ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী সিলেট হবিগঞ্জ

তিন মেয়র বরখাস্ত

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩ এপ্রিল ২০১৭

তিন মেয়র বরখাস্ত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ফের বরখাস্ত হলেন সিলেট, রাজশাহী ও হবিগঞ্জের তিন সিটি মেয়র। এদের মধ্যে সিলেট ও রাজশাহীর মেয়র দীর্ঘদিন আইনী লড়াইয়ে জয়লাভ করার পর রবিবার নিজ নিজ দায়িত্ব গ্রহণ করবার অল্প সময় পরই পুনরায় তাদের বরখাস্ত করা হয়। দীর্ঘ ২৩ মাস পর আদালতের রায় হাতে নিয়ে রবিবার দফতরে প্রবেশ করার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফের বরখাস্ত হয়েছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে মেয়রের পদ ফিরে পেলেও আবার বরখাস্তের আদেশ হাতে পেয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। রবিবার অফিসে বসে ৩ ঘণ্টার মধ্যেই বরখাস্তপত্র আসে তার হাতে। অন্যদিকে, দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মাথায় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছকে আবার বরখাস্ত করা হয়েছে। কারাগারে থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর গত ২৩ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণ করেন জিকে গউছ। রবিবার স্থানীয় সরকারের এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম জানান। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও বিডিনিউজের। জানা গেছে, সকালে রাজশাহীতে হৈচৈ, উত্তেজনা ও নগর ভবনের কয়েকটি কক্ষ ভাংচুরের পর তালা ভেঙ্গে দফতরে প্রবেশ করার কয়েক মিনিটের মধ্যে ফের বরখাস্ত হয়েছেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। মামলা বিচারাধীন থাকায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বুলবুলকে ফের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেয়। এরপর বুলবুল নগর ভবন ছেড়ে রবিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বাসায় চলে যান। এর আগে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ফ্যাক্সযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বুলবুলকে পুনঃবহিষ্কারের আদেশ আসে। এর আগে রবিবার সকাল থেকে ব্যাপক নাটকীয়তা ও বাধার মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত দুপুর ২টার দিকে নগর ভবনের দ্বিতীয়তলায় মেয়রের দফতরের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করেন বুলবুল। এ সময় নগর ভবনসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী নিয়ে দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে প্রবেশ করেন বুলবুল। তবে শুরু থেকেই বাধার মুখে পড়েন। নগর ভবনে প্রবেশের পর থেকেই মেয়রের দফতরে তালা ঝুলতে দেখে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযিম দফতরে তালা ঝুলিয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকায় চলে যান বলে জানান, তার একান্ত সহকারী শহিদুল ইসলাম। তবে কে বা কারা তালা দিয়েছিল তা জানা যায়নি বলে জানান নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদত হোসেন খান। ওসি বলেন, সকাল ১০টার দিকে মেয়র বুলবুল নগর ভবনে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন মেয়রের নির্ধারিত দফতরে তালাবদ্ধ। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরও প্রবেশ করতে না পেরে ওই কক্ষের পাশে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে বসেন তিনি। এ সময় সেখানে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, কে বা কারা মেয়রের দফতরের তালা দিয়ে গেছেন তিনি জানেন না। তবে বিষয়টি বিভাগীয় তদন্ত করা হবে বলে জানান। সিলেট ॥ সিটি মেয়রের পদ ফিরে পেয়ে আবার বরখাস্তের আদেশ পেয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। রবিবার অফিসে বসে ৩ ঘণ্টার মধ্যেই বরখাস্তের পত্র তার হাতে আসে। রবিবার সকালে রীতিমতো শোডাউন করে গিয়েছিলেন নগর ভবনে। বসেন মেয়রের চেয়ারে। কিন্তু মেয়রের চেয়ারে বসার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ‘দুঃসংবাদ’ আসে আরিফের জন্য। মেয়রের পদ থেকে ফের তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি কর্পোরেশন এ্যাক্ট শাখার উপ-সচিব মোঃ মাহমুদুল আলম কর্তৃক সিলেট সিটি কর্পোরেশনে একটি ফ্যাক্স বার্তা প্রেরণ করা হয়েছে। ওই বার্তায় বলা হয়েছে, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা-৪/২০০৯-এর সম্পূরক অভিযোগপত্র গত ২২ মার্চ আদালতে গৃহীত হয়েছে। সেহেতু সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে স্থানীয় সরকার বিভাগ আইন ২০০৯-এর ১২ উপধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। ওই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলাটি হচ্ছে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবদ্দশায় দিরাইয়ে একটি জনসভায় বোমা হামলার মামলা। হবিগঞ্জ ॥ দায়িত্ব গ্রহণের ১০ দিনের মাথায় হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জিকে গউছকে ফের বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার স্থানীয় সরকারের এক আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয় হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম জানান। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি হওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলায় মামলায় দেয়া সম্পূরক অভিযোগপত্র গত ২২ মার্চ গ্রহণ করেছে আদালত। জি কে গউছ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক। কারাগারে থেকেই ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি প্যারোলে মুক্ত হয়ে শপথ গ্রহণ করেন। ওই বছরের ২০ মার্চ তাকে আবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ৭৩৯ দিন কারাভোগের পর গত ৪ জানুয়ারি জামিনে মুক্তি পান মেয়র গউছ। এরপর শুরু হয় আইনী প্রক্রিয়া। গত ২৩ জানুয়ারি গউছকে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্ট। ৩০ জানুয়ারি শুনানি শেষে চেম্বার আদালতও হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখে। এরপর ২০ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় উচ্চ আদালতের আদেশ প্রতিপালনের জন্য চিঠি পাঠায়।
×