ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মেদভেদেভা শো’

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৫ এপ্রিল ২০১৭

‘মেদভেদেভা শো’

মাত্র ১৭ বছর বয়স। এই বয়সেই বিশ্ব ফিগার স্কেটিংয়ের আলোচিত নাম ইভগেনিয়া মেদভেদেভা। অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। সর্বশেষ হেলসিঙ্কিতে বিশ্ব ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। সেইসঙ্গে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি উচ্চতার এই স্কেটার। তিন বছর বয়সেই ফিগার স্কেটিংয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন মেদভেদেভা। এর পেছনে ভূমিকা রেখেছেন তার মা। তার মাও ফিগার স্কেটার ছিলেন। এ প্রসঙ্গে ইভগেনিয়া মেদভেদেভা বলেন, আমার পিতামাতা উভয়ই চাইতেন আমি ফিগার স্কেটার হই। তবে মা স্কেটার ছিলেন বলেই নয়। শৈশবে তার অনুপ্রেরণা ছিলেন দুইবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ইভগেনি প্লুশেঙ্কো। এ প্রসঙ্গে তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেন, একদা আমি ইভগেনি প্লুশেঙ্কোকে পারফর্ম করতে দেখেছি...। এরপর থেকেই আমি তার মতো স্কেটার হতে চাইতাম। এছাড়া অন্য কোন ক্রীড়ায় আমার কোন আকর্ষণ ছিল না। খুব অল্প বয়স থেকেই স্কেটারের প্রতি তার যে প্রেম-মুগ্ধতা অনেকে মনে করেন সেটাই আজ এতো দূর নিয়ে এসেছে মেদভেদেভাকে। সবাইকে অবাক করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে একটানা ৯টি আন্তর্জাতিক আসরে চ্যাম্পিয়ন! অবিশ্বাস্য এই কীর্তিই গড়েছেন রাশিয়ান কিশোরী ইভগেনিয়া মেদভেদেভা। সাম্প্রতিক সময়ে তার চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যে মুগ্ধ-বিস্মিত গোটা দুনিয়া। সর্বশেষ ঝলক দেখিয়েছেন হেলসিঙ্কিতে। অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে আরও একটি খেতাব জিতলেন তিনি। ফ্রি-স্কেট প্রোগ্রামে গড়লেন নতুন রেকর্ড। সার্বিকভাবে ২৩৩.৪১ পয়েন্টও নতুন রেকর্ড। ভেঙ্গেছেন নিজেরই গড়া পূর্বতন রেকর্ড। ফলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হলেন মেদভেদেভা। এখানেই থেমে যেতে চান না তিনি। মেদভেদেভার চোখে এখন ২০১৮ সালে শীতকালীন অলিম্পিকে মেলে ধরার স্বপ্ন। সাম্প্রতিক সময়ে ডোপ কেলেঙ্কারিতে রাশিয়ার অবস্থা টালমাটাল। রিও অলিম্পিকে তো নিষেধাজ্ঞার কবলেই পড়ে তারা। তবে রাশিয়ার ক্ষুণœ হওয়া ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে চান মেদভেদেভা। এখন থেকে সেদিকেই পূর্ণ মনোযোগ দিবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছেন এই কিশোরী। জানিয়ে রাখা ভাল যে, ফিগার স্কেটিংয়ের সবচেয়ে কঠিন ইভেন্ট শর্ট প্রোগ্রাম। এখানে স্কেটারদের শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একটু এদিক-ওদিক হলেই ইনজুরি। অথচ কী দুর্দান্তভাবেই না নিজেকে মেল ধরছেন তিনি। ব্যতিক্রম ছিল না হেলসিঙ্কির শর্ট প্রোগ্রামেও! দুরন্ত মেদভেদেভা হেলসিঙ্কিতে স্কোর করেছেন ৭৯.০১! বিশ্বরেকর্ড গড়ার খুব কাছাকাছিই পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। এই ইভেন্টে ৭৯.২১ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পয়েন্ট। সেটিও গ্রা প্রি ফাইনালে। গত ডিসেম্বরে এই মেদভেদেভাই করেছিলেন। শর্ট প্রোগ্রামে শীর্ষে থেকেই শেষ করেছিলেন। এ কারণে সর্বশেষ ফ্রি স্কেট ইভেন্টের দিকে সবার নজর ছিল। অবশ্য ফ্রি স্কেটে আরও দুরন্ত তিনি। সেটাই করে দেখালেন। গড়লেন নতুন বিশ্বরেকর্ড। এবার তার ফ্রি স্কেটে পয়েন্ট ১৫৪.