ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফের সাম্বা ছন্দে ব্রাজিল

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ৫ এপ্রিল ২০১৭

ফের সাম্বা ছন্দে ব্রাজিল

ব্রাজিলের সাফল্যের বর্ণনা লিখে শেষ করার নয়। তবুও এমন সব কীর্তি তারা রচনা করে তাতে কলম স্থির রাখাই মুশকিল! এজন্য অনেক সময় নিজের অজান্তেই ব্রাজিল বন্দনায় কালির আঁচড় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঝখানে বেশ ধুঁকেছে সেলেসাও ফুটবল। তবে নেইমার, মার্সেলো, আলভেজ, কুটিনহো, পাউলিনহোদের নৈপুণ্যে আবারও দেশটি শাসন করছে বিশ্ব ফুটবল। অনিশ্চয়তা এবং আলোচনার বাইরে থেকেও ব্রাজিল যে অভাবনীয় সাফল্যগাথা রচনা করতে পারে তা কি অন্যদের কাছে অনেকটাই অসম্ভব। একমাত্র ব্রাজিলই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে! এমন প্রমাণ ফুটবলপাগল দেশটি বহুবার রেখেছে। অনেকবার মৃত্যুকূপ থেকে বেরিয়ে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছে পেলের দেশ। লাল-সবুজের এই দেশ যে বছর ইতিহাসে নিজের নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখেছিল তার আগের চারটি বিশ্বকাপের তিনটিরই (১৯৭০, ১৯৬২ ও ১৯৫৮) চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। যে কারণে ১৯৭০-’৮০ দশকে বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবইতে কিংবদন্তী পেলেসহ ব্রাজিলের সাফল্যের স্তুতিগাঁথা নিয়ে একটি গল্প ছিল। রূপকথার মতো সাফল্যের বর্ণনা শুনে তখন থেকেই এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন পেলে, ভাঁভা, জোয়ারজিনহো, কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা, গ্যারিঞ্জাদের ব্রাজিল। শ্রেষ্ঠত্বের এই ধারা দীর্ঘ ২৪ বছর ছিল অনুপস্থিত। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ জয় করে ফের চিরচেনা রূপে ফেরে সাম্বার দেশ। শুধু তাই নয়, ’৯৪ থেকে ২০০২ টানা তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে ব্রাজিল। এরমধ্যে ১৯৯৮ বাদে দু’বার চ্যাম্পিয়ন। আধুনিক যুগে টানা এক যুগ ফাইনালে খেলার নজির আর কোন দেশের নেই। এরপর ২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপ থেকে যেন আবারও ছন্দপতন! প্রায় অর্ধযুগের সংগ্রামের পর ২০১৩ সালে বিশ্বকাপের ‘ড্রেস রিহার্সেল’ কনফেডারেশন্স কাপে হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতে ফের কক্ষপথে পেরার আভাস দেয় রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এরই ধারাবাহিকতায় নিজ দেশে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরার স্বপ্ন দেখেছিল ফুটবলপাগল দেশটি। কিন্তু সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হয়ে আরেকবার বেদনায় পুড়তে হয় পেলের দেশকে। পরের বছর কোপা আমেরিকাতেও গ্রুপ পর্বে বিদায়। এইসব ধকল কাটিয়ে উঠে আবারও সুদিনে ফিরেছে পেলের দেশ। কোচ টিটের অধীনে প্রথম দল হিসেবে ইতোমধ্যে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। অর্থাৎ ফিরে এসেছে আবারও সেই শৈল্পিক ছন্দময় ফুটবল। ফুটবল বিশ্বের সেরা সাফল্যের দল ব্রাজিল ফের শাসন করতে শুরু করেছে খেলার ময়দান। বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবলে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে সে প্রমাণই রেখে চলেছে রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। টানা আট ম্যাচ জিতে প্রথম দল হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে সাম্বা ছন্দের দেশটি। চার ম্যাচ হাতে রেখেই এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে কোচ টিটের দল। ব্রাজিলের বিশ্বকাপ নিশ্চিতের পুরো ম্যাচেই নেইমার ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। পেনাল্টি মিস করলেও একটি গোল করেন তিনি। তাছাড়া তার দু’টি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল করেন রেফারি। ওই ম্যাচ শেষে বিশ্বকাপের টিকেট নিশ্চিত হওয়া প্রসঙ্গে ব্রাজিল কোচ টিটে বলেন, যখন আমি আমার পরিবার, আমার খেলোয়াড়, সমর্থকদের দিকে তাকাই, তখন আমি তাদের মধ্যে অন্য ধরনের এক আনন্দ দেখতে পাই। এটা সত্যিই বিশেষ কিছু। আমরা খুব খুশি। টানা এই সাফল্যে দীর্ঘ সাত বছর পর ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েরও শীর্ষে ফিরতে যাচ্ছে ব্রাজিল। কালই ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা র‌্যাঙ্কিং প্রকাশ করবে। সেখানে নেইমারদের ২০১০ সালের পর এক নম্বরে ফেরা নিশ্চিত হয়েছে। অর্থাৎ বেদনা ভুলে আবারও সুখের সান্নিধ্যে নেইমার, কুটিনহো, আলভেজ, পাউলিনহোরা। তরুণ এসব ফুটবলারদের উদ্ভাসিত নৈপুণ্যে উড়ছে ব্রাজিল ফুটবল দল। যে কারণে নেইমারও মনে করেন এখন ব্রাজিল বিশ্বের সেরা দল। শুধু তাই নয়Ñসময়ের অন্যতম সেরা তারকা আরও জানিয়েছেন, লিওনেল মেসিও ব্রাজিলের খেলার গুণমুগ্ধ। সাবেক কোচ কার্লোস দুঙ্গার বিদায়ের পর টিটের অধীনে ব্রাজিল যেন উড়ছে। টানা আটটি জয় পেয়েছে তারা। এর মধ্যে সাতটিই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে, একটি প্রীতি ম্যাচে। এই ব্রাজিল মানো মেনেজেস, দুঙ্গা আর লুইস ফিলিপ সোলারি যুগের তুলনায় সুন্দর ফুটবলও উপহার দিচ্ছে। বিশ্বজোড়া ফুটবল প-িতদের প্রশংসাও পাচ্ছেন নেইমাররা। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসিও মুগ্ধ ব্রাজিলের খেলায়। মেসির এই মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন তার বার্সা সতীর্থ নেইমার। এ প্রসঙ্গে সেলেসাও তারকা বলেন, শুধু মেসিরই নয়, ব্রাজিলের এই দলটি অনেক মানুষেরই নজর কাড়ছে। আমরা ভালো খেলছি। আমাদের এই দলটিই এখন বিশ্বসেরা। সেই সঙ্গে মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে নিজের তুলনায় মোটেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছেন না নেইমার। তারকা এই ফরোয়ার্ড জানিয়েছেন, নিজের উন্নতির দিকেই কেবল মনোযোগ থাকে তার। বর্ষসেরা ফুটবলারের গত নয় বছরের পুরস্কার জিতেছেন মেসি ও রোনাল্ডো।
×