ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অপহরণের ২২ দিন পর মিলল মাহিনের কঙ্কাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৬ এপ্রিল ২০১৭

অপহরণের ২২ দিন পর মিলল মাহিনের কঙ্কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপহরণের ২২ দিন পর মিলল শিশু মাহিনের কঙ্কাল। মাত্র পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় তাকে হত্যা করা হয় গলায় রশি পেঁচিয়ে। ঘাতকরা দূরের কেউ নয় কিংবা পেশাদার অপরাধীও নয়। তারা মাহিনেরই নিকটাত্মীয়। মুক্তিপণ না পাওয়ার ক্ষোভেই তাকে নৃশংস কায়দায় হত্যার পর খ-বিখ- লাশ লুকিয়ে রাখা হয় মাটির নিচে। রাজধানীর মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়া থেকে অপহরণের পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকা-ের নৃশংস বর্ণনা ওঠে আসে ঘাতকেরই মুখে। গলায় ফিতা পেঁচানোর আগেই মাহিন বুঝতে পারে তাকে হত্যা করা হবে। সে ঘাতকদের একজনের পায়ে পড়ে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আকুতি মিনতি করে বলেছিল, আমাকে মেরো না। মায়ের কাছে নিয়ে চল। আমি তোমাদের টাকা দেব। এরপর আর কথা বলতে পারেনি মাহিন। রশির দু’প্রান্তের এক টানেই নিথর হয়ে পড়ে তার দেহ। এরপর চলে তার মরদেহ খ-বিখ- করার মতো নৃশংসতা। একটা ব্যাগে ভরে সেগুলো নেয়া হয় সাভারের নতুন ট্যানারি এলাকায়। সেখানেই পুঁতে রাখা হয়। পুলিশ জানায়, দক্ষিণ পাইকপাড়া আলামান রোড থেকে অপহৃত হয়েছিল শিশু মাহিন। নয় বছর বয়সী শিশুটিকে শেষ পর্যন্ত আর জীবিত ফেরত পাওয়া গেল না। অপহৃত হওয়ার ২২ দিন পর তার কঙ্কাল উদ্ধার করেছে মিরপুর থানা পুলিশ। সাভার নতুন ট্যানারি ফেন্সি লেদার এন্টারপ্রাইজের দেয়াল সংলগ্ন ব্লকের নিচ থেকে মঙ্গলবার রাতে মাহিনের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। বুধবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় কঙ্কালটি। মাহিন ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার হরিগঞ্জ গ্রামের রিক্সাচালক মহিউদ্দিনের ছেলে। তারা দক্ষিণ পাইকপাড়ার ৩৮৭/১বি বাসায় ভাড়া থাকত। মহিউদ্দিন জানান, তাদের একমাত্র ছেলে মাহিন। সে মিরপুর ৬০ ফুট এলাকার আলোর পথ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। গত ১২ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুল ছুটির পর বাসায় ফেরার পথে সে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন জায়গা খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে ওই রাতেই মিরপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। এরপর ১৩ মার্চ সকালে মহিউদ্দিনের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে এবং মাহিনের মুক্তিপণ হিসেবে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়। পরে ১৬ মার্চ মিরপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন মহিউদ্দিন। মিরপুর থানার এসআই মতিউর রহমান বলেন, যে ফোন নম্বর দিয়ে মহিউদ্দিনকে ফোন দেয়া হয়েছিল সেই নম্বরটি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়। এরই সূত্র ধরে মাহিনের চাচা সুজন এবং শহিদুল নামে আরও একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তারা মাহিনকে অপহরণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে। তাদের সহযোগী হিসেবে সাব্বির নামের আরও একজনের নাম উল্লেখ করে। বর্তমানে সাব্বির পলাতক রয়েছে। তারা টাকা পাবে না ভেবে মাহিনকে ফিতা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ব্লক দিয়ে চাপা রাখে। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাভার থানা পুলিশের সহায়তায় মাহিনের মাথার খুলি ও শরীরের হাড় সাভার নতুন ট্যানারি ফেন্সি লেদার এন্টারপ্রাইজের দেয়াল সংলগ্ন ব্লকের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, পলাতক সাব্বিরকে যে কোন সময় আটক করা হতে পারে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেই প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করা যাবে।
×