ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইউরিয়া জমাট বাঁধা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে

১৩ জেলায় নতুন বাফার গোডাউন হচ্ছে সার বিতরণ-সংরক্ষণে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৪ এপ্রিল ২০১৭

১৩ জেলায় নতুন বাফার গোডাউন হচ্ছে সার বিতরণ-সংরক্ষণে

আনোয়ার রোজেন ॥ কৃষকের সার সঙ্কট দূর করা ও বেশি ফলনের জন্য সরকার প্রতিবছর ভর্তুকি দিয়ে বিদেশ থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করে। সেই আমদানিকৃত সার প্রাথমিকভাবে মজুদ রাখা হয় দেশের বিভিন্ন সরকারী বাফার গোডাউনে। তবে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মাসের পর মাস বিপুল পরিমাণ সার ঘাটে কিংবা বাফার গোডাউনের বাইরে ফেলে রাখতে হয়। এতে জমাট বেঁধে ইউরিয়া সার শক্ত হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে সারের গুণগত মানও ঠিক থাকে না। জমাট বাঁধা এসব সার কৃষকরা কম দামেও কিনতে চায় না। এমন প্রেক্ষাপটে সরকার সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এ জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৪৮২ কোটি টাকা। এসব গোডাউনে গুণগত মান অক্ষুণœ রেখে নিরাপদে অতিরিক্ত প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার সংরক্ষণ করা যাবে। এছাড়া স্থানীয় জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসব গোডাউন সরাসরি ভূমিকা রাখবে। গোডাউনগুলোর আয়ুষ্কালে (৫০ বছর) গোডাউন ভাড়া ও সার রি ব্যাগিং (পুনরায় প্যাকেটজাত করা) বাবদ প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয়ও হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে এক সময় সারের জন্য কৃষককে আন্দোলন করতে হয়েছে, গুলিতে জীবনও দিতে হয়েছে। বর্তমান সরকার কৃষকের জন্য সার সহজলভ্য করেছে। সারের কোন সঙ্কট এখন নেই। উল্টো পর্যাপ্ত গুদাম না থাকায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত সারের অপচয় হচ্ছে। সারের অপচয় রোধ করতে এবং সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ২৪টি আপদকালীন গোডাউন সার সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব গোডাউনের সাধারণ ও সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা যথাক্রমে ১ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন ও ২ লাখ ৯৩ হাজার মেট্রিক টন। প্রতিবছর এসব গোডাউন হতে গড়ে ১৭-১৮ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হয় এবং প্রায় আড়াই লাখ টন সার সব সময় খোলা জায়গায় রাখা হয়। এতে সার অপচয় হয় এবং আর্দ্রতার কারণে সারের গুণগত মান নষ্ট হয়। ইউরিয়া সারের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নিরাপদে সার সংরক্ষণের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট দেড় লাখ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন ১৩টি বাফার গোডাউন নির্মাণ সংক্রান্ত বিনিয়োগ প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়। সূত্র জানায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৩টি জেলায় নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ করবে। জেলাগুলো হলোÑ নীলফামারী, সুনামগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, শেরপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, পাবনা, যশোর, বরিশাল, রাজবাড়ী এবং গাইবান্ধা। প্রকল্পটির আওতায় ১৩টি গোডাউনের প্রত্যেকটির জন্য ন্যূনতম ৩ দশমিক ৮ একর জমি পাওয়া গেছে। নির্বাচিত স্থানগুলোতে সড়ক/রেল/ নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও রয়েছে। প্রস্তাবিত স্থানগুলোতে গোডাউন নির্মাণ করা হলে স্বল্পতম সময়ে কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহ করা যাবে। এ বিষয়ে বিসিআইসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ ইকবাল জানান, ১৩ জেলায় বাফার গোডাউন নির্মাণের লক্ষ্যে গত বছরের ২২ জুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি গত ২৮ মার্চ একনেকে অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে সার সংরক্ষণ সহজতর হবে এবং বিতরণেও অনেক সুবিধা হবে। তাছাড়া প্রয়োজনের সময় দ্রুতগতিতে সার কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এতে কৃষক সময়মতো ফসলে সার প্রয়োগ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতা আরও সংহত হবে। জানা গেছে, প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে ৩৬১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। অবশিষ্ট ১২০ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে বিসিআইসির নিজস্ব তহবিল থেকে। প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে।
×