ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দেলওয়ার হোসেন

পাকিস্তানী সাংবাদিকের প্রশ্ন ॥ ঢাকায় নাকি ভুট্টো-ইয়াহিয়া ও টিক্কার নামে টয়লেট হয়েছে?

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৫ এপ্রিল ২০১৭

পাকিস্তানী সাংবাদিকের প্রশ্ন ॥ ঢাকায় নাকি ভুট্টো-ইয়াহিয়া ও টিক্কার নামে টয়লেট হয়েছে?

তিনি পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক। দু’বছর আগে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল প্রথম, সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেতর অবস্থিত ফরেন প্রেস এ্যাসোসিয়েশনে। ঠিক একই জায়গায় তার সঙ্গে আবারও দেখা হলো ৩০ মার্চ, এ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনের দিন। এর আগে এ্যাসোসিয়েশন সম্পর্কে বলে নেই কিছুটা। সুইডেনে কর্মরত বা বসবাসরত বিদেশী পত্রপত্রিকা এবং অন্যান্য মিডিয়ার সাংবাদিকদের সংগঠন এটি। সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই সংগঠনটিতে বর্তমানে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিক সদস্যের সংখ্যা ২৩০। প্রতি দু’বছর পর পর হয় সংগঠনটির নির্বাচন। প্রবাসের মাটিতে অভিবাসীদের দ্বারা গড়ে তোলা অসংখ্য সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ, ঝগড়া-কোন্দল আর মারামারির মতো ঘটনাগুলো একটি নৈমিত্তিক ব্যাপার হলেও অভিবাসী সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠনটি এদিক থেকে সমস্যামুক্ত। নেতৃত্বের হাল ধরার ইচ্ছা ও সময় কারও নেই। তাই নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে নেতার আকাল সংগঠনটিতে বরাবরই লেগে আছে। চাপের মুখে পড়ে একবার নেতৃত্বের হাল ধরেছিলাম আমি। তারপর আর সম্ভব হয়নি। চাকরি-বাকরি, ঘর-সংসার, বাজার-ঘাটের দায়িত্ব পালনসহ সপ্তাহের সাতদিন বিরামহীন কর্ম ব্যস্ততায় নেতৃত্ব গ্রহণের বিষয়টি যেন বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতোই। তবুও সংগঠনের ভোটার সাংবাদিক-সহকর্মী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ও অন্য কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের ওপর বিশেষ সহানুভূতিশীল দৃষ্টি থাকায়, প্রতিবারই তাদের তরফ থেকে নেতৃত্বের হাল ধরার অনুরোধটি বিনয়ের সঙ্গেই প্রত্যাখ্যান করতে হয়। আসা যাক, মূল প্রসঙ্গে পাকিস্তানী সাংবাদিক ভাইয়ের কথায়। আমি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ লাভ করি ১৯৯২ সালে। তিনি যোগ দিয়েছেন দু’বছর আগে। তখন একদিন সাক্ষাত হওয়ায় তার সঙ্গে বেশি আলাপচারিতার সুযোগ হয়নি। এবার দেখা মাত্রই তিনি প্রচ- কৌতূহল নিয়ে দীর্ঘ আলাপচারিতার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। আমি তাকে ডিনার পার্টিতে বসে আলাপের কথা জানালাম। তিনি রাজি হলেন। ডিনারে আমার পাশাপাশি বসেই তিনি শুরু করলেন নানা কথা। তবে মূল প্রসঙ্গ বাংলাদেশ, স্বাধীনতা, যুদ্ধাপরাধীর বিচার এবং বর্তমান সর্বক্ষণিক ব্যতিব্যস্ত। ছিল তার নানা বিষয়ে তীব্র কৌতূহল। তার মনোভাব বুঝতে পেরে আমিও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলাম তার অস্পষ্ট কিংবা নেতিবাচক ধারণার মোড় ঘুরিয়ে দিতে অথবা তার কৌতূহলের বিষয়গুলোতে আমার বক্তব্য ও অবস্থান স্বচ্ছভাবে তুলে ধরতে। আমাদের আলাপ শুরু হলো। