ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবে নব্য জেএমবি জঙ্গীরা আত্মঘাতী হয়ে তথ্যভা-ার ধ্বংস করে যাচ্ছে

ধারাবাহিক অভিযানে ছোট হয়ে আসছে জঙ্গী নেটওয়ার্ক

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৪ এপ্রিল ২০১৭

ধারাবাহিক অভিযানে ছোট হয়ে আসছে জঙ্গী নেটওয়ার্ক

শংকর কুমার দে ॥ একের পর এক ধারাবাহিক জঙ্গীবিরোধী অভিযানে ছোট হয়ে আসছে নব্য জেএমবির নেটওয়ার্ক। তবে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী জঙ্গীরা এখন নতুন আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়ে তারা জঙ্গী তথ্যভা-ার ধ্বংস করে দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্নস্থানে আরও গোপন জঙ্গী আস্তানার তথ্য মিলেছে, যার খোঁজখবর ও নজরদারি করা হচ্ছে। শীঘ্রই আবারও নতুন জঙ্গী আস্তানার খোঁজে মাঠে নামতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, শুধু গত মার্চেই নব্য জেএমবির অন্তত ১৮ প্রশিক্ষিত আত্মঘাতী জঙ্গী হয় নিহত নয়ত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। জঙ্গী আস্তানায় মজুদ করা অস্ত্র, গ্রেনেড-বোমা, বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। নব্য জেএমবির ছয় আত্মঘাতী জঙ্গী ধরা পড়েছে, যারা জঙ্গী আস্তানা ও জঙ্গীদের সম্পর্কে তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। নব্য জেএমবির অন্তত ছয়টি জঙ্গী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ায় ভবিষ্যতে বাড়িওয়ালাদের কাছে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেয়টাও জঙ্গীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। গত মার্চে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ তিন পদস্থ কর্মকর্তা হারানোর মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। এক মাসের জঙ্গীবিরোধী অভিযানের ফলে জঙ্গী, আত্মঘাতী জঙ্গী, জঙ্গী দম্পতি, শিশুদের নিয়ে আত্মঘাতী হওয়া এবং জঙ্গীদের অস্ত্র ও বিস্ফোরকের ভা-ারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যত কর্মপন্থা ও কৌশল নির্ধারণ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জঙ্গীরা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও মিথ্য পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে অস্ত্র, বিস্ফোরক মজুদ করে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলছে। এ জন্য তারা আত্মঘাতী নারী জঙ্গীদের সঙ্গে আনছে, যাতে সন্দেহের উর্ধে থাকতে পারে তারা। অভিযান চালানোর আগ পর্যন্ত বাড়ির মালিক জানতেও পারছেন না তার ভাড়াটিয়া জঙ্গী। যখন জানতে পারছেন তখন তার আর কিছুই করার থাকে না। বাড়িটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, বাড়ির মালিক গ্রেফতার হয়, ভবিষ্যতে ভাড়াটিয়া আসতে চায় না, বাড়িটি জঙ্গী আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় বাড়ির মালিকের সামাজিক ভাবমূর্তি চরমভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। এ কারণে নতুন ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি ভাড়াটিয়া কি করছে না করছে তার খোঁজখবর নিতে হবে। যেমনটা চট্টগ্রামের ‘সাধনকুটিরের’ মালিক খোঁজ নিয়েই ভাড়াটিয়া যে জঙ্গী তা ধরে ফেলেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযানকালে জঙ্গীরা তো আত্মঘাতী হয়ে, নিহত হওয়ার আগে তারা গুরুত্বপূর্ণ নথি ও নগদ অর্থ পুড়িয়ে ফেলে। জঙ্গীরা আস্তানায় চিহ্নিত হওয়ার পরও ধরা না দিয়ে বা আত্মসমর্পণ না করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে, আত্মঘাতী হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গীরা ধরা পড়ছে, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক ধ্বংস হচ্ছে, জঙ্গী আস্তানাগুলোর পতন ঘটছে, ক্রমেই তাদের নেটওয়ার্ক ছোট হয়ে আসছে।
×