাণ। আর আরপিইউ মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও সংস্কৃতির সঙ্গেও আমরা পরিচিত হতে পেরেছি। আমরা বুঝতে পারি- একটা সম্মেলন করতে কম শ্রম করতে হয়েছে। ইউরেশিয়ার প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও সংসদ আমাদের যেভাবে গ্রহণ করেছে, সফলতম সম্মেলন উপহার দিয়েছে সেজন্য অবশ্যই এদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাই। যখন প্রথম জানলাম ঢাকায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, তখনই আসার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠি। মনের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল- আদৌ বাংলাদেশ এতবড় সম্মেলন করতে পারবে? সম্মেলন শেষ দিনে উপস্থিত বিশ্বের কোন প্রতিনিধিই দ্বিমত করতে পারবেন না যে, বাংলাদেশ সফলতম সম্মেলন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। পর্তুগালের প্রতিনিধি বলেন, সম্মেলনের আগে বৈশ্বিক অস্থিরতা, নিরাপত্তা শঙ্কাসহ নানা কথা উঠেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ অত্যন্ত সুন্দর ও সফলভাবে সম্মেলন শেষ করে তাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের অভাবনীয় আন্তরিকতা, অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তায় সত্যিই আমি মুগ্ধ। উরুগুয়ের এমপি লুই এলবার্টো হেবার বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে অন্যতম ক্রিকেট। আমাদের দেশ ফুটবলে অনেক ভাল খেলে। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক ভাল খেলে, অনেক জনপ্রিয়ও। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও সন্তুষ্ট উরুগুয়ের এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভালই দেখছি। বাংলাদেশের জনগণ অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ। এখানকার খাবারেরও অনেক সুনাম রয়েছে। উগান্ডার ২৭ বছর বয়েসি নারী এমপি অসরো মাউরি বলেন, বাংলাদেশের খাবার খুব মজা। আমি বার বার এসে এ দেশের খাবার খেতে চাই। আফ্রিকার এমপি এম বর্নোটো জানান, বাংলাদেশের মানুষ এক কথায় চমৎকার। আতিথেয়তা মুগ্ধ আমি। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নয়নের শিখরে যাচ্ছে সেটা বিশ্বের অন্য দেশের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠছে। সুইজারল্যান্ডের শারীরিক প্রতিবন্ধী এমপি ক্রিসশান লাহ’র বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রাণশক্তিতে ভরপুর। আমি দেশে থাকতে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের কথা শুনেছি। শুনে ভয়ও পেয়েছিলাম। কিন্তু এসে সেই ভুল ভেঙ্গে গেছে। নিজেকে কখনও অনিরাপদ মনে হয়নি। আমি বার বার এ দেশে আসতে চাই। নেদারল্যান্ডের সংসদ সদস্য প্রফেসর নাইকো স্রিজহার বলেন, সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তবে আশা করছি যে, আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে। যদিও এটা বাংলাদেশের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং, সব দলের অংশগ্রহণে ভাল একটি নির্বাচন করা। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন, শক্তিশালী এবং যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। আরপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুনগুং বাংলাদেশ সরকার, জাতীয় সংসদসহ সবাইকে সফল সম্মেলন উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সম্মেলন সফল করতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদসহ সবাইকে যে আন্তরিক দেখেছি, তা সত্যিই ভুলে যাওয়ার নয়। আর ঢাকার মাটি আমার জন্য সৌভাগ্য এনে দিয়েছে। সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে আরপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সভাপতি হিসেবে নয়, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসাবে ইতিহাসে প্রথম এতোবড় একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন সফল করতে পেরে খুবই গর্বিত। এটা একটি দেশ ও জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে জঙ্গী হামলা সত্ত্বেও আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। নিরাপত্তা সঙ্কটের মধ্যে আমরা এ সম্মেলন সফলভাবে শেষ করে ভয়কে জয় করেছি। আগামীতেও এ ধরনের যেকোন ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বের পার্লামেন্টারি ফোরাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে। সন্ত্রাসবাদের অশুভ তৎপরতায় আমরা ভয় পেয়ে বসে থাকব না। তিনি বলেন, আমরা যেটা বলি সেটা করি। নিরাপত্তার বিষয়কে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। আগামীতে যেখানে সম্মেলন হবে সেখানে কী করব আমরা? যে শক্তি আমাদের দুর্বল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব আমরা। কোনভাবেই অপশক্তিকে দাঁড়াতে দেব না। আর সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো শুধু কাগজে নয়, বাস্তবে রূপ দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাব। পাঁচ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের সমাপনী ঘোষণা করে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এতবড় একটা সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্ব পালন সত্যিই আমার জন্য গর্বের বিষয়। এবারের সম্মেলনের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ওপর বিশ্ব গণতান্ত্রিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি। দশম জাতীয় সংসদের ওপর যে তাদের আস্থা রয়েছে সেটা প্রমাণিত হলো। তিনি বলেন, সফলতম সম্মেলন করতে পেরেছি আমরা। গণতন্ত্রে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এবারের সম্মেলনে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলে আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারব। সংসদীয় গণতন্ত্রে এই সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।
×