ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাফর ওয়াজেদ

যুদ্ধ এখনও হয়নি শেষ, আলেফ

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৩ এপ্রিল ২০১৭

যুদ্ধ এখনও হয়নি শেষ, আলেফ

যুদ্ধ শেষে ক্যাম্প থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে সে দেখে ঘরে খাবার নেই। স্ত্রীর পরনে ছেঁড়া শাড়ি। দুঃখ এবং ক্ষোভ তার জেগেছিল বৈকি। মনে হয়েছিল আমি কেন যুদ্ধে গেলাম। সত্যি ভাবনা বটে, কেন তার যুদ্ধে যাওয়া। ফসলি জমি, সংসার, ঘরবাড়ি ফেলে কেন সে যুদ্ধের ময়দানে নেমেছিল। শুধু সে নয়, একাত্তরে অজস্র আলেফ কাস্তে, জোয়াল, বলদ, খড়ের গাদা, গোয়াল ফেলে চলে গিয়েছিল রণাঙ্গনে। পরিবার, সংসারÑ সবকিছুর মোহ ত্যাগ করতে পারার দুঃসাহস এসে ভর করেছিল তাদের মধ্যে। তাই স্বল্প প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আলেফরা লড়াই করেছে দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষিত এক সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। রণাঙ্গন থেকে রণাঙ্গন, ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ছুটেছে, বন-বাদাড়, প্রান্তর, খাল-নদী পেরিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে শত্রু হননে হয়েছে মত্ত। পাকিস্তানী হানাদাররা তার দেশ তথা মাতৃভূমি দখল করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, মা-বোনদের ধর্ষণ, লুটপাট এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এসব ঘটনা ক্ষুব্ধ করেছে, প্রতিশোধে দৃঢ় হতে উদ্বুদ্ধ করেছে আলেফদের। সেই বর্বর হানাদারদের কবল থেকে দেশকে শুধু মুক্ত নয়, স্বাধীন স্বদেশ চেয়েছিল। দু’বেলা, দু’মুঠো খাবার জুটবে। সোনায় মোড়ানো, বাংলাকে ফিরে পাবে, বাঙালী হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেÑ আর এর জন্যই তো এত শ্রম, চাষাবাদ, লড়াই, আন্দোলন আর এই যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতিÑ আলেফরা এমনটাই ভেবেছিল। তবে এই ভাবনাটাই স্বাভাবিক। ক্ষুধার কাছে পরাজিত হতে চায় না কেউই। শ্রমজীবীর জীবনে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থানের চাওয়াটা যুদ্ধপূর্বা কাল থেকেই ছিল তীব্র। সেই চাওয়া আজও ফুরিয়ে যায়নি। যুদ্ধ আলেফদের নিয়ে গিয়েছিল অস্ত্র হাতে যুদ্ধক্ষেত্রে। যে হাতে কাস্তে দিয়ে কাটত ধান, বুনত বীজ, চালাত হাল, সেই হাতে তাদের উঠে এসেছিল স্টেনগান, এলএমজি, এসএমজি, রাইফেল ও রিভলবার। আলেফ মিয়ারা লড়াই করেছে। হানাদার পাকিস্তানীরা চেয়েছিল বাংলার মাটি, মানুষ নয়। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আলেফেরা বিধ্বস্ত সড়ক, সেতু, কালভার্ট, দগ্ধ ঘরবাড়ির দৃশ্য হয়ত দেখেছে; হয়ত দেখেনি। যুদ্ধে যে বিধ্বস্ত তার দেশ, সবটাই উপলব্ধিতে হয়ত আসেনি। আসার কথাও নয়। ছিল তারা রণাঙ্গনে। দেশের অভ্যন্তরের সব ঘটনা জানার কথা নয়। তাই বাড়ি ফিরে করুণ অবস্থা দেখে হতাশা জাগারই কথা। যুদ্ধকালে হয়ত চোখে ভাসত সোনায় মোড়ানো এক বাংলায় ফিরে যাবে জয়ের শেষে। যুদ্ধের আগেই তারা জেনেছে জনসভার ভাষণে, সত্তরের নির্বাচনী প্রচারণায়, জাতি হিসেবে বাঙালীকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’Ñ তার ব্যাখ্যাও জেনেছে। ক্ষোভ তাই তাদের মনে পুঞ্জীভূত ছিল, শেখ মুজিব সেই ক্ষোভকে জাগিয়ে তুলেছিলেন বাঙালীর মধ্যে। বাঙালী তখন থেকেই সংগঠিত হচ্ছিল। সেই বাতাস আলেফদের দেহে-মনেও ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই