ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরবঙ্গের শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৪ এপ্রিল ২০১৭

উত্তরবঙ্গের শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে ॥ উত্তরের নীলফামারী উত্তরা ইপিজেডসহ রংপুর বিভাগের শিল্পাঞ্চল এলাকায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পেট্রোবাংলার পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড এ সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) শুরু করেছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে পাইপ লাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের সম্ভাব্য যাচাইয়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছে। পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় সূত্র জানায়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের শিল্পাঞ্চল নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড ও নীলফামারী সদরের ঢেলাপীরে প্রস্তাবিত ইকোনোমিক জোনে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এরই মধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। সে ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছে সম্ভাব্যতা যাচাই। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চলতি অর্থবছরেই পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে সূত্রটি জানায়। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইমাম উদ্দিন শেখ। পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি তাদের কাজ শুরু করেছে। শনিবার পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক অপারেশন ইমাম উদ্দিন শেখ সাংবাদিকদের জানান, নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড, রংপুর বিভাগের শিল্পাঞ্চল এলাকা ও নীলফামারী সদরের ঢেলাপীরে প্রস্তাবিত ইকোনোমিক জোনে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য সম্ভব্যতা যাচাই চলছে। শীঘ্রই সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হবে এবং এরপর পাইপ লাইন স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। নীলফামারী পৌর মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় পাইপ লাইনে আমাদের এ অঞ্চলে গ্যাস দিচ্ছেন এটা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যের ব্যাপার। এ জন্য নীলফামারী জেলাবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। এদিকে পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে চাঙ্গা হয়ে উঠা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডসহ এ অঞ্চলের শিল্পাঞ্চলে দ্বিগুণ গতি ফিরে পাবে। কারণ পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ স্থাপন না হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে পণ্য উৎপাদন করতে হচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে গড়া নীলফামারী উত্তরা ইপিজেড এখন দিন দিন লাভের মুখ দেখছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই ইডিজেড হতে ৪৫৭ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রফতানি করা হয়। এদিকে আবার এরই মধ্যে ১০ ফ্যাক্টরিতে ২০ মিলিয়নেরও বেশি ডলার বিনিয়োগ করেছেন দেশী-বিদেশী শিল্প উদ্যোক্তারা। ১২টি কারখানা চালু রয়েছে এবং ১০টি কারখানা বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বর্তমানে কর্মসংস্থানে মানুষের পরিধি বেড়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে উত্তরা ইপিজেড স্থাপন করে। ২০০১ সালে পহেলা জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এই ইপিজেডের উদ্বোধন করেছিলেন। শুরুতে এ ইপিজেডে হংকংভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানে চীনারা অর্থ বিনিয়োগ করে। উত্তরা সোয়েটার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে চীনাদের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশের শ্রমিকরা উন্নতমানের সোয়েটার উৎপাদন করছে। পাশাপাশি একইভাবে এখানে পরচুলা তৈরি করছে অপর চীনা কোম্পানি। অথচ বিএনপি ও জামায়াতের চারজোট সরকারের সময় উত্তরা ইপিজেড বন্ধ করার পায়তারা করা হয়েছিল। শিল্পদ্যোগতারা মনে করেন এই ইপিজেডে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হলে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা আরও বাড়বে। উত্তরা ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার তানভীর সিদ্দিক জানান, এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ২২ হাজারের অধিক বাংলাদেশের নাগরিক। উত্তরা ইপিজেডে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে অন্যান্য ইপিজেডের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এখানে চশমা ও চশমার ফ্রেম, উইগ, খেলনা, বাঁশের তৈরি কফিন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ব্যাগ, বেল্ট প্রভৃতি পণ্য তৈরি হয়। তিনি আরও জানান, চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধিদল উত্তরা ইপিজেড পরিদর্শন করে বাণিজ্য পরিবেশ উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করে গেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপির নেতৃত্বে ইইউ প্রতিনিধিদলের মধ্যে ছিলেন ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের হেড অফ ডেলিগেশন এইচ, ই মিস্টার পিয়েরে মায়াদুন, জার্মানির রাষ্ট্রদূত এইচ, ই, ড. থমাস হেইনরিচ প্রিনজ।
×