ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী হত্যাচেষ্টার বিচার না হওয়ায় আইপিইউর উদ্বেগ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৬ এপ্রিল ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী হত্যাচেষ্টার বিচার না হওয়ায় আইপিইউর উদ্বেগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ভয়াল হামলার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন আইপিইউ। সংস্থাটির গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি ঘটনার ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হয়নি। একুশে আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলা সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তি হবে বলে কমিটি আশা করছে। একই সঙ্গে কমিটি শাহ এ এমএস কিবরিয়া হত্যা মামলা সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তির বিষয়েও আশা প্রকাশ করেছে। বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইপিইউর পাঁচ দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী দিনে সংস্থাটির ‘কমিটি অন দ্য হিউম্যান রাইটস অব পার্লামেন্টারিয়ান্স’ কমিটির বার্ষিক রিপোর্ট উপস্থাপনকালে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কমিটির এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আইপিউর মূল ফোরাম গবর্র্নিং কাউন্সিল গ্রহণ করেছে। ঢাকায় সম্মেলন চলাকালীন ‘কমিটি অন দ্য হিউম্যান রাইটস অব পার্লামেন্টারিয়ান’ বাংলাদেশের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন প্রণেতাদের ওপর হামলা বিষয়ক মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আলোচনা করে। সম্মেললের মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংকালে কমিটির সভাপতি আফগানিস্তানের আইনপ্রণেতা ফৌজিয়া কুফি বলেন, কমিটিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ দুটি বিষয়ে জানানো হয়েছে। আমরা জেনেছি এ দুটো বিষয়ই বিচারাধীন। কমিটি আশা করছে মামলা দুটির ‘ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার ট্রায়াল’ হবে। ফৌজিয়া বলেন, কমিটি বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রীর পরিবার এবং অভিযুক্তদের মামলাটির বিষয়ে সময়ে সময়ে যথাযথভাবে অবহিত করতে বলেছে। এমপিদের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করা এই কমিটির গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিলম্বিত বিচার বিচারহীনতার শামিল। কোন প্রকার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া এই ঘৃণ্যতম অপরাধের জাতীয়-আন্তর্জাতিক মানের বিচার দ্রুত হওয়া উচিত। বাংলাদেশের আইনসভা জাতীয় সংসদ এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। পরবর্তীতেও আইপিইউর এই কমিটি মামলাটির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করবে। কমিটির এবারের সেশনের গৃহীত রেজ্যুলেশনে বলা হয়, এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে ১৮ জন বিদেশে পালিয়ে আছে। এদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আইপিইউ সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে বা কোন ব্যক্তির কাছ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে কমিটি বিষয় ‘কেস’ নিয়ে আলোচনা করে। কোন দেশে কোন আইনপ্রণেতার মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই এমপির মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে তারা কথা বলেন। তিনি জানান, কোন এমপি যদি অপরাধে জড়িত হয়ে আইনের মুখোমুখি হয় তবে আইপিইউ সেটাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করে না। কমিটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সদস্য এবং বাংলাদেশের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী জানান, প্রতিবছর তিনবার কমিটির বৈঠক হয়। যথাযথ প্রমাণসহ কোন ব্যক্তি যদি কমিটির কাছে অভিযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এক বছরে ৪২ দেশের ৩৫৯ এমপি হয়রানির শিকার ॥ সংবাদ সম্মেলনে কমিটির প্রেসিডেন্ট ফৌজিয়া কুফি জানান, ৪২ দেশের ৩৫৯ এমপির মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং হয়রানির বিষয়ে তাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে বিরোধী দলের ৩৬৯, সংখ্যারিষ্ট দলের ৯০ এবং স্বতন্ত্র ১১ সংসদ সদস্যের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। ৩৫৯টি অভিযোগের মধ্যে আমরা ইতোমধ্যে প্রায় তিন শতাধিক অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করেছি। এছাড়া ফিলিপিন্স, তুরস্ক, ভেনিজুয়েলায় আইনপ্রণেতাদের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গঠন করাতে বলেছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তি দাবি করেছে এমপিদের মানবাধিকার সুরক্ষার নিয়ে কাজ করা এই কমিটি। কুফি জানান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে আমেরিকা অঞ্চলের ১৫৫, ইউরোপের ৬৩, আফ্রিকার ৮৯, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার ৩৯, এশিয়ার ১১০ ও দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরী অঞ্চলের তিনটি। ঢাকায় সম্মেলন চলাকালীন এসব ঘটনার মধ্যে ১৪৭ নিয়ে আলোচনা করেছে। পরে ৭৬ ঘটনার বিষয়ে তারা রেজুলেশন গ্রহণ করে। সংসদে তরুণ প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির করুন- আইপিইউ মহাসচিব ॥ সংসদ এবং রাজনীতিতে তরুণ সমাজের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন ইন্টার পার্লামেন্টারিয়ান ইউনিয়নের (আইপিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুংগং। এর জন্য আইপিইউ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিজ নিজ সংসদে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বুধবার সম্মেলনের সমাপনী দিনে সংসদ এবং রাজনীতিতে তরুণদের অংশগ্রহণ বিষয়ে এক বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান। তরুণ এমপিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আইপিইউতে নারীদের যে অংশগ্রহণ তা খুবই কম। তরুণদের যদি অন্তর্ভুক্ত করতে পারি তাহলে আরও ভাল হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, সারাবিশ্বের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যার মধ্যে ৩০ ভাগের কম তরুণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব করছে। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, এই সংস্থায় তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য উৎসাহিত করছি। তরুণদের সংসদ এবং রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। সব ফোরামে তাদের বেশি বেশি কথা বলার সুযোগ তৈরি কবে দিতে হবে। সম্মেলনে উপস্থিত সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আইপিইউ এবং জাতিসংঘের মধ্যে সমন্বয় রয়েছে। জাতিসংঘের কাঠামোর বাইরে আমরা কিছু করতে চাচ্ছি না। তবে তাদের সহায়তা নিয়ে আইপিইউর প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য তাদের নীতিগুলো সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ বিষয়ে নামিবিয়া সংসদের স্পীকার কার্টিন বলেন, তরুণদের সমাজের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হলে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে। আর অশিক্ষিত জাতির দুর্নাম ঘোচাতে হলে প্রাইমারি পাস করার আগে যে স্টেপগুলো রয়েছে সেখানে মনোযোগ বেশি করে দিতে হবে, যাতে একজনও কিশোর-কিশোরী শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। এসব বিষয় নিশ্চিত হলে সামাজিক উন্নয়নে তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
×