ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চৈত্রে বর্ষার আমেজ

আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে ৩৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৬ এপ্রিল ২০১৭

আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে ৩৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো

নিখিল মানখিন ॥ চৈত্রে বর্ষার আমেজ! তবে এটাকে আবহাওয়ার স্বাভাবিক আচরণ বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এমন অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। সারাদেশে গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হয়েছে প্রায় ১ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। চলতি মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় ও তীব্র তাপপ্রবাহ। বর্তমানে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হওয়ায় উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। বুধবার বিকেলের ভারি বর্ষণে দুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী। নগরীর অনেক নিচু এলাকায় সৃষ্টি হয় সাময়িক জলাবদ্ধতা। রাস্তাঘাট ও অলিগলি হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত। আর কুমিল্লায় ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিনের চালা উড়ে গিয়ে আহত হয়েছে ১২শিক্ষার্থী। ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সিলেট এলাকায় সৃষ্ট আকস্মিক বন্যার অবনতি হয়েছে এবং ওই এলাকার ৩৭ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। বজ্রপাতে গাইবান্ধা, শেরপুর ও কিশোরগঞ্জে একজন করে মোট তিনজনের মৃত্যু ঘটে। প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরী। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর খুব বেশি চৈত্রের খরা পোহাতে হয়নি দেশের মানুষকে। এ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যেই রয়ে গেছে। এ সময় যেকোন সময় দেখা দিতে পারে কালবৈশাখী ঝড়, সঙ্গে থাকতে পারে বৃষ্টি। গত বছরও এপ্রিলের ১ ও ২ তারিখে খরতাপ থাকলেও পরদিন থেকেই নেমে আসে মাঝারি থেকে ভারিবর্ষণ। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে দেশের অধিকাংশ এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এটি এই সময়ে আবহাওয়ার স্বাভাবিক আচরণ। আর ক’দিন পরই বাড়তে থাকবে তাপমাত্রা। এই মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ঝড়ো হাওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। সূত্রটি আরও জানায়, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী অথবা বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ঢাকা বিভাগে ১৪৪ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ১৫২, চট্টগ্রামে ১৪৩, সিলেটে ২৯৬, রাজশাহীতে ৮২, রংপুরে ৯৪, খুলনায় ৭৬ ও বরিশাল বিভাগে ১৩২ মিলিমিটার থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, আগামী মে মাসে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ওই দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২ থেকে ৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী অথবা বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩ থেকে ৪টি হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় হতে পারে। ওই মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ থেকে ২টি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২ থেকে ৩টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চট্টগ্রামে বুধবারও প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। নগরী ও জেলার সর্বত্রই আবহাওয়া ছিল দুর্যোগপূর্ণ। দমকা হাওয়া এবং বজ্রসহকারে বৃষ্টিপাতে সাধারণ জীবন বিঘিœত হয়। নগরীর নিচু সড়কগুলো চলে যায় পানির নিচে। সন্ধ্যার পরও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে। এদিকে, বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে প্রশাসন। কেন না, নির্দেশনা দেয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ বসবাসকারীই ঝুঁকিপূর্ণ বাসাগুলো থেকে সরে যায়নি। বুধবার বিকেল ৪টা থেকে বৈরী হতে শুরু করে আবহাওয়া। আকাশ অন্ধকার করে প্রচ- ঝড়ো হাওয়া নিয়ে শুরু হয় বৃষ্টিপাত। সঙ্গে ছিল বিকট শব্দের বজ্রপাত। এতে করে সাধারণ মানুষ বাসা বাড়িতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। কর্মজীবীরা আটকা পড়েন কর্মস্থলে। সড়কে যানবাহন চলাচল কমে যায়। নিচু রাস্তাগুলো ডুবে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় এক ধরনের স্থবিরতা। চট্টগ্রাম নগরীর শুল্কবহর, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাট, বাকলিয়া, কাপাসগোলা, চকবাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, বড়পুল, হালিশহর, ছোটপুল, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, সাগরিকা, তিনপুলের মাথাসহ নিচু এলাকাগুলোর সড়ক ডুবে যায়। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে বুক পানি। ফলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চৈত্রের শেষে এমনকি বৈশাখেও প্রকৃতির এটি স্বাভাবিক আচরণ। সাগরে কোন নি¤œচাপ বা লগুচাপ নেই। তবে বাতাসের তারতম্যের আধিক্য রয়েছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে মেঘমালার। এতে করে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ হতে পারে। তবে বর্ষণ ভারি না হলেও ঝড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাত থাকবে। এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার, বাটালী পাহাড়, পাহাড়তলীসহ বিভিন্ন এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। কেননা, বার বার সতর্কতা এবং নির্দেশনা সত্ত্বেও বসবাসকারীরা এখনও রয়ে গেছে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলোতে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে এদের সরাতে তৎপর হয় প্রশাসন। কিন্তু মৌসুমের আগেই ভারি বর্ষণ শুরু হওয়ায় অনেকটাই অপ্রস্তুত অবস্থা। ইতোমধ্যেই ওই সকল বাড়ি ঘরের বিদ্যুত ও অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও সরে যায়নি বসবাসকারীরা। চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাসরত শ্রমজীবী মানুষরা অল্প ভাড়ায় থাকার জন্য বেছে নেয় পাহাড়ের পাদদেশের ঘরগুলোকে। এগুলো উচ্ছেদ করা হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ফের ঘর বেঁধে ভাড়া দিয়ে থাকে। নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় বুধবার কালবৈশাখী ঝড়ের তা-বে বাড়িঘর, গাছ-পালা, ক্ষেতের ফসল ও বিভিন্ন স্থাপনার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুপুরে জেলার দেবিদ্বার উপজেলার খয়রাবাদ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের টিনের চালা উড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং এতে ওই বিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থী আহত হয়। কুমিল্লা-সিলেট সড়কসহ আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ ও গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়লে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছের ডালা ভেঙ্গে বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি এবং কাঁচা ঘরবাড়ির বেশ ক্ষতি হয়। ঝড়ের তা-বে চৌদ্দগ্রাম, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, বুড়িচং, দাউদকান্দি, হোমনা, তিতাসসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় গাছ-গাছালি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস থেকে জানান, বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সিলেটের সবক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এই দুটি উপজেলার ৩টি পাথর কোয়ারি জাফলং বিছনাকান্দি ও ভোলাগঞ্জে পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ রয়েছে। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল হাশেম জানান, এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৩৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। সিলেট বিভাগকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল প্রদান, বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ প্রদান, পাঁচহাজার টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ও এনজিও ঋণ মওকুফ, সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ৭ দফা দাবিতে বুধবার বেলা তিনটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হাওর রক্ষা আন্দোলন সিলেটের উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান ফাতেমা এবং সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন আবুল হোসেন। নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা থেকে জানান, ফুলছড়িতে বজ্রপাতে আলেয়া বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের বুলবুলির চরে ক্ষেত থেকে ভুট্টা তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। আলেয়া বেগম ওই ইউনিয়নের তিনথোপা গ্রামের আব্দুল আলিম মোল্লার স্ত্রী। নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর থেকে জানান, শেরপুরের শ্রীবরদীতে বজ্রপাতে বুদু মিয়া (৫৫) নামে এক মৎস্য প্রজেক্টের পাহারাদার নিহত হয়েছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার সীমান্তবর্তী সিংগাবরুনা ইউনিয়নের মাধবপুর মোর্গাচুরা এলাকার এক মৎস্য প্রজেক্টে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। নিহত বুদু মিয়া সিংগাবরুনা ইউনিয়নের রাজা পাহাড় সংলগ্ন বকুলতলা গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে। মৃত বুদু মিয়া জীবিকার সন্ধানে নিজ বাড়ি থেকে দূরে গিয়ে ওই মৎস্য প্রজেক্টে পাহারাদার হিসেবে কাজ করত। নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, জেলার হাওড় অধ্যুষিত মিঠামইনে বজ্রপাতে সুষেন মিয়া (২৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে দুইজন। বুধবার দুপুরে উপজেলার কেওয়ারজোড় হাওড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মিঠামইনের