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, তিনি একটিবারও প্রশ্ন করেননিÑ আপকো উর্দু আতা হ্যায় অথবা ক্যান ইউ স্পিক উর্দু? যেটা প্রতিটি পাকিস্তানীই করে বসেন। তিনি শুরু করলেন সুইডিশে। দুর্বল সুইডিশের কারণে তিনি ইংরেজীতেই চালিয়ে গেলেন। দুজনেই তাই করলাম। এ কথা, সে কথার পর এলো এক ভয়ঙ্কর প্রসঙ্গ। তিনি রাজধানী স্টকহোল্মের উপকণ্ঠে যে ব্রেদ্যাং এলাকায় থাকেন, সেখানে তার প্রতিবেশী হলেন ফরিদপুরের নগরকান্দার পলাতক আসামি যুদ্ধাপরাধী খোকন রাজাকার। সেই সঙ্গে চেনেন আরও এক রাজাকারকে। ওই দুজনকে আমি চিনি কিনা জানতে চাইলেন খুব আগ্রহের সঙ্গে। আরও যোগ করে বললেন, আমি আরও অনেক বাংলাদেশীকে চিনি। তাদের সঙ্গে আমরা ভেরি গুড রিলেশন। খোকন রাজাকারের ব্যাপারে বাড়তি উৎসাহ নিয়ে তিনি বলতে থাকলেন। তিনি তো খুব মাই ডিয়ার মানুষ। বাংলাদেশে একটা সিটির নাম করা মেয়র ছিলেন তিনি। সবাই তাকে চেনে। খুবই হাই প্রোফাইলের লোক তিনি। তুমি কি তাকে চেনো না? বুঝতে আর বাকি রইল না, খোকন রাজাকারের সান্নিধ্যে থাকার সুফলটা তার মগজকে বাংলাদেশবিরোধী নেতিবাচক তথ্যে উর্বর ও সমৃদ্ধ করে তুলেছে। প্রশ্নের জবাবে বললাম, হ্যাঁ এই দু’জনকেই আমি চিনি। তবে খোকন সাবকে চিনি আমি অন্যভাবে এবং কি কারণে সবাই তাকে চেনে তা আপনি জানেন? তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন না, কি ব্যাপার? বললাম শোনেন, এরা দু’জনই চিহ্নিত রাজাকার। খোকন একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী। ’৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে সে নারী ধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ হেন কোন অপরাধ বাকি নেই যা সে করেনি। অন্য জনও অপরাধী। তার ব্যাপারে তদন্ত চলছে। এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনা সরকার যে মানবতাবিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন, সেই ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসির রায় দিয়েছে। সে আত্মগোপন করে আছে এখানে। দেশে তাকে নিতে পারলেই ঝুলিয়ে দেয়া হবে। দেখলাম আমার এ তথ্য তাকে খুব একটা নাড়া দিল না। প্রশ্ন করে বসলেন- -আচ্ছা, একটা বিষয় আমি জানতে চাচ্ছি, এ পর্যন্ত যাদের ফাঁসি বা সাজা দেয়া হয়েছে, তারা কি সবাই যুদ্ধাপরাধী? শুনেছি, অনেক নিরীহ নিরপরাধীও নাকি অবিচারের শিকার হয়েছে? -বললাম, এটা অপরাধী পক্ষের প্রপাগান্ডা। খুব স্বচ্ছতার সঙ্গে ও ধীরগতিতে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত এবং চাক্ষুস সাক্ষীর অথেনটিক ডকুমেন্ট উপস্থাপনের মধ্য দিয়েই বিচার হয়েছে এবং হচ্ছে। যেখানে অভিযুক্তের আত্মপক্ষ সমর্থন এবং রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার সুযোগ রয়েছে। যেটা সরকার পক্ষেরও ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় নুরেনবার্গ ট্রাইব্যুনালও তাদের এই আপীলের সুযোগ দেয়নি। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের এই ট্রাইব্যুনাল তাদের সেই সুযোগ ও অধিকার দিয়েছে। সরকারী উকিল পাওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্তরা অর্থ ব্যয়ে দেশ-বিদেশের নামী-দামী উকিল ও লবি নিয়োগ করে শুধু মিথ্যাচার আর কুৎসিত প্রপাগান্ডা ছাড়া নিজেকে কোনভাবেই নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি। যারা পেরেছে তারা খালাস, লঘু সাজা এবং ফাঁসির সাজা থেকে পরিবর্তিত লঘু সাজা ভোগ করছে। জেনে নিন তার উদাহরণগুলো। আমি বলছি তাদের নামÑ ১. তাহলে বয়স্ক লোকগুলোকে তাদের বয়সের কথা চিন্তা করে মারসি দেয়া যেত না? ২. দেখুন, অপরাধ সংঘটিত হয়েছে ১৯৭১ সালে। আজ থেকে ৪৬ বছর আগে। তখন এই অপরাধীদের বয়স ছিল কম। তারা অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ, সদ্য ভূমিষ্ঠ থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যা এবং