ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে ॥ জন্মদিনে সন্জীদা খাতুন ভালবাসায় সিক্ত

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৫ এপ্রিল ২০১৭

আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে ॥ জন্মদিনে সন্জীদা খাতুন ভালবাসায় সিক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের জন্মদিন মানেই আয়োজনের ঘনঘটা। তবে অনেকেই এড়িয়ে যান এই বাগাড়ম্বরকে। তেমনই এক ব্যতিক্রম ছায়ানট সভাপতি ড. সন্্জীদা খাতুন। মঙ্গলবার ছিল এই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, গবেষক, লেখক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বের ৮৫তম জন্মদিন। যদিও জন্মদিন নিয়ে নেই তার নিজস্ব কোন উচ্ছ্বাস। তাই তার জন্মদিনে থাকে না কোন আনুষ্ঠানিক আয়োজন। তবে শুভাকাক্সক্ষীদের ভালবাসায় তার অনাড়ম্বরপূর্ণ জন্মদিনটি রূপ পায় ¯িœগ্ধতায়। না চাইলেও গ্রহণ করতে হয় তাকে ভালবাসার মানুষদের অন্তরের শুভেচ্ছা। সেই সুবাদে জন্মদিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধানম-ির বাসভবনে ভিড় জমেছিল সন্্জীদা খাতুনের একান্ত আপনজন ও অনুরাগীদের। এক সময় ফুলে ফুলে ভরে যায় বৈঠকখানাটি। সেই সঙ্গে কেউ বা জন্মদিনে গেয়ে শোনান তার পছন্দের গানটি। কেউ বা কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে জানিয়ে দেন ভিন্নভাবে প্রকাশিত জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সকালে সন্্জীদা খাতুনের বাসায় যেতেই নজরে পড়ল রুচিবোধের ছাপ। তার মাঝে গলায় বেলী ফুলের মালা পরে বসে আসেন বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চার অগ্রদূত মানুষটি। সামনে ছোট্ট বেতের ঝুড়িভর্তি বেলি ফুল, যার মাঝে জ¦লছে প্রদীপ। সবাই আসছে পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিচ্ছেন তার কাছ থেকে। জন্মদিনের দিনটিতেও চুপ তিনি। স্মিত হাসি জানাচ্ছিল, সবার ভালবাসায় খুশি তিনি। ভোরে মিষ্টি আবহাওয়ায় পারিবারিকভাবে শুরু হয় তার জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা। গানের সুর ভালবাসার কথা হয়ে উঠে প্রিয়জনের কণ্ঠে। লাইসা আহমেদ লিসা, পার্থ তানভীর নভেদ, আব্দুল ওয়াদুদ সবাই গেয়ে উঠলেন, ‘‘আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে। কে আছ জাগিয়া পুরবে চাহিয়া, বলো ‘উঠ উঠ’ সঘনে গভীরনিদ্রামগনে’’। ধানম-ির বাসায় ঘরোয়াভাবে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন ভক্ত-শুভার্থী বন্ধুরা। গান হয়। গানে গানে ‘প্রিয় মিনু আপা’কে জন্মদিনের ভালবাসা জানানো। প্রতিবারের মতো তাই এবারও জন্মদিনে প্রিয় সন্জীদা আপাকে ভালবাসায় ভরিয়ে রেখেছিলেন তার অসংখ্য ভক্ত, অনুরাগী এবং ছায়ানটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সন্জীদা খাতুনের বসার ঘরের একপাশেই ছিল লুচি, মিষ্টির আয়োজন। চায়ে চুমুক দিয়ে কেউ শুনিয়েছেন কবিতা, কেউ শুনিয়েছেন গান। আব্দুল ওয়াদুদ গাইলেন ‘তুমি রবে নীরবে’। প্রদীপ কুমার আগরওয়াল পড়ে শোনালেন ভবানীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’। এরই ফাঁকে ভক্তের অনুরোধ মেটাতে সন্জীদা খাতুন পাঠ করলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রশ্ন’ কবিতাটি। সুতপা সাহা গাইলেন ‘তোমার দুয়ার খোলার ধ্বনি ওই গো বাজে হৃদয়মাঝে’। গানের সুরে সন্দা খাতুনের জন্মদিনে এ কথাই সবার হৃদয় ছড়াতে চাইলেন শিল্পীরা। ড্রয়িংরুমের একপাশে বসে ভক্তদের ভালবাসা উপভোগ করলেন সন্দা খাতুন। এদিকে, সকাল সকাল চলে এসেছিলেন বড় বোন মাহমুদা, খানিক পরেই এলেন ফাহমিদা খাতুন। ফাহমিদা খাতুন বললেন, জন্মদিনে তিন বোনের দেখা হয়। ভাল লাগে। এমনিতে আমাদের মাঝে মধ্যেই দেখা হয়, কথা হয়। তবে জন্মদিনের আনন্দটা তো অন্যরকম। না এলে ভাল লাগে না। সন্জীদা খাতুনের জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর আনন্দটা যে একেবারেই অন্যরকম তা বন্ধু-শুভার্থীদের আনাগোনা থেকেই টের পাওয়া যায়। গতকাল সূর্যের আলো ফুটবার পর থেকে সেই যে সন্জীদা খাতুনের ধানম-ির বাসায় সবার আসা শুরু তা রাত অবধি চলেছে। সবাই এসে অভিবাদন জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়েছেন প্রিয় আপার শরীরের। সকাল গড়াতেই দলে দলে এসেছেন ছায়ানটের শিল্পী, সদস্য ও শিক্ষকরা। নালন্দার শিশু শিক্ষার্থীরা এসেছে বিকেলে। প্রিয় দাদুকে ঘিরে তাদের হাজারটা কথা, নানান আবদার। হাসিমুখে সব শুনেছেন পঁচাশি বছরের চির তরুণ সন্জীদা খাতুন। এর মাঝে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন ডাঃ সারওয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, মানজারে হাসীন মুরাদ প্রমুখ।
×