ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাই আরও বিনোদন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৩ এপ্রিল ২০১৭

চাই আরও বিনোদন কেন্দ্র

রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকা তার জনসংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে বহু বছর আগেই। এখন পৌনে দু’-কোটি লোকের এই মহানগরীতে মানুষের গায়ে গা লাগার মতো দশা। ভুলে গেলে চলবে না মানুষই একমাত্র প্রাণ যার বেঁচে থাকা তথা সুস্থ থাকার জন্য শুধু খাদ্য গ্রহণ করলেই চলে না, মনের আহারও চাই তার। সে জন্য মানুষ নিজে কিছু সৃষ্টি করে, তা না হলে অন্যের সৃষ্টি উপভোগ করে। তার চাই নির্মল বিনোদন। এই আনন্দ উপভোগ আবার ঠিক ঘরে বসে পুরোপুরি লাভ করা যায় না। যদিও আধুনিক যুগ তার হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে নানা বিনোদনের অজস্র উপকরণ ও সম্ভার। তবু তার চাই ঘরের বাইরে যাওয়া, দল বেঁধে বিনোদন লাভ করা। ঢাকা মহানগরীতে মানুষের তুলনায় বিনোদন কেন্দ্রের বিরাট ঘাটতি রয়েছে। তাই হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্রে দলে দলে মানুষ ভিড় জমায়। আর এই ভিড়ের ফলে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে আনন্দদায়ক স্থানগুলো। সেক্ষেত্রে কি আর নিরবচ্ছিন্ন আনন্দ লাভ সম্ভব? না, সম্ভব নয়। প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্রেরই একটি নির্দিষ্ট ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। উপচে পড়া মানুষের ভিড়ে সম্ভব নয় সুস্থভাবে বিনোদন লাভ করা, মনের চাহিদাকে তৃপ্ত করা। বিভিন্ন ছুটিছাটায় আমরা তাই দেখতে পাই চিড়িয়াখানা, শিশু পার্কর মতো অতিচেনা ও অতিপুরনো বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। অবশ্য মানুষ বাধ্য হয়ে বিকল্প পথও খুঁজে নিচ্ছে। বিনোদনপ্রিয় মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসও। পছন্দের বিনোদন স্থানের তালিকার শীর্ষে রয়েছে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, জাতীয় জাদুঘর, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ধানম-ি লেক, রমনা পার্ক, আহছান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর, স্মৃতিসৌধ এবং নান্দনিক স্থাপন-হাতিরঝিল। হাতিরঝিলকে ঢাকার আইকন হিসেবে গড়ে তোলার কথা শোনা যাচ্ছে। এখানে একটি উন্নতমানের কনভেনশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। অত্যাধুনিক অপেরা হাউসও নির্মাণ করা হচ্ছে। হাতিরঝিলের উন্মুক্ত মঞ্চটির নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন গণপূর্তমন্ত্রী। ঢাকাকে বিশেষভাবে পরিচিত করতে হাতিরঝিলে লন্ডন আই বা সিঙ্গাপুরের মতো একটি স্থাপনা নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান সরকারের। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, নিকট অতীতে হাতিরঝিল রাজধানীবাসীর কাছে বিশেষ পছন্দের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে সুখ্যাতি পেয়েছে। ওয়াটার ট্যাক্সি চালুর পর এর আকর্ষণও বেড়েছে। ঢাকার ভেতরে এলাকাভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্রের কথা ভাবতে হবে। কেননা যানজটের কারণে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলের বিনোদন কেন্দ্রে যাওয়া বড় ঝক্কির ব্যাপার। ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত দিয়াবাড়ী এখন ভ্রমণপিপাসুদের কাছে প্রিয় একটি নাম। শরতে কাশবনের সৌন্দর্য দেখতে এই দিয়াবাড়ীতে মানুষের ভিড় লেগে থাকে। শনিবার জনকণ্ঠে ঢাকাবাসীর জন্য নতুন একটি বিনোদন কেন্দ্রের ধারণা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) খালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে, দু’পাশে পরিবেশ উপযোগী গাছ লাগিয়ে ও যথাযথ পরিচর্যার মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলে বিনোদনপিয়াসী মানুষের বিনোদনের একটি স্পট তৈরি হতে পারে বলে এলাকাবাসী মনে করছেন। অবশ্য খালটি দীর্ঘকাল অযতœ-অবহেলায় করুণ দশায় পতিত হয়েছে। তবু সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিলে এটিও হতে পারে হাতিরঝিলের মতো অনুপম একটি বিনোদন কেন্দ্র। নতুন আইডিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী যদি এগিয়ে আসেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাইসাপেক্ষে নতুন বিনোদন কেন্দ্র স্থাপনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
×