ধর্ষণ করেছে নির্বিচারে। এই অপরাধ কি ক্ষমারযোগ্য? এর সঙ্গে আমি একটি উদাহরণ অবশ্যই উল্লেখ করব, তা আপনার অজানার কথা নয়। বছর কয়েক আগে পালিয়ে থাকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধী ৯৫ বছর বয়স্ক পাপনকেও ধরার পর বিচারের হাত থেকে তিনি নিষ্কৃতি পাননি। এই বিচার প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত আছে এবং থাকবে। তাহলে এই বিচার আগে হলো না কেন? এত বছর পর কেন? আগে জিয়াউর রহমান, এরশাদ এরা তো কেউ উদ্যোগ নেয়নি। শেখ হাসিনা কেন এখন এটা করছে? -আপনি কি জানেন, জিয়া আর এরশাদ দু’জনেই পাকিস্তানের এজেন্ট। আইএসআই-এর সৃষ্টি? -না। কিন্তু জিয়াউর রহমান তো ফ্রিডম ফাইটার ছিল। -আপনি জেনে রাখেন, জিয়া মুক্তিযুদ্ধে ছিল পাকিস্তানের গুপ্তচর। আপনি তার বিপক্ষে ডকুমেন্টের সূত্রগুলো লিখে নিন। জিয়ার জন্ম পাকিস্তানে। তার বাবা সেখানে চাকরি করতেন। পাকিস্তানেই আর্মিতে তার রিক্রুটমেন্ট। সেখানেই কেটেছে তার শিশু ও যৌবনকাল। পাকিস্তানী শিক্ষা-দীক্ষা ও ভাবধারায় তিনি বেড়ে উঠেছেন। অখ- পাকিস্তান চেয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরেও তিনি সাড়া না দিয়ে বাঙালী নিধনযজ্ঞের জন্য পাকিস্তান থেকে সোয়াত নামের জাহাজে আনা অস্ত্রশস্ত্র খালাসের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাকে বাধ্য করা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে। সে সুযোগটিকেই তিনি কাজে লাগিয়েছেন পাকিস্তানের গুপ্তচর হিসেবে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগার হিসেবে আপনি খন্দকার মোশতাকের যে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তারও ভূমিকা জিয়ার মতোই অভিন্ন। দু’জনেই একই সূত্রে গাঁথা এবং পাকিস্তানের এজেন্ট। -কিন্তু পাকিস্তান কেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই কাজগুলো করবে? -আপনি জানেন, পূর্ব পাকিস্তানে কি রকম ডিসক্রিমিনেশন হয়েছে। এর জন্য ২৪টা বছর বঙ্গবন্ধু শেখ সাহেব ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিবেদিত ছিলেন। কোন ফল আসেনি। ’৭০-এর নির্বাচনে জিতেও ক্ষমতা দেয়া হয়নি। উদ্দেশ্য একটাই ছিল, শোষণ আর বঞ্চনার মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে পঙ্গু করে দেয়া, পূর্বের সম্পদ আর ক্ষমতা নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানকে সার্বিক দিক থেকে সমৃদ্ধ করা। আর তাই পৃথিবীর একটি নজিরবিহীন নির্বাচনের ফলাফলকে অগ্রাহ্য করে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। পশ্চিম পাকিস্তান কখনই চায়নি পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হোক। এ কারণেই তীব্র ক্ষোভ, অন্তরজালা, প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধপরায়ণতার জন্যই স্বাধীনতা ভ-ুল করার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছে খন্দকার মোশতাক, জিয়া, কর্নেল রশিদ, ফারুক, ডালিম প্রমুখ খুনীদের। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে এদের সক্রিয় ভূমিকা পালন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্মৃতি, ইতিহাস মুছে ফেলে পাকিস্তানী আদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীনতাবিরোধী ও অপরাধীদের ক্ষমতায়নের কাহিনীগুলোও তো আপনি ভালভাবেই ওয়াকিফহাল। তবুও সবিস্তারে শুনুন...। ...