ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুসিক নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৩ এপ্রিল ২০১৭

কুসিক নির্বাচন

একই দিনে দুটো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনের বিষয়টি দেশবাসীর নজর কেড়েছে বেশি। এর অবশ্য যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। এর একটি হলো উপনির্বাচন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের। স্বনামখ্যাত পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রয়াণে আসনটি শূন্য হয়। আর সে স্থলে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসেন তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা। অন্যদিকে, কুসিক নির্বাচনটি ছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচন। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সর্বদাই উৎসাহ-উদ্দীপনা এমনকি উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কুসিক নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। সর্বোপরি এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়েছে কুসিক নির্বাচন। সে অবস্থায় ধানের শীষ বনাম নৌকা যে এহেন নির্বাচনে যোগ করবে বাড়তি উত্তেজনা, তা বলাই বাহুল্য। ফলে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি উভয়ের জন্যই এটি ছিল মর্যাদার লড়াই, সেহেতু মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনাও। তবে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের মাধ্যমে শেষ হয়েছে কুসিক নির্বাচন। কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্নভাবে জাল ভোটের অভিযোগসহ ভোট গ্রহণ স্থগিতের খবর থাকলেও সার্বিকভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে তার কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। তার বিপরীত ১১ হাজার ৮৫ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আঞ্জুুম সুলতানা সীমা। অন্য সব নির্বাচনের মতোই কুসিক নির্বাচনের পরও বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নিয়ে নানা মন্তব্য ও বিশ্লেষণ চলছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দলীয় কোন্দলের কারণেই তাদের প্রার্থী হেরেছেন। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্বাচন ‘আনফেয়ার’ তবে ফল ‘ফেয়ার’। এখানে একটি কথা না বললেই নয়। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিএনপি যে কোন নির্বাচনী ফলকেই বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস পায়, এমনকি নির্বাচনী ফল তাদের অনুকূলে গেলেও। এখানে মনে রাখতে হবে, নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছে। অতঃপর এবার যখন কুসিক নির্বাচনে তাদের প্রার্থী জিতেছে, তখন বিএনপি বলছে, নির্বাচন ‘ফেয়ার’ হলে তাদের প্রার্থী আরও বেশি ভোট পেত। এখানে বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, বিএনপি প্রার্থী কুসিকের সিটি মেয়র এবং গত নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে এবার তার ভোট কমেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট বেড়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় বলা যায়, কুসিক নির্বাচনে ধানের শীষ জেতেনি, নৌকাও হারেনি, বরং বিজয়ী হয়েছে নির্বাচন ও গণতন্ত্র। নির্বাচনী ফল উভয় প্রার্থীই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মেনে নিয়ে যে ঔদার্য দেখিয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসার্হ। নির্বাচিত মেয়র বলেছেন, তিনি দলমত-নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান। অন্যদিকে বিজিত প্রার্থীর অভিনন্দন জানানোর বিষয়টিও উল্লেখের দাবি রাখে বৈকি। আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়। মেয়র হিসেবে বিএনপি প্রার্থী জিতলেও অধিকাংশ কাউন্সিলর পদে জিতেছেন নৌকার প্রার্থীরা। এটিও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের একটি বৈশিষ্ট্য বটে। বর্তমান সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব এই নির্বাচন তাও প্রমাণ করেছে। কুসিক নির্বাচন ছিল বর্তমান নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, অগ্নিপরীক্ষাও বটে। তাতে তারা সফলভাবেই উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে নির্বাচনে ভোটদানে ভোটারদের অনীহাও পরিলক্ষিত হয়েছে। কুসিক নির্বাচনে দুই লাখেরও কিছু বেশি ভোটারের মধ্যে প্রায় এক লাখ ভোটার ভোট দিতে যাননি। বিগত কুসিক নির্বাচনের চেয়ে এবারের নির্বাচনে ১১ দশমিক ২ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। অথচ জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার বেশি হয়ে থাকে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা, স্থানীয় রাজনৈতিক কোন্দল, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত-আধিপত্যÑ যা-ই ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার জন্য দায়ী হোক না কেন, আগামীতে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রমুখী করাই হবে নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব।
×