ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমঝোতা সই পিডিবির সঙ্গে

আদানীর কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ৬.৯৩ টাকা দরে বিদ্যুত কেনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৬ এপ্রিল ২০১৭

আদানীর কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ৬.৯৩ টাকা দরে বিদ্যুত কেনা হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ ভারতের আদানী গ্রুপ থেকে বিদ্যুত কেনার জন্য ৮ দশমিক ৬১২৭ সেন্ট বা ৬ টাকা ৯৩ পয়সা হারে প্রতি ইউনিটের দর নির্ধারণ করেছে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি। যা এখন পর্যন্ত ভারতের সরকারী-বেসরকারী খাতের আমদানি করা বিদ্যুতের চেয়ে অনেকটাই বেশি। দেশের বেসরকারী খাতে নির্মাণ করা বিদ্যুত কেন্দ্রের চেয়েও এই দর খানিকটা বেশি। ভারতের ঝাড়খ-ে বিদ্যুত কেন্দ্রটি স্থাপন করবে আদানী গ্রুপ। পিডিবির সঙ্গে আদানী গ্রুপের এ সংক্রান্ত সমঝোতায় বলা হয় এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্রটি ভারতের অভ্যন্তরে নির্মাণ করে ওই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত সরবরাহ করবে। প্রস্তাবিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক অনুমোদনও দিয়েছে সরকার। ভারত সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রির অনুমোদন নিয়েছে আদানী গ্রুপ। ভারত থেকে বিদ্যুত আদানীর ক্ষেত্রে সরকার দুটি খাতকে চিহ্নিত করছে। ভারতের সরকারের কাছ থেকে ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। বেসরকারী খাত থেকে আসছে আরও ২৫০ মেগাওয়াট। ত্রিপুরা কাছ থেকে আরও ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির জন্য শীঘ্রই চুক্তি হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতের সরকারী খাত থেকে (২৫০ মেগাওয়াট) প্রতি ইউনিট বিদ্যুত আমদানি হচ্ছে দুই টাকা ৭৮ পয়সায়। একই সময়ে ভারত থেকে আমদানি করা আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি হচ্ছে ৬ টাকা ১৪২৬ টাকায়। এর বাইরে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি হচ্ছে ৬ দশমিক ১৩২৪ টাকায়। বিদ্যুত বিভাগ তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে চট্টগ্রামে স্থাপিত এস আলম গ্রুপের ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্রর দরকে ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। যেখানে দর দেখানো হয়েছে প্রতি ইউনিটের ৮ দশমিক ২৫৫৭ সেন্ট। যা আদানীর দামের তুলনায় কম। বিদ্যুত বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মাহবুব-উল-আলমকে প্রধান করে ৬ সদস্যর একটি প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি যে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে তাতে দেখা যায়। বিদ্যুত কেন্দ্রটির সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২৫ বছরের একটি ক্রয় চুক্তি হবে। সাধারণত এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রর সঙ্গে ২০ বছরের চুক্তি হয়ে থাকে। কিন্তু আদানীর সঙ্গে চুক্তি হবে ২৫ বছরের জন্য। কোন ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের জন্য বেশি সময় বিদ্যুত উৎপাদন করার অনুমোদন পেলে দাম কমে আসার কথা। সেখানে আদানীকে উল্টো বেশি দাম দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে আদানী ঝাড়খ-ে বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে। এখান থেকে ভারতের অভ্যন্তরে ৯০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আদানী অনুমোদন নিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১৪৫ কিলেমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি)। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, প্রাদেশিক সরকার এবং যেসব প্রদেশের মধ্য দিয়ে বিদ্যুত সঞ্চালন করা হবে তাদের অনুমোদন নিশ্চিত করতে বলা হয় আদানীকে। আদানী গত বছর ২৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারকে ঝাড়খ- সরকারের অনুমোদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে। অন্য দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানি করা হলেও এখন পর্যন্ত সেই দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ স্বাপেক্ষে বিদ্যুত আমদানি করা হয়নি। বলা হচ্ছে বিদ্যুত জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধানে প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হচ্ছে। প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি বলছে প্রতি বছর দেশে ১০ ভাগ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। সরকার চাহিদা সামাল দিতে দেশী-বিদেশী খাত থেকে বিদ্যুতের সংস্থান করছে। তবে ক্ষেত্রে দামের বিষয়ে সতর্ক না হলে দীর্ঘমেয়াদী সঙ্কটে পড়তে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট আদানীর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে পিডিবি। এর আলোকেই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব দেয় তারা। শুরুতে আদানী প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর হাকে ৯ দশমিক ২৮৭১ সেন্ট।
×