ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজীব হত্যার রায়

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৫ এপ্রিল ২০১৭

রাজীব হত্যার রায়

ব্লগার হত্যাকা-ের রায় ঘোষণা দেশে আইনের শাসনের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তমনা লেখক রাজীব হত্যার রায় হাইকোর্ট বহাল রেখেছে। ফলে দু’জনের মৃত্যুদ- বহাল থাকলেও কারাদ-প্রাপ্ত আসামিরা ফাঁসির দড়ি থেকে বেঁচে গেল। রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। অপরদিকে রাজীবের পিতা এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। কোন হত্যা মামলায় তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণে সামান্যতম ঘাটতি থেকে গেলে ন্যায়বিচার বঞ্চিত থাকতে পারেন বিচারপ্রার্থী। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। ব্লগার বা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট টার্মটি দেশব্যাপী বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আটক কাদের মোল্লার বিচারে ফাঁসির রায় না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট তথা ব্লগাররা শাহবাগে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করেন। পরে সেটি অভূতপূর্ব গণজাগরণের রূপ নেয়। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ইতিহাস সৃষ্টি করে। সে সময়েই মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র অনলাইনে স্বাধীন মত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। ওই সময়েই অর্থাৎ ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই শুরু। ২০১৫ সালের শেষ দিকে দেশের ব্লগার হত্যা মামলার প্রথম রায় ঘোষণার বিষয়টি মানুষের জন্য ছিল স্বস্তিদায়ক। তবে হামলার শিকার এবং হুমকিপ্রাপ্ত অনেক অনলাইন লেখকই প্রাণ রক্ষার্থে দেশের বাইরে চলে গেছেন। বিষয়টি বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য অস্বস্তিকর। রাজীব হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব কথা উঠে এসেছিল তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য অনুসরণীয়। হত্যা মামলার মতো একটি মামলার যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য-প্রমাণ ও নথি আদালতে উপস্থাপন বিশেষ জরুরী। এক্ষেত্রে কোনরকম দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আশা করা যায়, প্রকাশক দীপন, ব্লগার নাজিম হত্যাসহ সকল মুক্তচিন্তাশীল নিহত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তির স্বার্থে কর্তৃপক্ষ কথিত বিষয়ে সচেতন থাকবেন। হত্যাকারীরা সংঘবদ্ধ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী একের পর এক হত্যাকা- সংঘটিত করলেও তারা প্রায় সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। বলা সমীচীন, এ অবস্থা একটি সমাজের জন্য চরম বিপজ্জনক, যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। রবিবার মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞ আদালত যা বলেছে তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। আদালত বলেছে, একজন ইমামের দায়িত্ব হলো মুসল্লিদের নামাজ পড়ানো ও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা দেয়া। তিনি এমন কোন বক্তব্য দেবেন না, যা দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে তার বিচার প্রচলিত আইনের আওতায় করার সুযোগ রয়েছে। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারও নেই। আমরা আশা করব, আদালতের বার্তাটি ধর্মের দোহাই দেয়া ও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা সকলেই অনুধাবনে সক্ষম হবেন। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, অন্ধ অপশক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে মুক্ত মত ডানা মেলতে অপারগ থাকলে হাজার বছরের পরম অর্জন স্বাধীনতার অর্থ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, যা কারোরই প্রত্যাশিত নয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা সকল ব্লগার হত্যাকা-ের বিচার ত্বরান্বিত হোক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হোক। এতে করে খুনীচক্রও সতর্ক বার্তা পাবে।
×