ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সনজীদা খাতুনের ৮৫তম জন্মদিন আজ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৪ এপ্রিল ২০১৭

সনজীদা খাতুনের ৮৫তম জন্মদিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনভর অশুভের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন কল্যাণের কথা। মানবিক ও মুক্ত সমাজ বিনির্মাণে রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা। সংস্কৃতিকে সঙ্গী করে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন সম্প্রীতির পথে। সুরকে হাতিয়ার করে আজও লড়াই করছেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। সম্প্রীতি ও প্রগতির দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কেটে যায় তার প্রতিটি দিন। তিনি হলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের সভাপতি ড. সন্্জীদা খাতুন। আজ মঙ্গলবার এই রবীন্দ্র গবেষক, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও লেখিকার ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করে তিনি। তবে নিভৃতে কাজ করে যাওয়া এ মানুষটির জন্মদিনে নেই কোন বিশেষ আয়োজন। একান্তই পারিবারিকভাবে উদ্্যাপিত হবে তার জন্মদিন। তবে তার বাড়ির দুয়ার খোলা থাকবে দিনভর। ফুল নিয়ে যে কেউ ছুটে যেতে পারেন তার কাছে, জানাতে পারবেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা। জন্মদিনের আগের দিন সোমবার বিকেলে ছায়ানট ভবনে আপন অনুভূতি ব্যক্ত করেন সন্্জীদা খাতুন। সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথোপকথনে উঠে আসে আপন ভাবনার কথা। জন্মদিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জন্মদিন উদ্্যাপন প্রসঙ্গে আমার নিজের কোন আগ্রহ নেই। আমার কাছে মানুষের জন্মদিনকে একটি জৈবিক ব্যাপার মনে হয়। তাই আমার কাছে জন্মদিনের অর্থ হচ্ছে বেশি বুড়ো হয়ে যাওয়া। আর আমার ৮৫তম জন্মদিনের চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এ বছর রমনা বটমূলের বর্ষবরণের আয়োজনটি পদার্পণ করবে ৫০ বছরে। আমি সারাটি জীবন সংস্কৃতির শুদ্ধতাকে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কারণ, সংস্কৃতি মানুষের মনকে সুন্দর করে তোলে। তাই নিজে মঞ্চে উঠে গান গাওয়ার পরিবর্তে সংগঠকের ভূমিকাটাকেই বড় করে দেখেছি। প্রতিদানে কিছুই চাইনি। সব সময় সংস্কৃতির আলোয় মানুষের মনের কথাটি বলতে চেয়েছি। মুসলমানিত্বের চেয়ে বাঙালীত্বের গৌরববৌধকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। মানুষের মানবিক হয়ে ওঠাকে গুরুত্ব দিয়েছি। জাতীয় অধ্যাপক ও লেখক ড. কাজী মোতাহার হোসেনের মেয়ে সন্্জীদা খাতুন। এর বাইরে তিনি খ্যাতিমান লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের বোন এবং রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক ও ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ওয়াহিদুল হকের স্ত্রী। তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মানসহ ¯œাতক এবং ১৯৫৫ সালে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৭৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’ গবেষণাপত্রে পিএইচডি লাভ করেন। সন্্জীদা খাতুনের কর্মজীবন শুরু হয় শিক্ষক হিসেবে। শান্তি নিকেতন থেকে ¯œাতকোত্তর লাভের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এসব বাক্য সন্্জীদা খাতুনের কীর্তির কাছে ম্লান। তিনি সর্বদাই প্রতিকূল অবস্থায় দাঁড়িয়ে বাঙালীত্বের বোধ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করেছেন। নিজের বিশ্বাসের প্রতি অটল এই মানুষটি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির আলোয় পৃথিবীর মুখ দেখার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন। সংগঠক হিসেবে পেয়েছেন ঈর্ষণীয় সাফল্য। সবকিছু ছেড়েছুড়ে এখনও তিনি আঁকড়ে আছেন প্রিয় প্রতিষ্ঠান ছায়ানটকে। এখনও নিয়মিত ছুটে যান সেখানে, অনুজদের কাছে ডেকে ভালবেসে কবিগুরুর সুর তুলে দেন কণ্ঠে। কর্মময় জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ সন্্জীদা খাতুন অর্জন করেছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্টের স্বর্ণপদক ও সম্মাননা, সা’দত আলী আখন্দ পুরস্কার, অনন্যা পুরস্কার, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানজনক ফেলোশিপ, বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র পুরস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ নানা স্বীকৃতি। তার কীর্তি ছড়িয়ে ওপার বাংলাতেও। তার কর্মময়তার স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় সন্জীদা খাতুনকে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ প্রদান করেছে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ‘রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কার’, কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি পেয়েছেন। লেখক ও সম্পাদক হিসেবেও অত্যন্ত সফল সন্জীদা খাতুন। সব মিলিয়ে রচনা করেছেন ১৬টি গ্রন্থ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ, ধ্বনি থেকে কবিতা, অতীত দিনের স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ : বিবিধ সন্ধান, ধ্বনির কথা আবৃত্তির কথা, স্বাধীনতার অভিযাত্রা, সাহিত্য কথা সংস্কৃতি কথা, জননী জন্মভূমি, রবীন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ।
×