কেওয়ারজোড় রহমতপুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কৃষক সুষেন মিয়াসহ আরও কয়েকজন সকালে বাড়ির সামনে হাওড়ে ডুবে যাওয়া বোরো ধান ক্ষেত দেখতে যায়। দুপুরের দিকে আকস্মিক বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই সুষেন মিয়ার মৃত্যু হয়। এ সময় একই এলাকার তবারক মিয়া (২৫) ও জিয়ারুল (১৬) নামে দুইজন আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানে নূরুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নেত্রকোনায় ৯ বাঁধ ভেঙ্গে ফসল প্লাবিত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা থেকে জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের তোড়ে খালিয়াজুরি উপজেলার আরও ৯টি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এদিকে জেলার ৯ উপজেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ হাজার ৭শ’ ৪০ হেক্টর বোরো জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বুধবার বিকেল পর্যন্ত প্লাবিত ফসলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪শ’ ৪০ হেক্টর-এ। স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, অকাল বন্যায় এ পর্যন্ত ৭৭ হাজার ৫শ’ কৃষক পরিবারের ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮শ’ ৮ মেট্রিক টন ধান ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে। জীবন-জীবিকার অবলম্বন একমাত্র ফসল হারানোর কারণে হাওড়াঞ্চলের গ্রামগুলোতে এখন শোকের মাতম চলছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ধনু নদী দিয়ে বয়ে আসা পাহাড়ী ঢলের চাপে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুরের মধ্যে খালিয়াজুরির মেন্দিপুর ইউনিয়নের নাওটানা, পুটিয়া, পেটনা, কুড়পার এবং গাজীপুর ইউনিয়নের কেওরালা, কুমারিয়া, কেদারিয়া, পুইট্যা এবং খৈল্যার বাঁধ ভেঙ্গে যায়। বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে মেন্দিপুরের রোয়াইল, ঝালখালি, পুটিয়া, পেটনা এবং গাজীপুরের বুড়বুড়িয়া, বেড়ি ও ফেনার হাওড়সহ অন্তত ২০টি ছোট বড় হাওড়ের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বোরো ধান নতুন করে তলিয়ে গেছে। গাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান চৌধুরী জানান, কৃষকদের জোরালো দাবি এবং স্থানীয় এমপির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চলতি বছর গাজীপুর ইউনিয়নের কোন বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেনি। এ কারণে একটি বাঁধও কৃষকের ফসল রক্ষা করতে পারেনি। তলিয়ে গেছে ৩৫ হাজার একর জমি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মৌলভীবাজার থেকে জানান, গত তিন দিনের টানা ভারিবর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি, কাওয়াদিঘী, হাইল হাওড় ও আশপাশের ছোট বড় বিলের প্রায় ৩৫ হাজার একর জমির বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে ভারিবর্ষণে হাকালুকি, কাওয়াদিঘী, হাইল হাওড়ের এলাকার বোরো ধান ১ থেকে ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হাকালুকি, কাউয়াদিঘী, হাইলহাওড় পাড়ের কৃষকরা একমাত্র ফসল বোরো ধান চোখের সামনে হারিয়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তায় এখন তারা উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। টানা ভারিবর্ষণের ফলে মৌলভীবাজার শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল, কলেজ ও অফিসগামী লোকজন হঠাৎ টানা বৃষ্টির কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী জানান বর্ষণ অব্যাহত থাকলে নদ নদীর পানি বৃদ্ধি হয়ে আগাম বন্যায় বোরো ফসলসহ অনান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ৩৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমির ধান প্লাবিত ॥ স্টাফ রিপোর্টার সিলেট থেকে জানান, বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সিলেটের সবক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এই দুটি উপজেলার ৩টি পাথর কোয়ারি জাফলং বিছনাকান্দি ও ভোলাগঞ্জে পাথর উত্তোলন কাজ বন্ধ রয়েছে। সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল হাশেম জানান, এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় ৩৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। সিলেট বিভাগকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন, ১০ টাকা কেজি দরে চাল প্রদান, বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ প্রদান, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যাংক ও এনজিও ঋণ মওকুফ, সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদান ও পানিউন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ও পাউবোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ৭ দফা দাবিতে বুধবার বেলা তিনটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে হাওর রক্ষা আন্দোলন সিলেটের উদ্যেগে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।
×