ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলা ২২৫ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিতে চায় পিডিবি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ এপ্রিল ২০১৭

ভোলা ২২৫ মে.ও. বিদ্যুত কেন্দ্র বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিতে চায় পিডিবি

রশিদ মামুন ॥ অর্থায়ন অনিশ্চিত বলে ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানির বিদ্যুতকেন্দ্র বেসরকারী খাতে ছেড়ে দিতে চায় বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। পিডিবির তরফ থেকে বিদ্যুত সচিবকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে সরকারী খাতে বিদ্যুতকেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় বিদ্যুতকেন্দ্রটি বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ জানান, এ ধরনের আলোচনা হচ্ছিল, তবে চিঠি দেয়া হয়েছে কি না আমি নিশ্চিত নই। তিনি জানান, ভোলাতে পিডিবির একটি বিদ্যুতকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া অন্য একটি কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছে। পিডিবি সূত্র জানায়, ভোলায় অপর ২২৫ মেগাওয়াট যে বিদ্যুতকেন্দ্র রয়েছে সেটিতে অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়াতে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের কাছে ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যেখানে দরপত্রে কাজ পাওয়া কোম্পানির মাধ্যমে অর্থায়ন নিশ্চিত করে কাজ করা হচ্ছে, সেখানে পিডিবি বিদ্যুতকেন্দ্রটি আইপিপিতে নির্মাণে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, গত মাসের শেষদিকে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিদ্যুত সচিবকে জানানো হয়, সরকারী খাতে ভোলাতে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রটির অর্থায়ন নিশ্চিত না হওয়ায় তা বেসকারী খাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ভোলায় বেসরকারী খাতে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বেসরকারী খাতে বিদ্যুত উৎপাদন নীতি আওতায় দরপত্র আহ্বান করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দরদাতা কোম্পানিগুলোর তিনটি যোগ্যতা থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা কোম্পানির আর্থিক এবং কারিগরি যোগ্যতা থাকতে হবে, বিদ্যুতকেন্দ্রের জন্য উদ্যোক্তা নিজের খরচে জমি এবং জ্বালানির সংস্থান করবে এবং বিদ্যুতকেন্দ্রটি ভোলা ২৩০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশনের সঙ্গে নিজস্ব সংযোগ স্থাপন করবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের আগে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা ছাড়াও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অনুমোদন গ্রহণের কথা বলছে। এছাড়া সারাদেশে বড় বড় বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ভোলাতে বিদ্যুত বিভাগের একটি বিদ্যুতকেন্দ্র রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের অধীনে অন্তত তিনটি বড় কোম্পানি রয়েছে। এর সব কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে সাফল্য দেখিয়েছে। কিন্তু এরপরও বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের এ প্রস্তাবকে বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভোলায় সম্প্রতি গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধির খবর দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস পাওয়ার আশা নিয়ে সেখানে বড় এক বা একাধিক সরকারী বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয় বিদ্যুত বিভাগ। দেশের অন্য কোন স্থানে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের গ্যাস দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ভোলা এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সরকার ভোলা থেকে দ্রুত গ্যাস তুলতে একটি বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে কূপ খনন চুক্তিও করছে। নতুন করে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের শেষদিকে ভোলায় গ্যাসের সংস্থানও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। গ্যাস সংস্থানের সম্ভাবনা থাকলেই বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার গ্যাসভিত্তিক বেসরকারী বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে যে দামে বিদ্যুত কেনে তার প্রায় অর্ধেক দামে সরকারী বিদ্যুতকেন্দ্রর কাছ থেকে বিদ্যুত পাওয়া যায়। এসব বিদ্যুতকেন্দ্রর মাধ্যমেই বিদ্যুতের দর নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সম্ভাবনা থাকার পরও এ ধরনের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয় বলে মনে করেন তিনি।
×