ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দারোগার প্রস্তাব

‘আমার সঙ্গে রাত কাটালে তোর স্বামীর অপরাধ মুছে দেব’

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৪ এপ্রিল ২০১৭

‘আমার সঙ্গে রাত কাটালে তোর স্বামীর অপরাধ মুছে দেব’

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ পুলিশের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ। সোমবার সকালে সদর উপজেলার বড় শেখহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার শিকার সাবিনা ইয়াসমিন বড় শেখহাটি গ্রামের আবদুল গফুরের স্ত্রী। অসুস্থ অবস্থায় তাকে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাবিনা ইয়াসমিনের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে তার স্বামী আবদুল গফুরকে মাদক মামলায় আটক করে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিবি পুলিশের দারোগা আলমগীর হোসেন ও কোতোয়ালি থানার দারোগা বিপ্লব। পুলিশের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেও মুক্তি মেলেনি তার। গত ২৫ মার্চ পাঁচ হাজার পিস ইয়াবা দিয়ে পুলিশ তাকে আটক দেখিয়েছে। এরপর পুলিশের হাত গেছে সাবিনা ইয়াসমিনের দিকে। একের পর এক অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দেয়ায় গত ২৮ মার্চ সাবিনা এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রবিবার মধ্যরাতে সাবিনার বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের হাত থেকে রক্ষা পেতে সোমবার সকালে বিষপান করেন তিনি। প্রতিবেশীরা টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে যশোর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে সাবিনা ইয়াসমিন জানান, বছর খানেক আগে কুসঙ্গে পড়ে তার স্বামী আবদুল গফুর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দারোগা আলমগীর তাকে বেশ কয়েকবার আটক করেন। প্রতিবারই ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে পেইন্ডিং মামলায় চালান দেন। এভাবে তার নামে পাঁচটি মামলা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাকে বাঁচাতে তিনি ও আত্মীয়স্বজন মিলে আবদুল গফুরকে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে সুস্থ ও মাদকমুক্ত করেন। পরে নামাজ কালামের পাশাপাশি তাকে তাবলিগ জামাতেও পাঠান। সাবিনা দাবি করেন, স্বামী গফুর যখন ভাল হওয়ার চেষ্টা করছে, তখনও দারোগা আলমগীর ও বিপ্লব পিছু ছাড়েনি। পরে বাধ্য হয়ে গত ১৬ মার্চ যশোর জিলা স্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অন্যান্যদের সঙ্গে আবদুল গফুরও আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় পূর্বের ৫টি মামলায় জামিনে থাকায় পুলিশ গফুরকে আটকে রাখেনি। কিন্তু আত্মসমর্পণে ক্ষুব্ধ হয়ে দারোগা আলমগীর ও বিপ্লব পুলিশ সুপারের কথা বলে গত ২৪ মার্চ গফুরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। যা গ্রামবাসী জানে। কিন্তু এদিন সন্ধ্যায় পুলিশ সাবিনাকে ফোন করে জানায়, তার স্বামীর কাছ থেকে ৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। তাকে বাঁচাতে ১০ লাখ টাকা লাগবে। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরদিন পুলিশ তাকে আটক দেখিয়ে চালান দেয়। সাবিনা আরও দাবি করেন, স্বামীকে আটকের পরও থেমে থাকেনি পুলিশ। ২৫ মার্চ রাতে দারোগা বিপ্লব তাকে ফোন করে ৯০ হাজার টাকা দাবি করে। অন্যথায় তার স্বামীর হাত-পা ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দেয়। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির টিভি, ফ্রিজ বিক্রি করে ২৬ মার্চ ২০ হাজার টাকা দেয়া হয় পুলিশকে। সবমিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকা পুলিশকে দেয়া হয়েছে বলে জানান সাবিনা। টাকা দাবির পাশাপাশি দারোগা আলমগীর তাকে বলেন, ‘টাকা পয়সা দিতে না পারলে তুই আমার সঙ্গে রাত কাটালে তোর স্বামীর সব অপরাধ মুছে দেব।’ সার্বিক এই পরিস্থিতি জানিয়ে ২৮ মার্চ পুলিশ সুপার বরারব আবেদন করেন সাবিনা। দুই পুলিশ কর্মকর্তার রোষানল থেকে রক্ষার এই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, দারোগা আলমগীর ও বিপ্লব ফোন করে তাকে হুমকি-ধমকিসহ অনৈতিক দাবি করছে। তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই পরিস্থিতিতে এর সুবিচার না পেলে তিনি সন্তানদের নিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবেন। কিন্তু এরপরও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং এসপির কাছে আবেদন করায় রবিবার রাতে পুলিশ সাবিনার বাড়িতে হানা দিয়ে গালিগালাজসহ হুমকি দিয়ে আসে।
×