ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আমেরিকায় দূষণকারীরাই এখন বদলা নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৫ এপ্রিল ২০১৭

আমেরিকায় দূষণকারীরাই এখন বদলা নিচ্ছে

ওবামা প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। পরিবেশ রক্ষায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সেসব পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে লেগে গেছেন। অবশ্য ক্ষমতায় আসার আগেই তিনি এ ব্যাপারে নানান বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। বলেছিলেন যে, পরিবেশ দূষণের যেসব কথা বলা হচ্ছে সেগুলো অতিরঞ্জিত। এত বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ট্রাম্পের এমন বক্তব্য সত্যের অপলাপমাত্র। ৪৫ বছর আগে মার্কিন ফেডারেল সরকার বিশুদ্ধ পানি আইনের (সিডব্লিউএ) অধীনে আমেরিকার প্রধান জলপথগুলোকে মাছ ধরার ও সাঁতার কাটার উপযোগী করার পদক্ষেপ নিতে আইনগত বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়েছিল। ৪৫ বছর পর পরিস্থিতির কত উন্নতি বা অবনতি হয়েছে তা দেখার জন্য আনাকোস্টিয়া নদীটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা যেতে পারে। আনাকোস্টিরা মেরিল্যান্ড ও ওয়াশিংটন ডিসির দক্ষিণাংশ দিয়ে সাড়ে আট মাইল প্রবাহিত হয়ে পটোম্যাক নদীতে গিয়ে মিশেছে। একদা আনাকোস্টিয়া ধীর প্রবাহিত আবর্জনার ভা-ার ছিল। সাম্প্রতিককালে এর বুকের ওপর দিয়ে সোডার ক্যান বা কোন প্লাস্টিকের ব্যাগ কদাচিৎ ভেসে যেতে দেখা গেছে। নদীর বিপর্যস্ত মৎস্য সম্পদ পুনরুদ্ধার পেতে শুরু করেছে যদিও এখনও সেগুলো খাওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠেনি। এই অগ্রগতি সত্ত্বেও আনাকোস্টিয়ার বেশিরভাগ অংশের অবস্থা শোচনীয়। প্রতিবছর ২ শ’ কোটি গ্যালন নর্দমার ময়লা ও স্টর্ম ওয়াটার এই নদীতে পড়ে। মলমূত্রে নদীর পানি এত ঘোলাটে আকার ধারণ করেছে যে আলোও সেই পানি ভেদ করতে পারে না। নদীর তলদেশে আগে আগাছা ও ঝিনুক থাকত। সেগুলো অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। সে জায়গায় জমে উঠেছে কাদার আস্তর। কোথাও কোথাও সেই আস্তর দশ ফুট গভীর এবং তা পলিক্রোরিপেটেড বাইফিনাইল, ভারি ধাতব পদার্থ ও অন্যান্য শিল্পবর্জ্যে পরিপূর্ণ। আনাকোস্টিয়া নদীর মাছের শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিকের আধিক্য থাকায় সেগুলো বিষাক্ত। তথাপি স্থানীয় লোকজন প্রায়শই এসব মাছ খেয়ে থাকে যাদের সিংহভাগই গরিব। আনাকোস্টিয়া এবং এমনি দূষণের শিকার আরও শত শত জলপথের যে অবস্থা তা থেকেই প্রমাণ হয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তিটা কত অসার। ট্রাম্প বলেছেন, পরিবেশ রক্ষা সংস্থা উন্মাদ হয়ে গেছে। পরিবেশ রক্ষার নামে সংস্থাটি পাগলামি করছে। পরিবেশের ওপর বিপর্যয়কর প্রভাব পড়ছে এমন বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে এবং নানা ধরনের নিয়মবিধি বলবৎ করে ইপিএ দেশের ধমনিগুলোর প্রবাহ রুদ্ধ করে ফেলছে। ট্রাম্প এমন সব বক্তব্য দিয়েই ক্ষান্ত হননি। ইপিএর নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন স্কট এইটকে। এই এইট ওকলাথেমার এ্যাটর্নি জেনারেল থাকার সময় ইপিএর বিরুদ্ধে ১৪ বার মামলা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ধমনির মতো জলপথগুলোকে রুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করা হবে এবং তার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হবে তার মধ্যে সংস্থার আইনগত অপব্যবহারের অবসানও আছে। শোনা যাচ্ছে, ট্রাম্প এই উদ্যোগ শুরু করতে নির্বাহী ডিক্রি জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে নির্গত গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন রোধের প্রধান উদ্যোগ হিসেবে বারাক ওবামা ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান (সিপিপি) নামে যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ট্রাম্প সেটা বাদ দিয়ে অন্য আইন করতে যাচ্ছেন। অথচ পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি দুটি দলেরই সমান মাথাব্যথা ছিল। ১৯৭০ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সন পরিবেশ রক্ষা সংস্থা বা ইপিএ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এর পেছনে রিপাবলিকানরা ঢালাও সমর্থন যুগিয়েছিল। দুই দশকের ব্যাপক প্রবৃদ্ধির ফলে আমেরিকার আকাশ ও জলপথ ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়ে। পরস্পরের সঙ্গে উন্মুক্ত অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রাজ্যগুলো সেই চাপ লাঘবে অসমর্থ বা অপারগ প্রমাণিত হয়। টেলিভিশনের প্রসারের ফলে বিভিন্ন রাজ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের নানা ঘটনা প্রচার লাভ করে। জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়। তারা এ ব্যাপারে সরকারের এ্যাকশন দাবি করে। এর ফলস্বরূপ বিশুদ্ধ পানি আইন (সিডব্লিউএ) সিনেটে ৮৬-০ ভোটে পাস হয়। এতে শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। তারা পাল্টা আঘাত হানে। প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। পরিণতিতে রোনাল্ড রিগ্যান এবং আরও জোরালোভাবে জর্জ বুশ পরিবেশ রক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়ান। মাঝখানে বারাক ওবামার দুই মেয়াদে পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে যতটুকু যা অগ্রগতি এবার হয়েছে। এখন ট্রাম্প এসে আবার সবকিছু উল্টে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলমান ডেস্ক সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট
×