ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অর্থ সঙ্কটে কর্ণফুলী পেপার মিল

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৫ এপ্রিল ২০১৭

চরম অর্থ সঙ্কটে কর্ণফুলী পেপার মিল

পান্থনিবাস বড়ুয়া, রাঙ্গুনিয়া ॥ বিসিআইসির অন্যতম প্রতিষ্ঠান চন্দ্রঘোনার কর্ণফুলী পেপার মিলস লি: (কেপিএম) এখন চরম অর্থ সঙ্কটের মুখোমুখি। মিলের দৈনিক উৎপাদন ১০-২৫ টন। বাঁশ, নরম কাঠ (পাল্প উড) ও অন্যান্য সরবরাহকারী কাঁচামাল ঠিকাদাররা মিলের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। সব পাওনা পরিশোধ ও নতুনভাবে মিলে সরকার বরাদ্দ দিলে আবারও ঘুঁরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে কেপিএম। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কারিগরি ত্রুটির কারণে মিলের উৎপাদন শূন্যের কোঠায়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে মাসে অর্ধেক সময় মিলের উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, বাঁশ, গাছ থেকে পাল্প এবং অনেকটা নিজস্ব উৎপাদন থেকে রাসায়নিকের ব্যবহারে কাগজ তৈরির দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কর্ণফুলী পেপার মিলস লি:। এই মিলের উৎপাদিত কাগজের মান খুবই উন্নত এবং এশিয়াখ্যাত। উৎপাদিত কাগজের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজেও কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ ব্যবহার হয়। নিজস্ব পাল্প এবং ব্যবহার্য রাসায়নিক দ্রব্যের বিক্রিয়ায় কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজ উৎপাদন খুবই লাভজনক। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পেলে দক্ষ ও স্বচ্ছ প্রশাসন এবং পরিচালনা ব্যবস্থাপনায় পরিপূর্ণ জনবলের সেটআপে ৭/৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই দৈনিক শতটন কাগজ উৎপাদনে লাভের গৌরব নিয়ে কর্ণফুলী পেপার মিল ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন একমাত্র রাষ্ট্রীয় কাগজ কল এই কর্ণফুলী পেপার মিল এখন চরম সঙ্কটের মুখোমুখি। অর্থাভাব বর্তমান মিলের মুখ্য সমস্যা বলে সর্বমহলে চিহ্নিত করা হলেও সংকট নিরসনের দিকে দৃষ্টি নেই কারো। চিহ্নিত সমস্যার নিরসনের দিকে নজর না রেখে জনবল কমানো আর উৎপাদন পক্রিয়া সংকোচন করে মিলে ব্যয় কমানোর উদ্ভট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যর্থ প্রয়াশ চলছে কর্তৃপক্ষের। চরম অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার শিকারে ঐতিহাসিক এই মিলটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাপক বদলি ও ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীদের এখনও যারা টিকে আছেন তারাও কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। তদুপরি ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছে না তারা। বদলি এবং ছাঁটাই প্রক্রিয়ার আতঙ্কে তাদের মধ্যেও চলছে উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠা। মিলের ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা গেছে, মিলের কাঁচামাল সরবরাহকারী, তেল গ্যাস, রাসায়নিক সামগ্রী সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনাসহ প্রায় সাড়ে ৫ শ’ কোটি টাকা দেনা রয়েছে মিল। এসব দেনা পরিশোধ এবং ৫০ কোটি টাকার নগদ তহবিলসহ সর্বমোট ৬শ’ কোটি টাকা পাওয়া গেলে পুরোদমে মিল চালু এবং লাভজনক উৎপাদন অর্জন করা সম্ভব হবে। আজ মঙ্গলবার ৪টায় ঢাকায় কেপিএম সংক্রান্ত বোর্ড মিটিংয় রয়েছে। মিলের সিবিএ নেতৃবৃন্দ বলেন, ব্যাপকভাবে শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই ও বদলি প্রক্রিয়া মিল বন্ধ করার কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। শ্রমিকের হাতেই মিল চলে। শ্রমিক-কর্মচারীর সঙ্গে মিলের পরস্পর স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু পরস্পরকে বিচ্ছিন্ন রেখে কর্তৃপক্ষ কৌশলে মিল বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন।
×