ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

লঙ্কা বিজয়ের সুযোগ হাতছাড়া

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ৫ এপ্রিল ২০১৭

লঙ্কা বিজয়ের সুযোগ হাতছাড়া

এমন সুযোগ আগে কখনও পায়নি বাংলাদেশ। কোন ওয়ানডে সিরিজে প্রথম ম্যাচ জিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকেনি। এবার শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম ওয়ানডে জিতেই ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। আর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল প্রথমবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের। কিন্তু সেই স্বপ্নটা সত্য হয়নি। প্রথম ম্যাচে যতটাই ভাল খেলেছিল বাংলাদেশ, দ্বিতীয় ওয়ানডে পরিত্যক্ত হওয়ার পর শেষ ম্যাচে ততোটাই বাজে নৈপুণ্য দেখায়। ফলে হার দেখে ১-১ সমতায় শেষ করে ওয়ানডে সিরিজ। বাংলাদেশ দল সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এবার লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। তবে সার্বিকভাবে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিপূর্ণ একটি সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলের নৈপুণ্যে নিজেদের মেলে ধরেছেন ক্রিকেটাররা। মাত্র তিনটি টেস্ট খেলুড়ে দল বাকি ছিল। সবগুলো দলের বিরুদ্ধেই ম্যাচ জয়ের স্বাদ নিয়েছে বাংলাদেশ, তবে সিরিজ জেতা হয়নি অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। বাকি ৬টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধেই ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ দল। এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সেই সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে টাইগাররা। কারণ, তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই ৯০ রানের বড় ব্যবধানে স্বাগতিক লঙ্কানদের বিধ্বস্ত করে মাশরাফিরা। সিরিজে এগিয়ে যায় ১-০ ব্যবধানে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে থাকা মানেই সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাওয়া। সেই অবস্থান অটুট থাকে দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায়। এবার শ্রীলঙ্কা সফরে দারুণ উজ্জীবিত ছিল। টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি ছিল ঐতিহাসিক শততম টেস্ট, সেই ম্যাচে জিতেছে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট বিজয়, সেটাও আবার লঙ্কানদের মাটিতেই। এবারের সিরিজে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল র‌্যাঙ্কিং। শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ ব্যবধানে হারাতে পারলে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বরে উঠে আসত বাংলাদেশ। কিন্তু বৃষ্টি সেই সম্ভাবনা নষ্ট করে দেয়। তৃতীয় ওয়ানডের ফলাফল শেষ পর্যন্ত যাই হোক র‌্যাঙ্কিংয়ে কোন নড়চড় হতো না শ্রীলঙ্কা কিংবা বাংলাদেশের। ওয়ানডে ক্রিকেটে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রমাণ ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে বেশ ভালভাবেই দিয়েছে। ঘরের মাটিতে একেবারেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা দলটি সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে। এরও আগে নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জয় হয়নি। গত বছর অক্টোবর-নবেম্বরে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলতে নেমে টানা ৬ সিরিজ পর প্রথমবার হারের স্বাদ নেয় মাশরাফির দল। ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় সিরিজ। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে ডিসেম্বরে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়। তবে সেই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ জয়ের ধারায় ফেরে টানা ৪ ওয়ানডে পরাজয়ের পর। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবশ্য শ্রীলঙ্কার রেকর্ড বরাবরই ভাল। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৬টি সিরিজ খেলেছিল বাংলাদেশ দল। যার মধ্যে ৫টি সিরিজই জিতেছিল শ্রীলঙ্কা এবং একটি সিরিজ ড্র হয়েছিল। ড্র সিরিজটি সর্বশেষবার শ্রীলঙ্কা সফরে ২০১৩ সালে হয়। তবে ওই সিরিজের পরই বাংলাদেশ সফরে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এসে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে লঙ্কানরা। তবে এবার ভিন্ন এক বাংলাদেশ দলকে দেখে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ম্যাচে তাদের কোন পাত্তাই দেয়নি, জিতেছে ৯০ রানের বড় ব্যবধানে। তৃতীয় ম্যাচে সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে নেমে উল্টো ৭২ রানে হেরে ড্র করে। সিরিজটা ছিল ৩ ম্যাচের। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায় সিরিজটা হয়েছে দুই ম্যাচের। সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়েছে। ব্যাট হাতে অনেকেই দারুণ সফলতা দেখিয়েছেন। দুটি সেঞ্চুরি হয়েছে, ৯টি হাফ-সেঞ্চুরিও এসেছে। তবে ব্যাট হাতে নৈপুণ্যে এগিয়ে ছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরাই। এর কারণ অবশ্য পরিত্যক্ত হওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডে। ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলেও বাংলাদেশ নামতেই পারেনি। একই কারণে বোলিংয়ে এগিয়ে থাকেন বাংলাদেশীরা। কুসল মেন্ডিস ১৬০ রান নিয়ে সবার ওপরে। আর বোলিংয়ে বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ ৬ উইকেট নিয়ে আছেন শীর্ষে। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা দারুণ নৈপুণ্য দেখান। প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে যান বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। ম্যাচে ১২৭ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেন। আর সে কারণে বিদেশের মাটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। সিরিজে দুই ইনিংস ব্যাট করে ৬৫.৫০ গড়ে ১৩১ রান করে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। সাকিব আল হাসান দুটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ১২৬ রান নিয়ে তিন নম্বরে থাকেন ব্যাটসম্যানদের তালিকায়। তার গড় ছিল ৬৩.০০! দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার হয়ে শতক হাঁকান মেন্ডিস। সেটি ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১০২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৩১১ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আর ব্যাটিংয়ে নামতেই পারেনি বাংলাদেশ। অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান বল হাতে এ সিরিজে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে দুটি অর্ধশতক হাঁকান। ওয়ানডে সিরিজের ব্যাটিং পারফর্মেন্সে সেরা পাঁচে আছেন তামিম আর সাকিব যথাক্রমে দুই ও তিন নম্বরে। কিন্তু বোলিংয়ের সেরা পাঁচে বাংলাদেশের তিনজনই সেরা। প্রথমে তাসকিন, দুই নম্বরে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তিনে মুস্তাফিজুর রহমান। এ তিনজনেরই শিকার ৬ উইকেট করে। বোলিংয়ে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স ভাল হলেও ব্যাট হাতে তেমন সুবিধাজনক ছিল না। তামিম-সাকিব ছাড়া আর কেউ তেমন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। শেষ ম্যাচে ওপেনার সৌম্য সরকার ৩৮ রান করলেও অপর ম্যাচে করতে পেরেছেন ১০ রান মাত্র। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১ রান। আর মাহমুদুল্লাহ করেছেন ২০ রান। সাব্বির রহমান প্রথম ওয়ানডেতে ৫৪ রান করতে পারলেও শেষ ম্যাচে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন। তবে শুধু শেষ ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়েই কাজে লাগিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার এই সিরিজে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া এ ডানহাতি অফস্পিন অলরাউন্ডার ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকান তৃতীয় ওয়ানডেতে। তবে ব্যাটিংয়ে বড় চমক ছিল শ্রীলঙ্কান অলরাউন্ডার থিসারা পেরেরার। তিনি দুই ম্যাচে দ্রুতগতির ফিফটি হাঁকান। আর সে কারণে ব্যাটিংয়ের তালিকায় সেরা পাঁচে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তবে বোলিংয়ে একেবারেই ম্লান ছিলেন এ পেস অলরাউন্ডার। দুই ম্যাচে ১০ ওভার বোলিং করে কোন উইকেট শিকার করতে পারেননি। সর্বোপরি সিরিজ জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হলেও দারুণ আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে বাংলাদেশ।
×