ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রিজার্ভ চুরি

উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ আছে ॥ ক্যাস্পারস্কি ল্যাব

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৫ এপ্রিল ২০১৭

উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততার প্রমাণ আছে ॥ ক্যাস্পারস্কি ল্যাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরির ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয়ে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ক্যাস্পারস্কি ল্যাব। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বেশকিছু ‘ডিজিটাল’ প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। মঙ্গলবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ২০১৪ সালে সনির হলিউড স্টুডিওতে ও বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত হ্যাকিং গ্রুপ ল্যাজারাসের বিষয়ে রুশভিত্তিক ক্যাস্পারস্কির প্রকাশিত ৫৪ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। ওই দুটি ঘটনার জন্যই উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, ল্যাজারাসের হ্যাকাররা উত্তর কোরিয়ার একটি ‘আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) এ্যাড্রেস’ থেকে ইউরোপে একটি সার্ভারের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেন। এ গোষ্ঠী যেসব সিস্টেম হ্যাক করেছিল, সেগুলো ওই সার্ভার থেকেই নিয়ন্ত্রিত হতো। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ল্যাজারাসের সরাসরি সংযোগ থাকার বিষয়ে প্রথমবারের মতো প্রমাণ পাওয়া গেল বলে ক্যাস্পারস্কির গবেষক ভিটালি কামলুক রয়টার্সকে বলেন। ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ল্যাজারাসের হ্যাকিং কর্মকা-ের বিষয়ে নজর রাখছে বিভিন্ন সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি। হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানির তোলা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়া। কামলুক বলেন, উত্তর কোরিয়া যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত করে বলতে চান না তিনি। কারণ, এমনও হতে পারে যে হ্যাকাররা দেখানোর চেষ্টা করছিল যে, উত্তর কোরিয়া থেকেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে অথবা উত্তর কোরিয়ানরা অন্য কারও সঙ্গে কাজ করছে। তবে কোরিয়ার জড়িত থাকার বিষয়টিকে এ ঘটনার সম্ভাব্য সর্বোত্তম ব্যাখ্যা বলে মনে করেন তিনি। গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়ার পেছনে উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) উপ-পরিচালক রিক লেজেট ১৫ মার্চ ওয়াশিংটনের আসপেন ইনস্টিটিউটে এক গোলটেবিল বৈঠকে এ চুরির সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পৃক্ততার বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সনিতে হামলাকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকে হামলাকারীদের সম্পর্কের বিষয়টি যদি সত্য হয়, তার অর্থ দাঁড়ায় যে, একটি দেশ ব্যাংক ডাকাতি করছে। এটা অনেক বড় ঘটনা। বেসরকারী তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ ব্যাংকে সাইবার হামলার সঙ্গে ২০১৪ সালে সনি পিকচার্সের হলিউড স্টুডিও হ্যাকডের মধ্যে যে সম্পর্ক খুঁজে বের করেছেন সেদিকে ইঙ্গিত করেন লেজেট। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভুয়া সুইফট বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপিন্সের রিজল ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। ওই অর্থ পরে জুয়ার টেবিলে চলে যায়। ওই ঘটনা তদন্তে বাংলাদেশের নিযুক্ত করা সিলিকন ভ্যালির সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ফায়ারআইও সে সময় এ সাইবার চুরিতে উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের দুটি হ্যাকার গ্রুপের সম্পৃক্ততার তথ্য ফরেনসিক পরীক্ষায় পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। বিশ্বজুড়ে তোলপাড়ের মধ্যে ফিলিপিন্সের সিনেট কমিটি এ ঘটনার তদন্ত শুরুর পর এক ক্যাসিনো মালিকের কাছ থেকে দেড় কোটি ডলার উদ্ধারের পর তা ফেরত পায় বাংলাদেশ। বাকি অর্থ উদ্ধারে কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
×