ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নুর মুন

স্বরূপে ফিরতে মরিয়া মুস্তাফিজ

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ৫ এপ্রিল ২০১৭

স্বরূপে ফিরতে মরিয়া মুস্তাফিজ

গতি, কাটার, সেøায়ার ও ইয়র্কার এগুলোই মুস্তাফিজুর রহমানের সেরা অস্ত্র। তবে এবারের শ্রীলঙ্কা সফরে খুব বেশি একটা ব্যবহার করেননি সেগুলো। কাটার করলেও তাতে খুব বেশি একটা বিভ্রান্ত হননি লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। টেস্ট সিরিজে দুই ম্যাচে ২৭ গড়ে ৮ উইকেট। তিন ওয়ানডেতে ৬। গড় ২৮.৫০! বিষয়টা ঠিক মুস্তাফিজের সঙ্গে যায় না। কারণ এর আগে ১২ ওয়ানডেতে এ পেসারের গড়টা ছিল ১৩’র কাছাকাছি। প্রতি ওভারে রান দেন সাড়ে চারের মতো, সেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচে দুই দলের পেসারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছেন তিনি, ৬.৫৩! সিরিজে মোট ২৬.১ ওভার বল করে দিয়েছেন ১৭১ রান! পরিসংখ্যানগুলো মুস্তাাফিজের নামের পাশে একবারে বেমানান। গত বছর চোট নিয়ে আইপিএল থেকে ফেরার পর বেশ কয়েক মাস পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষে গত নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে ক্রিকেটে ফিরে আসেন। নিউজিল্যান্ড সফরের পর ঘরোয়া ক্রিকেটেও সেরা ফর্মে ছিলেন না ‘কাটার মাস্টার’। এরপর লঙ্কা সফরেও (ওয়ানডে সিরিজ পর্যন্ত) এখনও সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি দেশসেরা এ পেসার। দুর্দান্ত গতি, সেই সঙ্গে কব্জিটাকে বাঁকিয়ে ছুড়ে দিলেন বল। বিরাট কোহলি, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো ব্যাটসম্যানরা কিছু বোঝার আগেই আম্পায়ার আঙুল তুলে দিয়েছেন। দারুণ গতিসম্পন্ন ইয়র্কারে ব্যাটসম্যান ক্রিজেই গড়াগড়ি খাচ্ছেন। মুস্তাাফিজুর রহমানের বলে এগুলো খুবই পরিচিত দৃশ্য। তবে এবারের শ্রীলঙ্কা সফরে একবারে ম্রিয়মান আলোচিত এ পেসার। টেস্টের পর ওয়ানডেতেও অনভিজ্ঞ লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা তাকে বেশ ভালভাবেই মোকাবিলা করেছেন। ওয়ানডে সিরিজে মুস্তাফিজের ফিটনেসের ঘাটতিটা স্পষ্ট দেখা গেছে। ওয়ানডে অভিষেকে টানা দুই ম্যাচে ৫ বা ততোধিক উইকেট। তাও আবার ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং-সমৃদ্ধ দলের বিপক্ষে। টি২০তে (২/২০) শুরুটা আরেক পরাশক্তি পাকিস্তানকে নাড়িয়ে দিয়ে। গতবার প্রথমবারের মতো আইপিএলে পা রেখেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে শিরোপা এনে দেনÑ ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমনেই বিশ্বকে ক্রীড়াঙ্গনকে নাড়িয়ে দেয়া মুস্তাফিজুর রহমান। ‘কাটার মাস্টার’, ‘দ্য ফিজ’, কত বিশেষণÑ অথচ তিনিই এখন স্রোতের উল্টো পথটা দেখতে পাচ্ছেন। ইনজুরি-অপারেশন থেকে ফেরার পর নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন ‘সেনসেশনাল’ এ টাইগার পেসার। ভক্ত-সমর্থক তো বটেই, মুস্তাফিজের নিজেরও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! ‘সত্যি বলতে ওইদিন (দ্বিতীয় ওয়ানড়ের পর) রাতে আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। মানসিকভাবে খুব হতাশ ছিলাম।’ দ্বিতীয় ওয়ানডের বাজে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন মুস্তাফিজ। ডাম্বুলায় প্রথম ওয়ানডেতে দল জেতায় শেষ পর্যন্ত হতাশাটা ভুলতে পেরেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ ওভারে ৬০ রান দিয়ে ১ উইকেট, ৩১১ রানের পাহাড় গড়ে প্রতিপক্ষ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজের বোলিংয়ে একদমই ধার ছিল না। কাটার-সেøায়ারও ছিল অকার্যকর। ঠিকমতো লাইন-লেন্থ ধরে রাখতে পারেননি। ছন্দে ফিরতে মরিয়া মুস্তাফিজ বলেন, ‘আগের বোলিংটা ফিরে পেতে চেষ্টা করছি। নিজের পারফর্মেন্সে আমি খুশি নই। আয়ারল্যান্ড সফরের আগে আমাকে পুরোপুরি ছন্দে ফিরতেই হবে।’ যোগ করেন তিনি। শ্রীলঙ্কা সফরের পর আগামী মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। সেখানে তৃতীয় দল নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের মাটিতে জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ফর্মে ফিরতে মরিয়া আলোচিত এ পেসার। এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মুস্তাফিজ, ‘ওয়ালস (বোলিং কোচ) আমাকে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো মানার চেষ্টা করছি। ফর্মে আমাকে ফিরতেই হবে।’ কেবল বোলিং কোচই নন, মুস্তাফিজকে স্বরূপে পেতে পুরো বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্টই অধীর। শ্র]ীলঙ্কায় অনুশীলনে তাকে নিয়ে বিশেষ সময় পার করেছেন প্রধান কোচ হাতুরুসিংহেও। কাঁধের অস্ত্রোপচারের আগে ওয়ানডেতে কোন ম্যাচে ওভারপ্রতি ৬Ñএর ওপরে রান দেননি। অথচ নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে ফেরার পর চার ম্যাচেই সেই অভিজ্ঞতা হয়েছে তিন বার! ক্রাইস্টচার্চে ১০ ওভারে ৬২ রান দিয়ে ২ উইকেট। ৯.২-২- ৩২-২, নেলসনে অবশ্য ভাল করেছিলেন। শ্রীলঙ্কায় দুই ওয়ানডেতে অবস্থা খুবই হতাশাজনক। রান দিয়েছেন ৬.৮৫ ও ৭.৫০ করে! ধূমকেতুর মতো অবির্ভাব হওয়ার পর ১৩ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে যা মুস্তাফিজের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের লজ্জা। দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী কোচ হাতুরুসিংহে অবশ্য এনিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন, ‘ও প্রথম ওয়ানডেতেই ৩ উইকেট পেয়েছিল। দ্বিতীয়টিতে ভিন্ন ভূমিকায় ছিল। পরে বোলিংয়ে এনেছি। মুস্তাফিজকে নিয়ে আমাদের কোন সমস্যা নেই।’ ওদিকে রঙিন পোশাকের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ফিট থেকে নিজেকে ফিরে পেতে মুস্তাফিজের জন্য আপাতত আইপিএলে না খেলাটাই ভাল হবে। এ প্রসঙ্গে মুস্তাফিজ বলেন, ‘মনে হয় না এবারের আইপিএল খেলতে পারব। মাশরাফি ভাইও পরামর্শ দিয়েছেন, আপাতত চিন্তাটা বাদ দেয়া উচিত। তার পরামর্শ আমি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। সামনে জাতীয় দলের লম্বা মৌসুম। আমার ফিট থাকাটা তাই গুরুত্বপূর্ণ।’ আর মুস্তাফিজের আইপিএলে খেলার সিদ্ধান্তের ভার তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। শেষ মুহূর্তে এমনটাই জানিয়েছেন বিসিসিবি প্রধান। আর আইপিএলে তার দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ কোচ টম মুডি ‘দ্য ফিজকে’ পেতে আত্মবিশ্বাসী। গত মৌসুমে পঞ্চম সর্বাধিক ১৭ উইকেট নিয়ে হায়দরাবদের প্রথম শিরোপা জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কেবল তাই নয়, প্রথম বিদেশী ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলের সেরা উদীয়মান ক্রিকেটারও নির্বাচিত হন টাইগার ‘কাটার মাস্টার’। এ ক্ষেত্রে তার ধারে কাছেও ছিলেন না কেউ। আইপিএলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ‘ইমাজিং ক্রিকেটার অব দ্য সিজন’ হিসেবে মুস্তাফিজের প্রাপ্য ভোট ছিল ৮৩.২ শতাংশ, নিকটতমপ্রতিদ্বন্দী লোকেশ রাহুলের ৬.৫! ৬১ ওভার বল করে টুর্নামেন্টে তার ইকোনমি ৬.৯০। কিপটে বোলিংয়ে মুস্তাফিজই ছিলেনÑ সবার ওপরে।
×