ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুর শ্লীলতাহানির রক্ত, লজ্জিত করে সমাজকে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ এপ্রিল ২০১৭

শিশুর শ্লীলতাহানির রক্ত, লজ্জিত  করে সমাজকে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার জপসা ইউনিয়নের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ফারিয়া (ছদ্মনাম)। আট বছর বয়সী এই শিশুটি প্রতিদিনের মতোই বিদ্যালয় ছুটির পর বাড়ির পাশে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল। তার প্রতিবেশী ১৪ বছর বয়সী এক ভাই ও এক চাচা তাকে ভুলিয়ে তাদের ফাঁকা বাড়িতে নিয়ে যায়। তারা একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। ফারিয়ার চিৎকার শুনে পরিবারের সদস্যরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনাস্থল থেকে তড়িঘড়ি করে রাত আটটার দিকে ফারিয়াকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু প্রচ- রক্তক্ষরণ হওয়ায় শিশুটিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে রাতেই পাঠিয়ে দেয়া হয়। শিশু ফারিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে ওসিসির সমন্বয়কারী বিলকিস আক্তার রবিবার দুপুরে জনকণ্ঠকে জানান, ‘শনিবার রাতেই শরীয়তপুর হাসপাতাল থেকে ঢামেকের ওসিসিতে পাঠানো হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য। ধর্ষণজনিত কারণে মেয়েটির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এখনও ফারিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে তার অবস্থার আরও অবনতি হবে। তবে তার শারীরিক উন্নতির জন্য আমরা সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি শীঘ্রই ফারিয়া সুস্থ হয়ে উঠবে।’ এদিকে, ঢামেক হাসপাতালে ফারিয়ার সঙ্গে এসেছেন তার মা-বাবা ও খালা। হঠাৎ তাদের মেয়ের সঙ্গে এমন বর্বরতার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। তাদের চোখে-মুখে উদ্বিগ্নের ছাপ স্পষ্ট। ফারিয়াকে ওসিসিতে রেখে চিকিৎসার কারণে তাদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ফারিয়ার মা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কাল রাত থেকে মেয়েকে আর দেখিনি। ওরা বলেছে এখনও মেয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। একটু সুস্থ হলে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে পারব। আমার ওইটুকু মেয়ের সঙ্গে কেন ওরা এমন করল। আল্লাহ জানে আমার মেয়েটি কবে সুস্থ হবে। যারা আমার মেয়ের সঙ্গে এমন কাজ করেছে আমি তাদের শাস্তি চাই।’ ঘটনার পরপরই ফারিয়ার বাবা নড়িয়া থানায় ধর্ষণকারী দুই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইকরাম আলী মিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই প্রথম শুনেছি এ ঘটনা। তারপর শিশুটির বাবা এসে প্রতিবেশী দুই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ইতোমধ্যেই, আমরা তদন্তে নেমেছি। অপরাধীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করা হয়েছে। তবে তারা বর্তমানে পলাতক। শীঘ্রই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরের ডামুড্যায় উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের একটি গ্রামে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের অভিযোগে একই গ্রামের তিন তরুণকে আসামি করে ডামুড্যা থানায় মামলা দায়ের করা হলেও এ ঘটনায় মূল অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায়নি। মূলত এসব ঘটনায় ধর্ষণকারীরা শাস্তি না পাওয়ায় দিন দিন নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েই চলছে বলে মন্তব্য করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। তিনি বলেন, শিশুর প্রতি সহিংসতা মাত্রাতিরিক্ত আকার ধারণ করছে। একমাত্র বিচারহীনতার অভাবেই এ ধরনের কর্মকা- বাড়ছে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক সচেতনতাও প্রয়োজন এ ধরনের ঘৃণ্য কর্মকা- এড়াতে।
×