ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অস্তিত্ব সঙ্কটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৫ এপ্রিল ২০১৭

অস্তিত্ব সঙ্কটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা ইইউ। সংস্থাটিকে কিভাবে টিকিয়ে রাখা যায় সে প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে। বিশেষ করে ব্রেক্সিটের পক্ষে ব্রিটনদের ভোট পড়ার পর সঙ্কটটা অতি বাস্তব আকার ধারণ করেছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন যে টিকে থাকতে হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যথেষ্ট নমনীয় হতে হবে। ১৯৫৭ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়া তখনও মাথার ওপর ঝুলছিল। সে বছরের ২৫ মার্চ ইউরোপের ৬টি দেশ এক নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক ক্লাব বা সংঘ প্রতিষ্ঠার পক্ষে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। সেটাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু সংগঠনটি যে পরিসরে সাফল্য অর্জন করে এর প্রতিষ্ঠাতারা তা কল্পনাও করতে পারেননি। ইইউ ইউরোপ মহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানই শুধু রাখেনি, একটি অভিন্ন বাজার ও অভিন্ন মুদ্রাও কায়েম করেছে। উপরন্তু এর কাঠামোর আওতায় দক্ষিণের সাবেক একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ ও পূর্বাঞ্চলের সাবেক কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোকেও নিয়ে এসেছে। এভাবে সম্প্রসারণের ফলে এর সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে বেড়ে ২৮-এ দাঁড়িয়েছে। তথাপি গত ২৫ মার্চ রোমে সংস্থাটির ৬০তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় নেতারা ভালভাবেই অনুধাবন করেছেন যে ইইউ বড় ধরনের সঙ্কটে পড়েছে। ইইউর অস্তিত্বের প্রতি হুমকিটা অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়েই। অভ্যন্তরীণ ত্রুটিবিচ্যুতিগুলো ইউরো সঙ্কটের সময় জাজ্বল্যমান হয়ে ওঠে যা এখনও পর্যন্ত দূর করা যায়নি। দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে ইইউর প্রতি সমর্থন কমে এসেছে। পপুলিস্ট ও ইউরোপবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইইউর খোদ অস্তিত্বের মূলে আঘাত হানার চেষ্টা করছে। যেমন ফ্রান্সের ম্যারিন লে পেনের ন্যাশনাল ফ্রন্ট। তবে সংস্থাটির জন্য বিপর্যয়কর সবচেয়ে বড় ঘটনা এ পর্যন্ত হলো ব্রেক্সিট। ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনার পেছনেই আগামী দু’বছর ইইউর বেশিরভাগ সময়ও এনার্জি চলে যাবে। ব্রিটেনের মতো এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটা সদস্যকে হারানো ইইউর প্রভাব ও বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর মস্ত আঘাত। বাইরের চাপগুলোও সমান গুরুতর। উদ্বাস্তুর চাপ কমলেও তা শেষ হয়নি। তা ছাড়া একদিকে আছে রাশিয়ার পুতিনের আগ্রাসী ভূমিকা, অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইইউর প্রতি নিরুৎসাহ মনোভাব। এটা এই সংস্থাকে দুর্বল ও বিভক্ত করার জন্য যথেষ্ট অনুকূল। অদৃষ্টের পরিহাস হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যে সংগঠনের জন্ম সেটি আজ হোঁচট খেতে লেগেছে এমন এক সময় যখন ইউরোপেরই নিরাপত্তা হুমকির মুখে। ইইউর সমর্থকদের এসব চ্যালেঞ্জের প্রথাগত জবাব হচ্ছে আরও ঘনিষ্ঠতর ঐক্যের দিকে বলিষ্ঠ উল্লম্ফনের জন্য চাপ দেয়া। তাদের বক্তব্য ইউরোকে সফল হতে হলে এটা প্রয়োজন। একইভাবে তারা বলেন যে নিজের বহিঃসীমান্ত শক্তিশালী করা এবং পুতিন বা ট্রাম্পের মতো সুউচ্চ কণ্ঠে সমস্বরে বক্তব্য দেয়ার কেন্দ্রের হাতে আরও ক্ষমতা স্থানান্তর করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইউরোপীয় ভোটাররা কিংবা তাদের নির্বাচিত সরকারÑ কেউই এটা চায় না। বরং জনমত এর ঠিক বিপরীতটাই চায়। ইউরো সঙ্কট আগের যে কোন সময়ের তুলনায় তীব্রতম। অভিবাসন সঙ্কটও তুঙ্গে পৌঁছেছে এবং ব্রেক্সিটও কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ বছরের নির্বাচনের পর জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে এ্যাঞ্জেলা মারকেল কিংবা মার্টিন সুলজের পাশাপাশি যদি ইমানুয়েল ম্যাক্রন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হন তাহলে সংস্থাটি ইইউপন্থী নেতৃত্বের অধীনে থাকবে। তথাপি তা নিজস্ব ঝুঁকির মধ্য দিয়ে চলবে। এর মধ্যে আরেক অর্থনৈতিক সঙ্কট এসে যদি ইউরোকে বিপর্যস্ত করে কিংবা ইইউ প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠানে অঙ্গীকারাবদ্ধ কোন সরকার যদি কোথাও ক্ষমতায় আসে তাহলে সংস্থাটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতে পারে। এর কোন ভাল বিকল্প পথ আছে কি? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, টিকে থাকতে হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও অনেক বেশি নমনীয় হতে হবে। অনুসরণ করতে হবে বহু স্তর ব্যবস্থা যাতে করে সমস্যা দেশগুলো ইইউর নীতিতে বিভিন্ন মাত্রায় অংশ নিতে পারে এবং এক স্তর থেকে অন্য স্তরে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছন্দে স্থানান্তর করতে পারে। বন্ধ স্তরের ইইউ থাকলে তাতে সদস্য নয় এমন দেশগুলোও স্থান পেতে পারে। ইউরোপ মহাদেশে রয়েছে ৪৮টি দেশ ও ৭৫ কোটি মানুষ। অথচ ইউনিয়নের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৮ এবং লোকসংখ্যা ৫১ কোটি। আর অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু আছে ১৯টি দেশে যেগুলোর লোকসংখ্যা ৩৪ কোটি। ইইউকে আরও ৬০ বছর টিকে থাকতে হলে নমনীয় নীতি অনুসরণই সবচেয়ে বড় কথা এবং সেটা সব দিক দিয়ে। ব্রিটেন যেমন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তেমনি আরেকটি দেশও কাল বেরিয়ে যেতে পারে। এই ব্যাপারগুলো সামাল দেয়া খুব কঠিন হবে। সুতরাং সংস্থাটির জন্য আগামী দিনগুলো মোটেই তেমন উজ্জ্বল নয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×