ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুই রিভিউ আবেদন আপীল বিভাগের কার্যতালিকায়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ এপ্রিল ২০১৭

সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের দুই রিভিউ আবেদন আপীল বিভাগের কার্যতালিকায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি রিভিউ আবেদন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় পুনর্বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আর সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে দেয়া আমৃত্যু কারাদ- থেকে খালাস চেয়ে আবেদন জানান সাঈদী। রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে উভয়পক্ষের করা আবেদন বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকায় ১৩৮ নম্বরে আছে। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর সুধারামপুরের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী মোঃ নুরুল ইসলাম ওরফে নুর হোসেন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার আমির হোসেনসহ অন্যান্য রাজকাররা গ্রামের তিন শত থেকে সাড়ে তিন গ্রামবাসীকে আটক করে। এর মধ্যে বাছাই করে আমার দাদা, চাচা, নানাসহ ৯ জনকে লাইনে দাঁড় করায়। এরপর এলোপাতাড়িভাবে গুলি করে হত্যা করে। বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে দুই সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসি্িকউটর জাহিদ ইমামস ও প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি রিভিউ আবেদন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় পুনর্বহাল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আর সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে দেয়া আমৃত্যু কারাদ- থেকে খালাস চেয়ে আবেদন জানান সাঈদী। দুটি রিভিউ আবেদনের শুনানিই একসঙ্গে নেবেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ। এ বেঞ্চের গত সোমবারের কার্যতালিকায়ও ১৪৭ নম্বর ক্রমিকে ছিল আবেদন দুটি। তবে আদালতের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সেদিন ওঠেনি। পরে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ৬ এপ্রিলের মধ্যে শুনানি শুরু এবং এর প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদী তিনি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদ- দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর সাঈদী আপীল করলে ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পাঁচ বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যে রায় দেয়, তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদ-ের আদেশ আসে। নোয়াখালীর ৫ রাজাকার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর সুধারামপুরের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১১তম সাক্ষী মোঃ নুরুল ইসলাম ওরফে নুর হোসেন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেন, আমার নাম মোঃ নুরুল ইসলাম ওরফে নুর ইসলাম। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬২ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম রামহরিতালুক, থানা সুধারাম, জেলা নোয়াখালী। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৬-১৭ বছর। তখন আমি বান্দেরহাট হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আমি বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে সংগ্রাম কমিটিতে যোগ দেই। এবং আমাদের বাড়ির পাশে ৬৯নং রামহরিতালূক প্রাইমারী স্কুলের মাঠে মু্িক্তযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করি। সাক্ষী আরও বলেন, একাত্তরের ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল আনুমানিক ৬টা সাড়ে ৬টার দিকে আমি আমার বর্ণিত প্রাইমারী স্কুলের মাঠে ট্রেনিং নেয়ার জন্য যাই। এ সময় আমার নানা আলী আহম্দে এসে আমাকে জানায় যে, পাকিস্তানী আর্মি ও রাজাকাররা দেবীপুর, উত্তর চাকলা ও রামহরিতালূক গ্রাম ঘেরাও করে রেখেছে। সেখানে আমার বাবা, চাচা, নানাসহ প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন শত গ্রামবাসীকে আটক করে। এর মধ্যে বাছাই করে আমার দাদা, চাচা, নানাসহ ৯ জনকে লাইনে দাঁড় করায়। এরপর এলোপাতাড়িভাবে গুলি করে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, আমার নানা মমিনউল্লাহ, মামা সাহাবউদ্দিন, নুরউদ্দিন, চাচা শফিকউল্লা, জুলফিকার আলী, দাদা সেরাজুল হক, উত্তর চাকলা গ্রামের রমজান আলী, রামহরিতালূক গ্রামের আনার উল্লাহ ও হেঞ্জু মিয়া ওইদিনই আমরা শহীদদের লাশ বাড়িতে এনে দাফন করি। পরবর্তী সময়ে ওই সকল শহীদদের স্মরণে রামহরিতালূক প্রাইমারী স্কুলের মাঠের দক্ষিণ পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। যেখানে আমার বর্ণিত নয়জন শহীদের নাম লিখা আছে।
×