ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরির নামে প্রতারণা

সাতক্ষীরার গৃহবধূকে ১২ দিন ঢাকায় আটকে রেখে ধর্ষণ, মামলা নেয়নি পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ এপ্রিল ২০১৭

 সাতক্ষীরার গৃহবধূকে  ১২ দিন ঢাকায় আটকে রেখে ধর্ষণ,  মামলা নেয়নি  পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ মালয়েশিয়ায় চাকরি দেয়ার নামে ঢাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে টানা ১২ দিন ধর্ষণ করা হয়েছে স্বামী পরিত্যক্ত দুই সন্তানের এক জননীকে। ধর্ষণের শিকার ওই নির্যাতিত নারী ৩১ মার্চ ঢাকা থেকে পালিয়ে এসে সাতক্ষীরা থানায় প্রতারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। ধর্ষণের শিকার এই নারীর বাড়ি সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে। বর্তমানে তাকে থানা থেকে অভিযোগ তুলে নিতে ধর্ষকসহ তার সহযোগীরা জীবননাশের হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। স্বামী পরিত্যক্তা দু’সন্তানের জননী নির্যাতিত ওই নারী (২৫) জানান, আট বছর আগে সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামে তার বিয়ে হয়। দু’সন্তান হওয়ার পর স্বামী তাকে বাপের বাড়িতে রেখে ঢাকায় চলে যায়। এরপর থেকে তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ না থাকায় মায়ের কাছে থেকে দিনমজুরি খেটে দু’সন্তানের ভরণপোষণ চালাতে হয় তাকে। তিনি অভিযোগে জানান, আলীপুর ইউনিয়নের গাঙনিয়া কাহারপাড়ার বাবুর আলী গাজীর ছেলে নূর ইসলাম গাজী (৪০) তাকে সরকারী খরচে মালয়েশিয়ায় চাকরি দেয়ার কথা বলে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। নিরক্ষর হওয়ায় প্রথমে তিনি রাজি হননি। পরে মায়ের চাপে তিনি রাজি হন। সে অনুযায়ী নূর ইসলামের সহযোগী গাঙনিয়া গ্রামের নবাব আলীর ছেলে আবু বক্কর গাজী তাকে সাতক্ষীরা হয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য গত ১৮ মার্চ রাত সাড়ে সাতটার দিকে সাতক্ষীরা সঙ্গীতা সিনেমা হল মোড়ে নামিয়ে দেয়। পরে নূর ইসলাম তাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকাগামী একটি পরিবহনে উঠে ১৯ মার্চ সকালে নূর ইসলামসহ তিনি ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নামেন। সেখান থেকে তাকে গাবতলী এলাকার হাসানুর রহমানের মালিকানাধীন পাঁচতলা বাড়িতে তোলা হয়। সেখানে পাচারের জন্য নিয়ে আসা ফরিদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন নারীকে তিনি দেখতে পান। ওই বাড়ির মালিকের ৪০/৩, নয়াপল্টন (২য় তলা), ঢাকা- ১০০০-এ বিদেশে লোক নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত অফিস রয়েছে। নির্যাতিত ওই নারী জানান, গাবতলীর পাঁচতলা বাড়ির একটি ঘরে তাকে আটক রেখে পরপর তিনদিন ধর্ষণ করে নূর ইসলাম। তারপর তাকে পাচারের জন্য এক ব্যক্তির কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে নূর ইসলাম সাতক্ষীরায় চলে আসে। এরপর থেকে অজ্ঞাত পরিচয় চার-পাঁচজন তাকে দিনরাত পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। দিনের বেলায় তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হতো। সারা দিনে দু’বার ডাল ভাত দেয়া হতো। একপর্যায়ে ৩০ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই বাড়ির এক দারোয়ানের সহযোগিতায় রিক্সায় গাবতলী চলে আসেন। সেখান থেকে একটি পরিবহনে ৩১ মার্চ সকালে বাড়ি ফেরেন তিনি। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ছোট ও ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামকে জানান তিনি। তাদেরই পরামর্শে তিনি বাদী হয়ে ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় নূর ইসলাম ও আবু বক্করের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে পাচারের অভিযোগ এনে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। থানার ওসির নির্দেশে উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন ওই রাতেই ঘটনার তদন্তে গেলেও অজ্ঞাত কারণে অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড হয়নি। নির্যাতিতা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ মামলা না নেয়ায় আসামিরা মাহমুদপুর গ্রামের শুড়িখালির আবদুস সালাম, শহীদুলসহ কয়েকজনকে নিয়ে অভিযোগ তুলে নিয়ে আট হাজার টাকায় বিষয়টি মিটিয়ে নেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূর ইসলাম বলেন, বায়ারের কথামতো তিনি ওই নারীকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে তাকে রেখে চলে আসেন তিনি। এরপর কি হয়েছে জানেন না তিনি। আবু বক্কর গাজী জানান, নূর ইসলামের কথামতো তিনি ওই নারীকে ১৮ মার্চ রাত সাড়ে সাতটার দিকে বাদামতলী মোড় থেকে সাতক্ষীরাগামী একটি গ্রামবাংলা গাড়িতে তুলে দেন। এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন রবিবার সাংবাদিকদের জানান, ধর্ষণের ঘটনা অনেক দিনের। তাই আলামত পাওয়া যাবে না। নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে দেরি হচ্ছে। তাই মামলা হবে কি না, এখনই বলা যাবে না।
×