ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হাসিনা সাঈদ মুক্তা

পুরান ঢাকার আবর্জনা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৬ এপ্রিল ২০১৭

পুরান ঢাকার আবর্জনা

ইতিহাস আর ঐতিহ্যের আরেক নাম পুরান ঢাকা। একদা প্রমত্তা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে আজকের ঢাকার নিদর্শন এই পুরান ঢাকা। এখানে একই সঙ্গে রয়েছে মসজিদ, মাজার, মন্দির, গীর্জা আর সু-প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন। রাজধানীর অন্য এলাকা থেকে পুরান ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ। তাই সারাদিনই এই এলাকা থেকে ময়লা সংগ্রহ করতে হয়। পরে তা পরিণত হয় বিশালাকার ময়লা-আবর্জনার স্তূপে। ফলে এখানকার জনজীবনে দুর্ভোগের সীমা নেই। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনের রাস্তায় আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন রাখা হয়েছে। এতে ছায়া সুনিবিড় গাছ-গাছালিতে ঘেরা পার্কের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পথচারীরা এ উৎকট দুর্গন্ধময় পরিবেশের কারণে পার্কে বেড়াতে ও ব্যায়াম করতে প্রচণ্ড অস্বস্তি বোধ করেন। ডাস্টবিনটি অবিলম্বে অন্য কোথাও সরানো হোক এটা সবার দাবি। ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) বলছে, বিকল্প জায়গা পেলেই পার্ক এলাকার ডাস্টবিনটি সরিয়ে নেয়া হবে। সপ্তাহে অন্তত দুবার ডাস্টবিন পরিষ্কার ও প্রতিদিন সকালে আবর্জনা সরানোর কথা থাকলেও তা করছে না ডিএসসিসি। ডাস্টবিনের পাশেই সদরঘাট বাসস্ট্যান্ড। পথচারীরা এখানে নামার সঙ্গে সঙ্গে প্রচ- দুর্গন্ধের কারণে, নাক চেপে জায়গাটি পার হতে বাধ্য হয়। এর চারপাশে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, গীর্জা, অফিস, আদালত ইত্যাদি। যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মচারী ইত্যাদি সবাইকে কষ্ট করে দুর্গন্ধ সহ্য করে এসব স্থান পারাপার হতে হয়। এছাড়া ডাস্টবিন ও আবর্জনা রাখার কনটেইনারে ফুটপাথে প্রায়ই ভাসমান লোকেরা মলত্যাগ করে। এতে দুর্গন্ধ আরও বেড়ে যায়। এই এলাকাটি ডিএসসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, পার্কটি মাত্র দেড় থেকে দুই একর আয়তনের। তাই ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ বাতাসে পুরো পার্কে ছড়িয়ে পড়ে। সকালে পার্কে ব্যায়াম করা মানুষের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। শীতের মৌসুমে উষ্ণ দিকের বাতাসে পার্কে দুর্গন্ধ আরও বেশি আসে। এতে পার্কে আসা ও বসা যেন দায় হয়ে ওঠে। পার্ক ছাড়াও আবর্জনার স্তূপের পাশেই আছে টিউবওয়েল। যেখান থেকে সাধারণ মানুষ নিত্যকার পানি সংগ্রহ করে। বৃষ্টির সময় ময়লাগুলো পানিতে ভাসতে থাকে। কলের মুখ পর্যন্ত চলে আসে সেগুলো। এছাড়া পুরান ঢাকার অলিগলির ফাঁকফোকরে এমন অনেক ড্রেন আছে। যেখানে ময়লা আবর্জনা বা পলিথিনের স্তূপ। এসব ড্রেন দিয়ে পানি চলাচলের কোন উপায় নেই। পুরান ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানা রয়েছে প্রায় ৩০০টি। এসব নিষিদ্ধ পলিথিন কারখানার কারণে এখানকার পরিবেশ ক্রমেই দূষিত হয়ে পড়ছে। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের নাকের ডগায় নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবসা চললেও মোটা অঙ্কের মাসোয়ারায় নীরব ভূমিকা পালন করছে। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। পলিথিন পড়ে স্যুয়ারেজ লাইন ভরাট হয়ে রাস্তার ওপর দিয়ে ময়লা-আবর্জনা প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে যে কত মারাত্মক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে তা বলাবাহুল্য। কাজেই রাজধানী পুরান ঢাকাসহ ঢাকার সবখানেই আবর্জনার উৎপত্তি ও কারণসমূহ চিহ্নিত করতে হবে। যেমন পৌর এলাকার আবর্জনা, শিল্প এলাকার আবর্জনা, বাণিজ্যিক এলাকার আবর্জনা এভাবে শ্রেণী বিভাগ করে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা করা যেতে পারে। আবর্জনা পোড়ানোর চুল্লি নির্মাণ করে আবর্জনা থেকে অতি প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। যেখানে-সেখানে ময়লার পরিমাণ বেশি হলে ময়লা পুড়িয়ে বা মাটি চাপা দেয়ার যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে সম্মিলিতভাবে। লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা থেকে
×