ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে আক্রান্ত ৩০ কোটি

বিষাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে নতুন রোগ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ৬ এপ্রিল ২০১৭

বিষাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে নতুন রোগ

সমুদ্র হক ॥ বিষাদগ্রস্ততা (ডিপ্রেশন) দিনে দিনে বাড়ছে। এ থেকে মানবদেহে তৈরি হচ্ছে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া; যা বড় ধরনের জটিল রোগ সৃষ্টি করে ভয়াবহ পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যায়। বিশ্বজুড়ে মানব মনে বিষাদগ্রস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বর্তমানে প্রতি এক শ’ জনে চার জনেরও বেশি বিষাদগ্রস্ত রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যা বাড়ছে। যা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষায়িত কোন ব্যবস্থা নেই। বিষাদগ্রস্ত ব্যক্তিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানসিক রোগী মনে করা হয়। হাসপাতালে ও কোন চিকিৎসকের কাছে গেলে উপযুক্ত চিকিৎসা মেলে না। একজন চিকিৎসক বললেন, এ ধরনের ব্যক্তিকে স্বজন ও কাছের বন্ধুদের মধ্যে সামাজিক পরিম-লে রেখে কাউন্সিলিং করা দরকার। যে রোগের উৎপত্তি মনের গভীর থেকে সেখানে ওষুধ তেমন কাজ করে না। ‘টেনশন’ মুক্ত হলে এই রোগের কিছুটা উপশম হয়। বিষাদগ্রস্ত ব্যক্তির অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে দীর্ঘ সময় কাটায়। তারা অনেক রাত অবধি জেগে থাকে। একটা পর্যায়ে ইনসমোনিয়ায় (অনিদ্রা) আক্রান্ত হয়। তখন কোন ট্রাঙ্কুলাইজার (ঘুমের ওষুধ) কাজ করে না। বিষাদগ্রস্ততা ও অনিদ্রা থেকে হৃদয় কম্পন (পালস) বেড়ে গিয়ে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। অল্প দূরত্বে হাঁটলে, সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় ওঠার সময় হাঁসফাঁস করা, উচ্চ রক্তচাপ,এ্যাসিডিটি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। একটা পর্যায়ে কোন কাজেই মন বসে না। সকল খাবারেই অরুচি ধরে। স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। বিষাদগ্রস্ততার অনেক কারণ থাকতে পারে এমনটি উল্লেখ করে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সকল কারণের সঙ্গেই থাকে মানসিক চাপ ও তা থেকে মানসিক ধাক্কা। এই চাপ ও ধাক্কা যখন অসহনীয় হয়ে ওঠে তখন চারপাশে নানা রোগব্যাধি জড়ো হতে থাকে। যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এ বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি ডিপ্রেশন এ্যান্ড আদার কমন মেন্টাল ডিসঅর্ডার্স গ্লোবাল হেলথ এস্টিমেট শিরোনামে প্রকাশিত বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বজুড়ে বিষাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ এই রোগে ভুগছে। যা উদ্বেগজনক পর্যায়ের দিকে যাচ্ছে। দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার বাংলাদেশে প্রায় ৬৪ লাখ মানুষ বিষাদগ্রস্ততায় ভুগছে। যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশকি ১ শতাংশ। এ ছাড়াও অন্তত ৬৯ লাখ মানুষ উদ্বেগজনক অস্থিরতার সমস্যায় ভুগছে। যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। ভারতে বিষাদগ্রস্ততার হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ভুটানে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বিষাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে কম পূর্ব তিমুরে, মাত্র ৩ শতাংশ। ১৯৯০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স এ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণা করছে। তাদের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথ্য-উপাত্ত সমন্বয় করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবন্ধকতার একটি অন্যতম কারণ বিষাদগ্রস্ততা। বিষাদগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন এমন এক চিকিৎসক বলেন, আর্থ-সামজিক কারণে অনেকে বিষাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হন। অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা, অবহেলার শিকার, বঞ্চনা, সন্দেহসহ পারিবারিক ও সামাজিক নানা অবস্থানগত কারণে বিষাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হচ্ছে নারী-পুরুষ। নারী বা পুরুষ কে বেশি আত্রান্ত হয় তার কোন পরিমাপ নেই। তরুণরাও আক্রান্ত হতে পারে। যে কোন মানুষই এই রোগের আওতায় পড়তে পারে জীবনের যে কোন সময়ে। অনেক সময় বিষাদগ্রস্ততার জন্য জিন বা বংশগত দায়ী। মা-বাবা এই রোগে ভুগলে তাদের সন্তানের মধ্যে এই রোগের জিন প্রবেশ করে আক্রান্তের ঝুঁকি থাকে। বিষাদগ্রস্ত মানুষের কোন কিছুতেই আনন্দ থাকে না। কাজে উদ্দীপনা পায় না। এরা দিনে দিনে অন্তর্মুখি বা আত্মকেন্দ্রিক (ইন্ট্রোভার্ট) হয়ে যায়। বাইরের কোন কিছুতেই এরা মন বসাতে পারে না। বহির্মুখী (এক্সট্রোভার্ট) হতে পারে না। ফেসবুক এদের সাময়িক স্বস্তি দেয় ঠিকই তবে তাতে থাকে অস্থিরতা। এই বন্ধ এই খুলে অনেক সময় রাতভর ফেসবুকে থাকে।
×