ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিপদের বন্ধু

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৪ এপ্রিল ২০১৭

বিপদের বন্ধু

মনে হবে ৯৯৯ কেবলই একটি সংখ্যা। অবশ্যই সংখ্যা। কিন্তু আদতে সে সব বিপদে বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়ায়। আর হাত বাড়ায় অতি দ্রুত সেবার। দেশের যে কোন প্রান্তের যে কোন ব্যক্তি পেতে পারেন এই সেবা। তবে তা বিপদকালীন কিংবা বিপদের পূর্বাভাস পেলেই কার্যকর হয়। বিশ্বের প্রায় সব উন্নত দেশেই রয়েছে এ সেবার ব্যবস্থা। বাংলাদেশে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের পথ ধরে জাতীয় এই হেল্প ডেক্সটি চালু করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ৯১১ ফোন করা মাত্র সেবাদাতারা এগিয়ে আসেন, বাংলাদেশেও সেই সেবার দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সহযোগিতা পেতে বিনা টোলে উল্লিখিত নাম্বারে ফোন করতে হবে। ফোন করলেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দ্রুত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় হেল্প ডেস্ক। গত বছর এই ডেস্ক চালু হয়েছে। চলতি মার্চ মাসের প্রথমার্ধ পর্যন্ত মোট তেরো লাখ ফোনকল মিলেছে। এর মধ্যে সহযোগিতা চেয়ে ফোনকল ছিল চার লাখ। বাকি কলগুলো ছিল বিষয়টি জানার। কলের মধ্যে আটষট্টি শতাংশ ছিল পুলিশের সহযোগিতা চাওয়ার। ২৭ শতাংশ ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা চাওয়ার। ৫ শতাংশ ছিল এ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার জন্য। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা বিপদে আমি না যেন করি ভয়।’ কবির যা চাওয়া, সাধারণের তা নাও হতে পারে। সাধারণজন বিপদ তাড়ানোরই সন্ধান করে। বিপদে কেউ এসে দাঁড়ায় পাশে, বাড়িয়ে দিক সহযোগিতার হাতÑ এমনটাই কামনা করেন বিপদগ্রস্ত আমজনতা। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ ও অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশে বিপদ আসে চারদিক থেকেই। আক্রান্ত হওয়ার মানুষের সংখ্যাও কম নয়। আগুন লাগার মৌসুমে ফায়ার সার্ভিসের প্রয়োজনটাও হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ। রোগীর জন্য এ্যাম্বুলেন্স পাওয়াও সব সময় সহজসাধ্য হয় না। আর অপরাধীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়ে তা পাওয়া গেলে বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়ে। বর্তমানে কেন্দ্রীয়ভাবে গাজীপুর হাইটেক পার্কে ৯৯৯ হেল্পডেস্ক পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্থাপিত হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে ত্রিশটি লাইন সপ্তাহের প্রতিদিন চব্বিশ ঘণ্টা চালু থাকে। একাজে কর্মরত আছেন তিন শ’ কর্মী। তারা প্রতিদিন দেশের প্রতিটি প্রান্তের গড়ে ত্রিশ হাজার কল রিসিভ করে দ্রুত সহযোগিতার লিংক করে দেন। তবে সংযোগ সাধনেই শেষ হয় না সহায়তার কাজ। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ঠিকমতো সহযোগিতা পেল কিনা তাও মনিটরিং করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ টু আই বিভাগ এই ডেস্কের কার্যক্রম মনিটরিং করে আসছে। ব্যাপক সাড়া পাওয়ার কারণে এখন দেশের প্রতিটি জেলায় এই ডেস্ক চালু হতে যাচ্ছে। এদেশের মানুষ এ ধরনের ব্যবস্থা অতীতে পায়নি অথচ এমন সহায়তা পেলে কত খুন-খারাবি, অন্যায়, অপরাধ কমে যেত বা সংঘটিত হতো না। মানুষ ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স সহজে পাবার কথা কখনও ভাবেনি। তবে এই সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারণ প্রয়োজন। বিদ্যুত, গ্যাস, পানি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সেবার হাত যেন বাড়ানো হয়। সরকারের এই পদক্ষেপ দেশের মানুষকে বিপন্মুক্ত করার সহায়ক হয়ে উঠছে। এর প্রচার ও প্রসার যেন বাড়ে।
×