ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পপুলিজম থেকে কর্তৃত্ববাদ-প্রসঙ্গ ভেনিজুয়েলা

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ৪ এপ্রিল ২০১৭

পপুলিজম থেকে কর্তৃত্ববাদ-প্রসঙ্গ ভেনিজুয়েলা

প্রায় ২০ বছর আগে হুগো শ্যাভেজ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন মনে হয়েছিল তার বাম ঘরানার পপুলিজম বা লোকরঞ্জনবাদ গণতন্ত্রকে রক্ষা করল। কিন্তু আসলে এটা দেশটিতে গণতন্ত্রের ধ্বংস ডেকে এনেছে। গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টের স্বাধীনতার ওপর আঘাত আসার মধ্য দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট হলো। ভেনিজুয়েলার ভাগ্য সম্পর্কে সতর্কবাণীই উচ্চারণ করতে হয়; পপুলিজম বা লোকরঞ্জনবাদ এমন একটি পন্থা যা দেখে আপাতদৃষ্টিতে গণতান্ত্রিক মনে হতে পারে। কিন্তু এর যৌক্তিক পরিণতি বলতে গেলে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা কিংবা সরাসরি কর্তৃত্ববাদে পর্যবসিত হওয়া। পপুলিজম সর্বদা কর্তৃত্ববাদের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় না। ভেনিজুয়েলায় গণতন্ত্রের ধস নামার পেছনে তেলের মূল্য হ্রাসসহ অন্যান্য নিয়ামক ও ক্রিয়াশীল ছিল। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ পপুলিজমের অন্ধকার দিকগুলো রোধ করতে পারে। দেশটি এখন পপুলিজম ও গণতন্ত্রের মধ্যকার মৌলিক টানাপোড়েন অনুভব করছে। বিশ্ব জুড়েই এই প্রবণতা চলছে। ওই টানাপোড়েন অপ্রতিহত গতিতে চলতে থাকলে দুটি ব্যবস্থার একটির জয় না হওয়া পর্যন্ত তা ব্যাপক মাত্রা পেতে পারে। ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে ভেনিজুয়েলায় গণতন্ত্রের ওই সময়কার অবস্থার প্রতি জনগণের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটে। যা থেকে ক্ষমতায় আসেন শ্যাভেজ। শ্যাভেজ প্রেসিডেন্ট হয়েই দেখতে পান দেশের বিচার ব্যবস্থা অকার্যকর এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক রিপোর্টে দেখা যায়, ভেনিজুয়েলার শীর্ষ প্রশাসনিক আদালত বিভিন্ন ধরনের মামলা নিষ্পত্তির জন্য প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন হারে অর্থ ধার্য করে রেখেছে। দেশটির শতকরা এক ভাগেরও কম জনগণ তাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখত। এর ফলে, শ্যাভেজ ১৯৯৯ সালে বিচার ব্যবস্থায় প্রথম দফা যেসব সংস্কার সাধন করেন তার প্রতি ব্যাপক জনসমর্থন ছিল। এই সংস্কারের কারণে দেশটির বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বৃদ্ধি পায় এবং বৃদ্ধি পায় এর ন্যায়নিষ্ঠা। ২০০৪ সালে সুপ্রীমকোর্ট রুল জারি করে যে, শ্যাভেজকে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য যে গণভোটের প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক নাগরিকের স্বাক্ষর রয়েছে এবং এই কার্যক্রম চলতে পারে। এ সময়ই দেখা দেয় বিপত্তি। শ্যাভেজ এই পর্যায়ে বৈরীভাবাপন্ন বিচারকদের সাসপেন্ড করে তদস্থলে নতুন বিচারক নিয়োগ করার কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। এই পরিস্থিতিতে দেশটির প্রেসিডেন্টের কর্তৃত্ববাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার পথে বিচার বিভাগের যে রক্ষাকবজের ভূমিকা ছিল তা ধ্বংস হয়ে যায়। ভেঙ্গে পড়তে থাকে ভেনিজুয়েলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাÑ যার অনুঘটক ছিল বিচার বিভাগকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট শ্যাভেজের গৃহীত পদক্ষেপ। বর্তমানে ভেনিজুয়েলায় বিরোধীরা মাদুরোর পক্ষ ত্যাগ করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা সুপ্রীমকোর্টের উদ্যোগকে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য এক অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেছেন। -নিউইয়র্ক টাইমস
×