ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিলকিস রহমানের উইমেন ইন কাবিননামা গ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ এপ্রিল ২০১৭

বিলকিস রহমানের উইমেন ইন কাবিননামা গ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুসলিম রীতি অনুযায়ী কাবিননামার মাধ্যমে নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয়। তবে একজন নারীর জন্য এ কাবিননামা শুধুই কোন চুক্তি নয়, বরং হয়ে ওঠে সুরক্ষার প্রতীক। দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনে নারীর অধিকার রক্ষায় বিস্তৃত ভূমিকা রাখতে পারে একটি উপযুক্ত কাবিননামা। গবেষণার মাধ্যমে সে বিষয়টিকেই মেলে ধরেছেন ড. বিলকিস রহমান। প্রকাশিত হলো লেখিকার গবেষণা গ্রন্থ ‘উইমেন ইন কাবিননামা’। বইটিতে নারীর অধিকার সুরক্ষায় বিয়ের দলিল হিসেবে কাবিননামার ভূমিকাকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পুরুষ কর্তৃক নারীকে যথাযথ সম্মানের পাশাপাশি স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করা উনবিংশ শতকের এমন ১২২টি কাবিননামা উপস্থাপিত হয়েছে গ্রন্থটিতে। বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা পাঠক সমাবেশ। রবিবার বিকেলে শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে গ্রন্থটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। পাঠক সমাবেশের সম্পাদনা বিভাগের প্রধান ওয়াহিদুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশা ইসলাম নাঈম, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. শাইখ ইমতিয়াজ ও ইংরেজী দৈনিক ইনডিপেনডেন্টের বার্তা সম্পাদক মীর মোস্তাফিজুর রহমান। গবেষণার কারণে দেশের বাইরে থাকায় প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না লেখিকা বিলকিস রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক মীর মাসরুর জামান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মুসলিম ধর্মীয় রীতিতে কাবিননামা হচ্ছে বিয়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। দাম্পত্য জীবনের জন্য এক ধরনের সামাজিক চুক্তি। তবে এই কাবিনের মধ্যেও যে সৃজনশীলতা ও স্বচ্ছতা থাকতে পারেÑসে বিষয়টি এই গ্রন্থে উঠে আসা ১২২টি কাবিননামা পড়লে অনুধাবন করা যায়। বইটিতে ঠাঁইপ্রাপ্ত একটি কাবিননামায় দেখা যায়, একজন স্বামী তার স্ত্রীর কাছে অঙ্গীকার করেছে সে যদি চার বছর বিদেশে থাকে তাহলে স্ত্রী ওই স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার পাবে। এমনকি ওই স্ত্রী চাইলে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে বসবাস না করে নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবে। এভাবে বইটিতে কাবিননামার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও সহজ করে তোলার বিভিন্ন উদাহরণ পাওয়া যায়। নারীর অধিকার রক্ষায় কাবিননামা যে কত সুচারু হতে পারে তা এই বইটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এক অর্থে এ বইটি হচ্ছে কাবিননামার ইতিহাস। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ব্যক্তি জীবনে সমাজ সচেতন মানুষ হিসেবে কাবিনামার মাধ্যমে নারীর স্বাধীনতা কিংবা সুরক্ষার বিষয়ে অনুসন্ধান করেছেন বিলকিস রহমান। নিজের সুন্দর দাম্পত্য জীবনের ভেতর দিয়েই তিনি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বন্ধনের পাশাপাশি দ্বান্দ্বিক অবস্থানও খোঁজার চেষ্টা করেছেন। কাজ করেছেন উনিশ ও বিশ শতকের মুসলিম নারীদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে। আশা ইসলাম নাঈম বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থানের বিবেচনায় গ্রন্থটি নারী জীবনের ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গ্রন্থটি সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য গবেষণার উৎস হতে পারে। কারণ, এতে তৎকালীন মুসলিম সমাজের সঙ্গে সম্পর্কিত ১২২টি কাবিননামার রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে। সেই অর্থে ব্যাপক গবেষণার ফসল হচ্ছে এই গ্রন্থ। জীবনসঙ্গী আবৃত্তিশিল্পী মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্কে বইটি উৎসর্গ করেছেন বিলকিস রহমান। সেলিম আহমেদের চমৎকার প্রচ্ছদে ৭০ পৃষ্ঠায় বিন্যস্ত উইমেন ইন কাবিননামা গ্রন্থের মূল্য রাখা হয়েছে ৩৪৫ টাকা। বিশেষ শিশুদের মনোমুগ্ধকর নৃত্য-গীত পরিবেশনা ॥ প্রতিটি শিশুই আপন পরিবেশনায় শ্রোতা-দর্শকের মাঝে ছড়িয়ে দিল মুগ্ধতার পরশ। নাচের মুদ্রা, গানের সুর কিংবা কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে আয়োজনটি হয়ে ওঠে অনবদ্য। আর এই পরিবেশনা উপস্থাপনকারী সকলেই ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে রবিবার বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজন করে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিলÑ ‘স্বকীয়তা ও আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে’। একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাছিমা বেগম। শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন। আলোচনা পর্বের আগে মঞ্চে আসে সুইড বাংলাদেশের শিল্পীরা। ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ ও ‘মোর ভাবনারে কি হাওয়ায়’ গানের সঙ্গে তাদের নূপুরের নিক্কনধ্বনিতে মুখরিত হয় চারপাশ। এরপর অটিজম বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে প্রদর্শিত হয় বিশেষ তথ্যচিত্র ‘তুমি অগ্রদূত হয়ে দাঁড়ালে বিশেষ শিশুদের পাশে’। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, একটা সময় অটিজম বা প্রতিবন্ধী শিশুদের বিষয়ে কারও কোন ধারণা ছিল না। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্য দেশের মানুষ এদেরকে বুঝতে ও চিনতে পেরেছে। এ ধরনের শিশুদের জন্মের বিষয়ে অভিভাবকদের কোন দোষ নেই। সচেতনতার মাধ্যমে এদেরকে মানুষ করতে হবে। তাহলে এরা মূল সমাজের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে। সেলিনা হোসেন বলেন, এ ধরনের শিশুদের মানুষ করতে অভিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের অন্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এদের দিকে সুনির্দিষ্ট দৃষ্টি দিলে তারা সমাজের মূল স্রোতে যুক্ত হতে পারবে। সম্পূর্ণ সুস্থ বাচ্চাদের মতো তারাও সমাজের অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। আলোচনা পর্ব শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যাতে শুরুতেই দলীয় নৃত্য নিয়ে মঞ্চে আসে সোয়াকের শিল্পীরা। তারা অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে ‘দুই এপ্রিল’ শিরোনামে গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। প্রয়াস স্পেশাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা ‘নিমফুলের মৌ’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে। একক কণ্ঠে শাম্মী ‘কোন বা দেশে নিতাইগঞ্জ যাই’ ও নাঈম ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে’ পরিবেশন করে।
×