ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের দেড় কোটির বেশি প্রতিবন্ধী যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৬ এপ্রিল ২০১৭

দেশের দেড় কোটির বেশি প্রতিবন্ধী যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না

নিখিল মানখিন ॥ দেশের মেডিক্যাল শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য কোন পাঠ্যক্রম নেই। সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছ থেকে সঠিক চিকিৎসাসেবা পান না প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। হাসপাতালগুলোতে আছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ফলে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ ভাগ প্রতিবন্ধী মানুষ যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারী সংগঠন এ্যাকশনএইডের ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষা : রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষকে অন্যান্য অসুস্থ মানুষের কাতারে ফেলে দেয়া হয়। যার মূল কারণ সচেতনতার অভাব। যারা আইননীতি করছেন তারা সচেতন নন। অনেক ক্ষেত্রে তারা ভালভাবে বিষয়টা বোঝেন না বা উপলব্ধি করেন না। দেশের প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য সরকারের উচিত আলাদা একটি বিভাগ করা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়টি কার্যত আটকে আছে। গবেষণায় আরও বলা হয়, শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম মানুষগুলো সরকারী-বেসরকারী পর্যায় থেকে কোন রকম সহযোগিতা না পাওয়ায় চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। সরকার, দাতা সংস্থা, এনজিও এমনকি সুশীল সমাজের কাছেও প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও সেবা অগ্রাধিকার পায়নি। এ ছাড়া সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, পদে পদে হয়রানি পোহাতে হচ্ছে তাদের। তাদের চিকিৎসায় নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত অবকাঠামো। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিদ্যমান ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারগুলোতে তারা যথাযথ সেবা পান না। সেখানে দক্ষ লোকের অভাব আছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় প্রতিবন্ধীদের দেখলে অনেক চিকিৎসক নানা রকম কুৎসিত মন্তব্য করেন ও চিকিৎসাসেবা দিতে অসম্মতি জানান। সরকারী বা বেসরকারী কোন হাসপাতালেই প্রতিবন্ধীবান্ধব টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। যে কারণে প্রতিবন্ধীরা নানা সমস্যায় পড়েন। এসব কারণেই দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৫ ভাগ প্রতিবন্ধী মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত থাকছে। গবেষণায় সরকারী-বেসরকারী পর্যায় থেকে সমন্বিত উদ্যোগ, প্রতিবন্ধীবান্ধব আইনের বাস্তবায়ন, চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণ, চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্তি বাজেটে বরাদ্দ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে। এদিকে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমান বিশ্বে প্রতিবন্ধী শব্দটি পরিবর্তন হয়ে এখন তাদের বলা হয় ‘বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ’। সরকার এ ধরনের বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নির্ধারণ, দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ, নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান, ছবিসহ ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং লক্ষ্যভুক্তির কৌশল সহজতর করার লক্ষ্যে ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির শনাক্তকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল বিশেষায়িত হাসপাতাল এ্যান্ড নার্সিং কলেজে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে অটিস্টিক, প্রতিবন্ধী শিশু ও মহিলাদের কমপক্ষে শতকরা ৩০ ভাগ দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অধিক সংখ্যক অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করার পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে। এসিড দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের কারিগরি শিক্ষা প্রদানের জন্য পিএইচটি সেন্টার, সরকারী বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, সরকারী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম ও জাতীয় বিশেষ শিক্ষা কেন্দ্র, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (ইআরসিপিএইচ), শারীরিক প্রতিবন্ধীদের গ্রামীণ পুনর্বাসন উপকেন্দ্র (আরআরসি), জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী সেবা, সাহায্য কেন্দ্র কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আওতায় দেশের সকল জেলায় ৭৩টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, হিয়ারিং টেস্ট, ভিজুয়্যাল টেস্ট, কাউন্সেলিং প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ‘প্রতিবন্ধীতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০০৯’ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ৫৫টি বেসরকারী প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের ১০০ ভাগ বেতন-ভাতা সরকারীভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে। সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের ফলে প্রতিবন্ধী স্কুলগুলোতে সার্বিক কর্মকা-ে আগের তুলনায় অনেক বেশি গতি সঞ্চার হয়েছে।
×