৪০! সবমিলিয়ে প্রতিযোগিতায় ২৩৩.৪১ পয়েন্ট স্কোর করেছেন মেদভেদেভা। এ দুটিই নতুন রেকর্ড। ভেঙ্গেছেন নিজের গড়া আগের দুই বিশ্বরেকর্ড। আগের দুটি বিশ্বরেকর্ডই পেছনে পড়ে গেছে ৩ পয়েন্টের কিছু বেশি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকা কানাডার ২১ বছর বয়সী ক্যাটলিন ওসমুন্ড (২১৮.১৩) ১৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন। তৃতীয় স্থান নিয়ে বিজয় মঞ্চের আরেকটি জায়গাও দখলে ছিল কানাডার। ১৯ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েলি ডেলম্যান ২১৩.৫২ পয়েন্ট নিয়ে জিতেছেন ব্রোঞ্জ। ২০০৯ সালের পর এই প্রথম আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপস ফিগার স্কেটিংয়ের পদক জিতল কানাডা। ২০১৬ সালে সিনিয়র ক্যারিয়ারের অভিষেকে হয় মেদভেদেভার। সে বছরই বোস্টনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ফিগার স্কেটার চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণপদক জয়ের স্বাদ পান তিনি। এবার হেলসিঙ্কিতেও স্বর্ণপদক নিজের করে রাখলেন তিনি। এতে দারুণ রোমাঞ্চিত মেদভেদেভা। নিজেকে এখনই অভিজ্ঞ বলে মানছেন এই কিশোরী। এ প্রসঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে মেদভেদেভা বলেন, এই দুটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ আমার জন্য খুবই ব্যতিক্রম। গত বছরে একেবারেই নতুন ছিলাম আমি। আর এখন আমি বেশ অভিজ্ঞ। যতটুকু শিখেছি আমি শুধু সেটাই দেখাতে চেয়েছি। আর এতে করে বুঝতে পেরেছি আমার উন্নতি হয়েছে। রাশিয়ান এই বিস্ময় বালিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাকি প্রতিযোগীরাও। এ বিষয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করা ডেলম্যান বলেন, তার স্কেটিং শেষ হওয়ার পর আমি খুবই প্রশংসা করেছি। কারণ সে সত্যিই বিস্ময়কর এবং অতি মনোরম একজন স্কেটার। আমার খুব ভাল বন্ধু এবং সে যেমন স্কেটিং করে তেমনটা করার আকাক্সক্ষা সবসময় থাকে আমার।’ মেদভেদেভা ফিগার স্কেটিংয়ের ইতিহাসে ২০১১ সালের পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে টানা দুইবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। সে বছর টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্বর্ণপদক জিতেছিলেন মিশেল কোয়ান। মেদভেদেভার সামনে এখন হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়েরও হাতছানি। তবে রাশিয়ান স্কেটারের চোখ অবশ্য এত দূরে নয়। এই মুহূর্তে তার লক্ষ্য ২০১৮ শীতকালীন অলিম্পিক। এ বিষয়ে তিনি বলেন, সোচি অলিম্পিক তো অবশ্যই দেখেছিলাম। আর সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল দলীয় ইভেন্টে বিজয়ী হওয়া। পুরো দেশ গর্বিত হয়েছিল। কিন্তু এখন খবরগুলো দেখে খুবই মর্মাহত আমি। কিন্তু আমাদের হাল ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না, পরস্পরে একতাবদ্ধ থেকে সমর্থন করতে হবে নিজেদের। তবে ডোপ কলঙ্কে জর্জরিত রাশিয়াকে মেদভেদেভা পারবেন কী আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে? ভক্ত-অনুরাগীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।
×