এই ডকুমেন্টগুলো পড়ুন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জিয়ার কাছে লেখা পাক আর্মির কর্নেল বেগের লেখা চিঠি পড়ুন। পড়ুন লরেন্স লিপসুজ মাসকারেনহাসের এ লিগ্যাসি অব ব্লাড এবং... পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ মদদেই সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও জেলখানায় জাতীয় চার নেতার নৃশংস হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে। এর ফলেই ইনডেমনিটি আইন পাস করে সকল হত্যাকা-ের বিচার বন্ধ এবং খুনীদের পুরস্কৃত করে বিদেশের দূতাবাসে চাকরি ও দেশে রাজনীতি করার অধিকার প্রদান করেন খুনী জিয়া ও মোশতাক গং। এই জিয়া এবং তার দল স্বাধীনতাবিরোধীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসন এবং পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকা গোলাম আযমের মতো যুদ্ধাপরাধের শিরোমণিকে নাগরিকত্ব প্রদান করে দেশে ফিরিয়ে আনেন। জিয়ার তিরোধানের পর এরশাদও ঠিক একই ডক্টরিন ও ধারায় দেশ শাসন করেন ৯ বছর। তাহলে বলুন পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিয়া এরশাদ কিসের দায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে? পাকিস্তানের ইচ্ছায় না অনিচ্ছায়? আপনি নিশ্চয় জানেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত দিবসে প্রতিবছর আমরা যখন জাতীয় শোক দিবস পালন করি, সেদিন জিয়াপতœী খালেদা জিয়া ঘৃণা ও অবজ্ঞা প্রদর্শনের জন্য বিশাল কেক কেটে তার জন্মদিনের উৎসব করেন। শুধু তাই নয়, এই নারী ক্ষমতায় গিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন, পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিধান এবং শুরু হওয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেন। শুধু কি তাই, যে মহান নেতাকে আমরা জাতির পিতা এবং স্বাধীনতার স্থপতি মানি তার প্রতি জিয়া পতœীর অবজ্ঞা এবং পাকিস্তানের জেনারেল জানজুয়া নামের অতি বিশ্বস্ত বন্ধুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশের বিষয়টিকে আপনি নিশ্চয় স্বাভাবিক বলে মানবেন না এবং তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের নিবিড় যোগসূত্রের কারণটা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। - তাহলে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকাটা কি ছিল? - আপনি বিষয়টি নিশ্চয় জানেন। তবুও বলছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে জামায়াত আর পাকিস্তান, দুটি আলাদা কোন সত্তা নয়। এদের একই অঙ্গে একই রূপ। জামায়াত হলো রাজনৈতিক পোশাকে উপস্থিত পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে অপশক্তির প্রতিভূ। এরা সব সময়ই ছিল পাকিস্তানের অকৃত্রিম বন্ধু। পাক হানাদার বাহিনীর দোসর। এরা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বেসামরিক ফোর্স। এই বেসামরিক ও সামরিক দুই অপশক্তি একত্রিত হয়েই বাংলাদেশে ৩০ লাখ নিরীহ মানুষ হত্যা, চার লাখ নারী ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজির মধ্য দিয়ে অপরিসীম ধ্বংসযজ্ঞ সাধনের মতো বর্বর মানবতাবিরোধী কাজ করেছে, যা ইতিহাসের একটি ভয়াবহতম কালো অধ্যায়। এই যুদ্ধে এরা কিভাবে চোখের সামনে আমার বাবা-মা এবং পাড়ার মানুষগুলোকে ধর এনে হাত-পা বেঁধে জবাই করেছে, সে কাহিনী আপনার শোনা দরকার। শোনেন তাহলে... শুনেছি এখন হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানীদের খুব ঘৃণা করে। বিষয়টি কি সত্য? আমি তো জানি স্বাধীনতার পর আমরা এত ঘৃণার কথা শুনিনি। জিয়া-এরশাদের আমলেও নয়। এ ছাড়া শেখ সাব তো নিজেই ৭৪-এ ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। তখনও আমরা এত ঘৃণার কথা শুনিনি। চলবে... লেখক : সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক
×