ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৫ এপ্রিল ২০১৭

ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাজেটে ভর্তুকির চাপ কমে আসায় স্বস্তিতে রয়েছে সরকার। বাজেটের আকার বাড়ছে কিন্তু ক্রমান্বয়ে ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা হচ্ছে। আট বছর আগে ভর্তুকি খাতে যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হতো, বর্তমানে তার চেয়ে অন্তত ৩৮ ভাগ কমে এসেছে। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেটের ভর্তুকি খাত থেকে দুই হাজার ৯০৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেট থেকে ভর্তুকি কমিয়ে ২৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। শতকরা হিসেবে যা ১১ শতাংশ। কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানোর কারণে ভর্তুকির পরিমাণ কমেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনছে সরকার। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ২৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে তা কমিয়ে করা হয় ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা আরও কমিয়ে ২৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা করা হয়েছে। এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে খাদ্য খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। একইভাবে পিডিবির খাত থেকে কমানো হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এ খাতে ভর্তুকি ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। এখন তা কমিয়ে করা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। তবে কিছু খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছেও। যেমন মূল বাজেটে খাদ্য খাতে ভর্তুকি রয়েছে ২ হাজার ৮২০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে পাট ও আর্থিক সহায়তা খাতে ভর্তুকি নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। গ্যাস খাতে রাখা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে বিবিধ খাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে ১১শ’ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) খাতে এবার কোন ভর্তুকি রাখা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কম দামে জ্বালানি তেল ক্রয় করে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বেশি দামে বিক্রি করার কারণে বিপিসির কোন ভর্তুকির প্রয়োজন হচ্ছে না। গত দুই অর্থবছর থেকে সরকারী এই প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে কোন ভর্তুকির অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, সংশোধিত বাজেটে গ্যাস খাতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। তবে আগামী অর্থবছর তা বাড়বে। এখানে আরও দেড় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির প্রয়োজন হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন বছরের ব্যবধানে ভর্তুকির পরিমাণ কমানো হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ১৬ শতাংশ। আগামী অর্থবছরেও ভর্তুকির পরিমাণ কমবে। কারণ, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী অর্থবছরে পিডিবি খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমে যাবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক সব সময় ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরেই বলা হচ্ছে, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে যেন ভর্তুকি কমিয়ে আনা হয়। কারণ, এ খাতে ভর্তুকির অর্থে গরিবদের পাশাপাশি ধনীরাও সুবিধা পাচ্ছে। তাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ভর্তুকি দেয়া উচিত, যাতে সমাজের সুবিধা বঞ্চিতরাই যেন এর উপকার পান। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, ভর্তুকি কমার প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভাল সংবাদ, স্বস্তিদায়কও বটে। তবে ভর্তুকি কমানোর এই সুবিধা যাতে সুবিধা বঞ্চিত মানুষরা পায় সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঢালাওভাবে ভর্তুকি দেয়া ঠিক নয়। কারণ, ধনী-গরিব সবাই একই সুবিধা পাচ্ছেন। ভর্তুকির অপব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতোমধ্যে আগামী বাজেটের আকার ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি জানিয়েছেন, এবার ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বাজেট আসছে। ওই বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত। কেননা, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
×