ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মধ্যরাতের অশ্বারোহীর লাগাম

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৬ এপ্রিল ২০১৭

মধ্যরাতের অশ্বারোহীর লাগাম

মধ্যরাতের অশ্বারোহীদের অশ্ব টগবগ টগবগ করে যাতে ছুটতে না পারে, তাই তাদের লাগাম টেনে ধরতে সে জন্য কর্তাব্যক্তিদের নিঁদ হারাম হয়ে যায় হয়ত। মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মন্ত্রণা হয়ত দেয়া যায়, কিন্তু তাতে ব্যথার সমাধান হয় না। রোগকে সারাতে চাই পথ্য। আর সেই পথ্যকে হতে হবে যথাযথ। রোগ সারানোর আগে রোগীর মনোবিকারকে নিয়ন্ত্রণে আনা যেমন সমীচীন, তেমনি পূর্বাহ্নে রোগ নির্ণয় করাও জরুরী। রোগের সাকিন, মৌজা, ঠিকুজির সন্ধান পাওয়া না গেলে রোগের উপশম ঘটানো সহজ সাধ্য নয়। চোখের সামনে নেশার দ্রব্য থাকলে যে নেশা চনমনিয়ে বা চাগিয়ে উঠে, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু নেশাগ্রস্ত হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। নেশাসক্ত মানুষ বিশ্বে প্রতিদিনই বাড়ছে। নেশার উপকরণের জোগান ও সরবরাহ কমে গেলে, আসক্তির সংখ্যাও হ্রাস পেতে বাধ্য। তবে তারা হয়ত বিকল্প পথ খুঁজে নেয়, কারণ নেশামুক্ত হওয়া অত্যন্ত কঠিন। ফেসবুক তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিকেও এখন অনেকের কাছে মাদকাসক্তির মতোই প্রতীয়মান হয়। ফেসবুক আসক্তির মারাত্মক প্রবণতায় উদ্বেগ বাড়া স্বাভাবিক আসক্তমুক্তদের। বিশেষ করে তরুণ, কিশোর, কিশোরীরা ফেসবুক ব্যবহারে ক্রমশ সময়ক্ষেপণ করছে। জগতের অন্য কিছুর প্রতি তাই ক্রমশ উদাসীন হয়ে পড়ছে এই আসক্তরা। পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাত জেগে ফেসবুক ব্যবহারের কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে না পারা, বিদ্যালয়ে যেতে না পারা, পরীক্ষায় মনোযোগী না হওয়া, ক্লাসে শিক্ষকের ভাষ্য শ্রবণে অনাসক্তি জাগতেই পারে। নির্ঘুম রাত্রিতে ফেসবুক ব্যবহারের ফলে এক ধরনের বিবমিষা জাগে। যুক্তি বলে, ফেসবুকের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই মাধ্যম হলোÑ মার্শাল ম্যাকলুহানের বিশ্বগ্রাম ধারণার বাস্তব প্রতিচ্ছবি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনাকে আড়ালে রেখে ফেসবুকে যেভাবে নিমগ্ন হয়ে পড়ে রাত-বিরেতে, তাতে তাদের দৈহিক ও মানসিক ক্ষেত্রে অবসাদগ্রস্ততা আশ্রয় নিতে পারে। ফেসবুকে অনেকে যোগাযোগের পরিধি বাড়াতে সম্পর্কোন্নয়নের নিমিত্ত ইতিবাচক ধারণা নিয়ে সম্পৃক্ত হলেও কিছু অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রায়শ ব্যবহারকারীদের আপত্তিতে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী প্রচারের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মতো জঘন্য অপরাধের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এসব অপপ্রচার। এসব সামাজিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক সম্পর্কের ভিত্তিকে পর্যন্ত নাড়িয়ে দেয়। ফেসবুকে কোন চেতনার বহিঃপ্রকাশের নামে মৌলবাদ, জনসচেতনতার নামে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উস্কানি এবং ধর্মীয় মতবাদের আদলে জঙ্গীবাদী মতাদর্শের প্রচার শুধু দোষণীয় নয়, জঘন্য অপরাধও বটে। পাশাপাশি এ মাধ্যমটির ব্যবহারকারী শিশু-কিশোর থেকে বয়োবৃদ্ধ পর্যন্ত। দেশের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আবিষ্কার করেছে, ফেসবুক আসক্তির কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে তরুণদের কর্মক্ষমতায়। তাই মধ্যরাতে ছয় ঘণ্টা ফেসবুক বন্ধের পক্ষে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু বিটিআরসিটি তাতে রাজি হয়নি। কারণ, এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর আগেও সরকার জঙ্গী নির্মূল অভিযানকালে ফেসবুকসহ আরও কয়েকটি মাধ্যম বন্ধ রেখেছিল। এতে ব্যবহারকারীরা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। ছাত্র রাজনীতির কারণে শিক্ষার্থীদেরও ক্ষতি হয়। শিক্ষা-দীক্ষায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। সহিংসতা বাড়ে। খুনখারাবিও। সে কারণে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের প্রস্তাব অতীতে বহুবার এসেছিল, কিন্তু তাতে রাজনীতি বন্ধ হয়নি। তেমনি আসক্তি তাড়াতে ফেসবুক বন্ধ নয়, বরং নেতিবাচক দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ পরিক্রমায় তাই ‘ইন্টারনেটের রাজা’ খ্যাত ফেসবুক চালু থাক। নেতিবাচক ও আসক্তি দূরীকরণে দরকার জনসচেতনতা বাড়ানো।
×