সাত মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা তাদেরকেও উদ্বুদ্ধ করেছিল দেশমাতৃকার ডাকে সাড়া দিতে। সাড়া তারা দিয়েছিল বৈকি। যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে হতাশ হওয়ার পরিস্থিতি স্পষ্ট করেছিল, যুদ্ধ মেরুদ- বাঁকা করে দিয়েছে। তাকে আবার সোজা করে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সময় এখন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ায় সময়। কিন্তু যুদ্ধশেষের অভাব অস্থিরতাকে প্রকটিত করেছিল। বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ‘ফেরা’ গল্পের নায়ক মুক্তিযোদ্ধা আলেফ শেষতক বাড়ির পেছনে ডোবায় তার রাইফেলটি ফেলে দিয়ে স্বগতোক্তি করেছিল, সময় মতো আবার তা ডোবায় খুঁজে তা আবার পাওয়া যাবে। তারপরই মনে হলো আবারও আমি কেন যুদ্ধে গেলাম। এই প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক। কয়েক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র নয় মাসের মাথায় যুদ্ধের পরিসমাপ্তি টানার পর পরই ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নটাকে বাস্তবে দেখতে না পাওয়ার রূঢ় কঠিন অবস্থা মেনে নিতে না পারার ঘটনা কম নয়। ‘যুদ্ধ শেষের প্রাপ্য চাই’ হিসেবে সবার চাওয়া একই রকম ছিল না। হাসান আজিজুল হকের আলেফ বরেন্দ্র অঞ্চলের জাতক। এমনিতেই অভাবী এলাকা পাকিস্তান যুগজুড়েই। অভাব তাদের তাড়া করে। আর সেই অভাবের সঙ্গেই লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। আলেফ হয়ত ভেবেছিল, যুদ্ধ শেষ, এখন খাব-দাব, শান্তিতে ঘুমাব আর কাজ করব। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, খাবার জোটানো দায়। পাকিস্তানীরা সব ধ্বংস করে গেছে। ব্যাংকের টাকা, লুটের স্বর্ণালঙ্কারসহ সব দামী জিনিস পাকিস্তানে পাচার করেছে। যুদ্ধ শেষে বিদেশী সাহায্য তেমন আসেনি। তবুও সাড়ে সাত কোটি প্রাণ প্রহরী প্রদীপ হয়ে জ্বলে থাকার প্রচেষ্টায় মগ্ন ছিল। যুদ্ধ শেষ, আর কোন যুদ্ধ নেইÑ এমনটা আলেফ হয়ত ভেবেছিল। হয়ত নয়। রাইফেলটা ডোবায় ফেলেছিল ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারব ভেবে। সামনে আবারও যুদ্ধ আসতে পারে, আবারও লড়াই করতে হতে পারেÑ এমন ভাবনাও ছিল। থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে। কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ তো শেষ হয়নি। এই যুদ্ধ চলবে সর্বত্র। কেন তারা গিয়েছিল যুদ্ধে এই যে ১৯৭১? বনে-বাদাড়ে, পাহাড়ে-পর্বতে নগরে-প্রান্তরে, খালে-বিলে, নদীতে-সাগরে, গ্রামে-গঞ্জে স্বল্প প্রশিক্ষণ নিয়ে লড়াই করেছিল শক্তিশালী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা। রণাঙ্গনে যাবার উত্তরও জানা ছিল তাদের। লক্ষ্যও ছিল স্থির, অবিচল। চেয়েছিল স্বাধীনতা। স্বাধীনতা মানে জাতি হিসেবে বাঙালীর মুক্তি। আর এ চাওয়ার বিষয়টি হঠাৎ করে আসেনি। আকস্মিক আসার কোন কার্যকারণ বা সম্ভাবনা ছিল না কোনভাবেই। ধাপে ধাপে, পর্ব থেকে পর্বান্তর পেরিয়ে একটি চূড়ান্ত লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল জাতি। ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন, সংগ্রাম, লড়াই, জেল-জুলুম, হুলিয়া, নির্যাতন, রাজপথে আত্মদান পেরিয়ে বাঙালী স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনে ক্রমাগত প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাঙালী স্বাধীনতা তখনই চেয়েছে, যখন তার মনোজগতে বিষয়টিকে প্রবিষ্ট করানো হয়। বাঙালীকে সংগঠিত করার কাজটি দশকের পর দশক পেরিয়ে আড়াই দশকের মাথায় চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করেছিল একাত্তরেরই শেষার্ধে। আরও আগে ১৯৪৭ সালে যে স্বাধীনতা এসেছিল, তাতেও ছিল বাঙালীর অংশগ্রহণ। ঢাকার নবাবদের প্রতিষ্ঠিত দলটি বাঙালীকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সেই স্বপ্নের তোড়ে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলা ভাগ হয়েছিল। ইতিহাস এ নিয়ে সে সব সাক্ষ্য দেয়। তার নানান পিঠে রয়েছে নানান মুদ্রার ছাপ। সেই ছাপটিতে রয়েছে বাঙালীর প্রাণের পতাকাধারী বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তান হওয়ার পর পরই শেখ মুজিবের মতো বাঙালী অন্তঃপ্রাণ বুঝতে পেরেছিলেন, ব্রিটিশরা গিয়েছে, উপনিবেশ শেষ হয়েছে। কিন্তু নব্য উপনিবেশবাদীর কবলে পড়েছে দেশ এবং শোষিত হওয়া ছাড়া তার প্রাপ্তি নেই আর কিছু। শেখ মুজিব সেই থেকে তার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। জাতিগত প্রশ্নের মীমাংসা যে সহজে হবে না শেখ মুজিব তখনই তা বুঝেছিলেন। বাঙালী নামক জাতি দীর্ঘদিন পরাধীনতায় বসবাসের কারণে ক্রমশ দুর্বলচিত্তের হয়ে উঠেছিল দাসত্ব মানসিকতা আর অধীনতায় জাতিটির মানসিক বিকাশে ঘাটতি রয়ে যায়। ধারণাও করতে পারেনি, তারা কোনদিন স্বাধীন সত্তা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। সেই জাতির বিরুদ্ধে পাকিস্তানী শাসকচক্রের চরম নির্যাতনকে রুখতে বাঙালী জনগণ ব্যাপকভাবে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়েছিল। বিশ্ববাসী অবাক হয়েছিল, বাঙালীর উত্থানে। স্বাধীনতার লড়াই হয়ে উঠেছিল রক্তক্ষয়ী। রক্ত দিয়ে বাঙালী লিখেছে বাংলাদেশের নাম। আলেফরাও জেনেছিল, একাত্তরের ছাব্বিশে মার্চ শেখ মুজিবের সেই সর্বশেষ ঘোষণা, ‘আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, বাঙালী সেদিনই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দখলদার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা অর্জন করার ব্যাপারটি সামান্য ছিল না। প্রাণ দিতে হয়েছে। দুর্ভোগ যা সহ্য করতে হয়েছে, তা অপরিমেয়। কিন্তু আরাধ্য অর্জন হয়েছে। প্রায় লাখখানেক পাকিস্তানী শত্রু সেনা তাদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়েই আত্মসমর্পণ করেছে। এরাই সশব্দে লুটপাট করেছে, বিশেষ করে নয় মাসে। তাদের সহযোগীরাও লুটপাট চালিয়েছে। আলেফরা বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দেখে চমকে গিয়েছিল বৈকি। স্বাধীন দেশে ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের সঙ্গে যে যুদ্ধ লড়াই করতে হবে, এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। প্রথমে বুঝতে পারেনি। বাঙালীর আশা, বাঙালীর স্বপ্ন সঞ্চারিত হতে থাকে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে। কিন্তু পদে পদে আসে বাধা। একাত্তরে জাতি চিহ্নিত করতে পেরেছিল কে তার শত্রু, কে তার মিত্র। কিন্তু সেই শত্রুকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা যায়নি। স্বাধীনতার পর পরই শত্রুরা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় তৎপর হয়ে ওঠে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আরও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। তথাপি জাতির পিতা যথাসাধ্য শ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ব্রতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত, কিন্তু পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র দৃশ্যপটে আবির্ভূত হয়, তাদের হাতেই উত্থান ঘটে একাত্তরের পরাজিত শক্তির। গর্ত থেকে, পলাতক ভুবন থেকে তারা একে একে বেরিয়ে আসে। আলেফদের জীবন হতে থাকে বিপন্ন। কিন্তু আলেফ ডোবা থেকে তার রাইফেলটি তুলে এনেছিল কি না, শত্রু হননে ব্যবহার করেছিল কি-না, তা জানা যায় না। একুশ শতকের বাংলাদেশে আতঙ্কের এক অচেনা চিত্র হতভম্বিত করেছে এ দেশবাসীকে। নারকীয় এমন ঘটনা যে ঘটবে, ঘটতে পারে, এমনটা সাধারণের মনে হয়েছে, তা নয়। তবে গুপ্তহত্যার ভয় এখনও কাটেনি। হন্তারকচক্র এক গভীর ষড়যন্ত্রকে সামনে রেখে যা করছে, তা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জনগণের জন্য সহ্যাতীত। হত্যাকারী খুনী চক্র কেউই ধর্মবিদ নয়, হলে রমজানের মতো পবিত্র মাসে ধর্মে নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও মানুষকে বিনা অপরাধে নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারত না। কোন ধর্মই হত্যাকা- সমর্থন করে না। আজ এরা তো নিরপরাধী স্বদেশী-বিদেশী মানুষ হত্যা করছে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা আসলে কী প্রকাশ করছে? সন্ত্রাস ও জঙ্গীপনার মাধ্যমে এই যে তারুণ্য খুনীতে পরিণত হলো, তার উদ্দেশ্য ও বিধেয়মালা রয়েছে। এই যে বয়স, এ বয়সে নিজেদের দ্বারা পরিচালিত হওয়া অনেকের পক্ষেই যায় নাÑ মনস্তাত্ত্বিকরা এমনটা মনে করেন। এই যে হত্যাকারীরা, এরা কারও দ্বারা পরিচালিত, কারও স্বার্থ হাসিল করছে, তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিল করছে। এদের পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। এর বাইরেও পেশাজীবীদের মধ্যেও এদের সমর্থক রয়েছে। যারা খুনী হতে চায়। খুনী হওয়ার অধিকার কী মানুষের আছে? যুদ্ধক্ষেত্রে পরস্পর শত্রুপক্ষ হত্যাকা- ঘটিয়ে থাকে। যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করা যায় না। নারী, শিশুকে হত্যা করা যায় না। এসব নানা বিধিবিধান রয়েছে। কিন্তু গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে সশস্ত্র হামলা চালানোর নেপথ্যে স্বার্থ তো রয়েছেই। খুনীদের স্বার্থ বোঝা যায়, কারণ তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু যারা নয়, তাদের মদদ শতভাগ এদের পেছনে এবং খুনীরা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য খুন করে আসছে। আলেফ জানে, হয়তো জানে না, যুদ্ধ তার এখনও শেষ হয়নি। এই যুদ্ধে লড়াই করার দায়িত্ব বর্তেছে তার উত্তরসূরিদের ওপর। মুক্তিযোদ্ধারা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। প্রতিদিন পত্রিকায় শোক সংবাদে চোখ রাখলেই পাওয়া যায় মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যু সংবাদ। আলেফরাও একে একে চলে গেছেন পরপারে। রেখে গেছেন যুদ্ধ জয়ে অর্জিত দেশ। যে দেশে যুদ্ধ আজও থামেনি। একাত্তরের পরাজিত শক্তির উত্তরসূরিরা জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হিসেবে আবার বাংলার মানুষকে হত্যা করছে, দেশকে ধ্বংস করছে। কিন্তু বীরের জাতির তকমাধারী বাঙালী তা বেশি দিন সহ্য করবে না। একাত্তরের যুদ্ধজয়ের পথ ধরে বাঙালীকে জঙ্গী, সন্ত্রাসমুক্ত দেশের জন্য লড়াই অব্যাহত রাখতেই হবে। দেশজুড়ে ঘাতকেরা ঘুরে বেড়াবেÑ তা বাঙালী মেনে নিতে পারে না। যুদ্ধ তাই তার অব্যাহত প্রতি পদে পদে আজ। আলেফ, জেনে রাখ, যুদ্ধ এখনও হয়নি শেষ। চলছে, চলবে।
×