ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তায় চমক, হঠাৎ উজানের ঢলে থই থই...

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৪ এপ্রিল ২০১৭

তিস্তায় চমক, হঠাৎ উজানের ঢলে থই থই...

তাহমিন হক ববী, তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া থেকে ॥ উজান ও ভাটিতে সমান সমান থই থই পানিতে ভাসছে তিস্তা নদী। অকাল বন্যায় শাক-সবজি আর ফসলে ভরা তিস্তার বালুচরের জমিগুলো তলিয়ে গেলেও চরবাসীর মাঝে নেই কোন দুঃখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন তিনদিনের ভারত সফর ঘিরে হঠাৎ শুষ্ক মৌসুমে উজানের ঢলের চমকে এলাকাবাসী হয়ে পড়েছে আনন্দে আত্মহারা। নদীর বুকে চলতে থাকে শত শত নৌকা। যদিও তিস্তা চুক্তির বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে আশাহত বলা যায় না। রবিবার রাতেই উজানের ঢল নেমে আসে তিস্তা নদীতে। তিস্তা পাড়ের চরখড়িবাড়ি গ্রামের মশিয়ার রহমান (৫৫) ও তার স্ত্রী মমিনা বেগম (৪৫) বললেন, সোমবার ভোরে ঘুম ভেঙ্গে দেখি তাদের বালুচরের এক বিঘা জমির মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতসহ এলাকার শত শত বিঘা জমির ফসল নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। এমন দৃশ্য দেখে তারা আনন্দে দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা অত্যন্ত খুশি। শুধু এই দম্পতি নয়, টাপুরচরের মমতাজ উদ্দিন (৪৫) ও তার স্ত্রী জামিলা বেগমসহ (৩৮) শত শত চরবাসী বললেন একই কথা। তিস্তার পাড়ের ছোটখাতা গ্রামের নৌকার মাঝি জিনাত আলী (৫৬) এবং শেখ সুন্দর গ্রামের খরকোস আলী (৫৫) বললেন, বালুচরে পড়ে থাকা তাদের নৌকাগুলো তিস্তায় পানি পেয়ে চলতে শুরু করেছে। এছাড়া তিস্তা পাড়ের জেলেরা মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর তাদের জালে একে একে ধরা পড়তে থাকে তিস্তার বিখ্যাত মাছ বৈরালী, আইড়, বাগাইর মাছ। তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী জানান, চলতি শুষ্ক মৌসুমে এবার নদীতে গড়ে দুই হাজার কিউসেক পানি পাওয়া যায়Ñ যা দিয়ে এবার খরিপ-১ মৌসুমে ২০ হাজার ২০২ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছিল। সোমবার ভোর হতে তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১২ হাজার কিউসেকের উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন পানি নদীতে থাকায় ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদানে কোন বেগ পেতে হবে না। আর নদীর এমন পানিতে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকা নীলফামারী, দিনাজপুর ও রংপুরের প্রতিটি সেচ ক্যানেল পানিতে ভরিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে জানালেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে উজানে ভারী বর্ষণের কারণে ভারতের গোজলডোবা ব্যারাজের গেট খুলে দেয়ার কারণে ঢল এসে আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা ও পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র বলছে রবিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ৫০ দশমিক ২০ মিটার। সোমবার সেটি এক লাফে বৃদ্ধি পায় দশমিক ৮৫ মিটার। যা বাংলাদেশ অংশে তিস্তার পানির স্তর ১২-১৩ হাজার কিউসেকে প্রবাহিত হওয়ায় অকাল বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তিস্তার ধু-ধু বালুচরে পানি উঠেছে। সরেজমিনে দেখা যায় তিস্তা চরে রোপণ করা ভুট্টা ক্ষেত পানিতে ভরে উঠায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে সবজিসহ মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ ও রসুনের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় হতাশাও লক্ষ্য করা যায়।
×