ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মালিঙ্গা, না সাকিব?

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৬ এপ্রিল ২০১৭

আজ মালিঙ্গা, না সাকিব?

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ দু’জনই দু’দলের বড় তারকা। আন্তর্জাতিক কিংবা ক্লাব টি২০, আইপিএল-সিপিএল কিংবা বিগব্যাশ, বিশ্বব্যাপী সরব উপস্থিতি তাদের। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ টি২০ সিরিজে লড়াইটা তাই লাসিথ মালিঙ্গা আর সাকিব-আল হাসানেরও। প্রথম দেখায় জয়টা হয়েছে মালিঙ্গার। তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের স্ট্যাম্প উপড়ে সফরকারীদের বড় স্কোরের আশা শেষ করে দিয়েছেন ঝাঁকড়া চুলে বিজাতীয় এ্যাকশনের অধিকারী এ লঙ্কান পেসার। ‘স্মার্ট প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের’ পুরস্কার পকেটে পুরেছেন তুখোড় মালিঙ্গা। অন্যদিকে ব্যাট হাতে ১১ রান করা সাকিব বোলিংয়ে ৩ ওভারে ২৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য সাকিব। মাশরাফি বিন মর্তুজার ক্যারিয়ারের শেষ টি২০ ম্যাচে নিশ্চয়ই জ্বলে উঠতে চাইবেন সম্ভাব্য পরবর্তী অধিনায়ক? ধুন্ধুমার ক্রিকেটে অভিজ্ঞতার বিচারে কেবল সতীর্থ নয়, প্রতিপক্ষ মালিঙ্গার চেয়ে কোন অংশে কম নন সাকিব। ৯৮ ম্যাচে ৯৭ শিকারে টি২০ ইতিহাসের সফলতম বোলার শহীদ আফ্রিদি। ৬৬ ম্যাচে ৮৬ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে মালিঙ্গা। বর্তমানে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনিই সবার ওপরে। ৫৮ টি২০তে ৬৭ শিকারে তারপরই সাকিব, সর্বোপরি পঞ্চম স্থানে। ২২৬ ক্লাব টি২০তে রেকর্ড ৩০৮ উইকেটের মালিক মালিঙ্গাকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। গত অস্ট্রেলিয়া সফরে ইনজুরিতে জর্জরিত এই অভিজ্ঞ পেসার আবারও মাঠে ফিরেছেন। ফিরেই আলো ছড়িয়েছেন তিনি। সেখানে ৩ ম্যাচে ৬ উইকেট নেয়ার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ফের ২ উইকেট। ভয়ঙ্কর ইয়র্কারের সঙ্গে এবার অভিজ্ঞতাটাও দারুণভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। তারুণ্যনির্ভর দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে ৩-০তে সিরিজ জয়ে মালিঙ্গার ভূমিকা ছিল অনেক। এই ৩৩ বছর বয়সেও নতুন বলে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন তিনি। আবার ডেথ ওভারেও এই ঝাঁকড়া চুলের গতিদানবের জুড়ি মেলা ভার। প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে পেলে যেন আরও বেশি করে জ্বলে ওঠেন মালিঙ্গা। মুখোমুখি ৫ টি২০তে তার শিকার ৮ টাইগার ব্যাটসম্যান। যে পাঁচ ম্যাচের একটিও জিততে পারেনি বাংলাদেশ (উল্লেখ্য, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরে এশিয়া কাপের যে ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল মাশরাফিরা, সেটিতে ছিলেন না মালিঙ্গা)। তাই মালিঙ্গাকে সুযোগ না দেয়ার পণ করেই আজ মাশরাফি-বিদায়ের ম্যাচে মাঠে নামতে হবে। অন্যদিকে ৬৭ উইকেটের পাশাপাশি ৬ হাফ সেঞ্চুরিতে ১১৭০ রান সাকিবকে বসিয়েছে আধুনিক টি২০’র সেরা অলরাউন্ডারের আসনে। যতই তামিম-মুশফিক-মুস্তাফিজ বলে গলা ফাটানো হোক, টাইগার ক্রিকেটে সত্যিকারের ম্যাচ উইনার তো তিনিই। প্রতিপক্ষ লঙ্কানরাও সেটি ভাল করে জানেন। টি২০তে দু’দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৬ উইকেট তারই, পরশু দুই শিকারে মালিঙ্গা এগিয়ে গেছেন। ব্যাট হাতে ৯৯ রান করেছেন সাকিব। দুই দলের টি২০ দ্বৈরথে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ২২৬ রান করেছেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩২ রান বাংলাদেশের সাব্বির রহমানের। সাব্বির অবশ্য আগের দুই ম্যাচেই করেছিলেন ১০৬ রান। কুশল ৪ ম্যাচে। যাই হোক, ব্যাটসম্যান সাকিব বোলার সাকিবের মতো ভয়ঙ্কর না হলেও লঙ্কানদের মাথা ব্যথার কারণ অবশ্যই। আর বোলার সাকিব, ব্যাটসম্যান সাকিব এক হয়ে অলরাউন্ডার সাকিব অনুমিতভাবেই লঙ্কানদের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। লঙ্কানদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে সাকিবের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৩২ রানের। সেরা বোলিং ২১ রানে ২ উইকেট। ব্যাট-বলে সাকিবের সেই সেরা দুটো পারফর্মেন্সই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র টি২০ জয়ের ম্যাচে। ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে এশিয়া কাপের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২৩ রানে হারায় বাংলাদেশ। লঙ্কানদের বিপক্ষে সেটাই হয়ে আছে টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশের একমাত্র জয়ের কীর্তি। সেই ম্যাচেই ব্যাট হাতে ৩২ রান করার পর সাকিব বল হাতে ২১ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। যদিও ম্যাচ সেরার পুরস্কারটি পেয়েছিলেন ৮০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলা সাব্বির রহমান। তবে অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সাকিবের অবদান ছিল অনেক। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা, আজ সিরিজের দ্বিতীয় টি২০তেও লঙ্কানদের বড় আতঙ্ক হয়ে উঠবেন সাকিব। ব্যাট-বলে জ্বলে উঠে দলকে এনে দেবেন জয়।
×