ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রেক্সিট পরবর্তী চুক্তিতে ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরিগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা

জিব্রাল্টার নিয়ে আপোস নয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ৩ এপ্রিল ২০১৭

জিব্রাল্টার নিয়ে আপোস নয়

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ব্রেক্সিট আলোচনাকালে জোর দিয়ে বলেছেন, কষাকষি চলবে না। ইইউ বলেছে, জিব্রাল্টার নিয়ে কারও কোন কিছু বলার থাকলে সেটা স্পেন বলবে। এরপরই বরিস জনসন এ কথা বলেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী কোন চুক্তি ব্রিটিশ উপনিবেশ জিব্রাল্টারের ওপরও প্রযোজ্য হবে কি না, শুক্রবার তা নির্ধারণে স্পেনকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ। এতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জিব্রাল্টারের মুখ্যমন্ত্রী ফাবিয়ান পিকার্ডো। খবর এএফপির। জনসন সানডে টেলিগ্রাফে লিখেন, ‘জিব্রাল্টার বিক্রির জন্য নয়। জিব্রাল্টার ব্যবসা হতে পারে না। জিব্রাল্টার নিয়ে দরকষাকষি করা যাবে না।’ ইইউ প্রস্তাব দিয়েছে, ইইউ ও ব্রিটেনের মধ্যে কোন চুক্তি নেই। ব্রিটেন ও স্পেনের মধ্যে চুক্তি ছাড়া জিব্রাল্টারের বিদেশী অঞ্চল এই চুক্তি নিয়ে আবেদন করতে পারে। স্থানীয় বিরোধী দলের নেতারা বলেছেন, ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনের যে কোন বাণিজ্য চুক্তি আলোচনায় জিব্রাল্টার নিয়ে বাগ্রা দিতে পারে মাদ্রিদ। ব্রিটিশ বিদেশী অঞ্চল আশঙ্কা করছে, মাদ্রিদ জিব্রাল্টার নিয়ে সার্বভৌমত্ব চাইতে পারে। জনসন জোর দিয়ে বলেছেন, সরকারের নীতি ‘স্থায়ী ও দৃঢ় থাকবে’। জিব্রাল্টারের জনগণ ও যুক্তরাজ্যের সম্মতি ছাড়া জিব্রাল্টারের সার্বভৌমত্ব পরিবর্তন করা যাবে না। ১৭১৩ সালের পর থেকে জিব্রাল্টারের অবস্থা অপরিবর্তনীয় রয়েছে। ১৯৭৩ সালে যখন কমন মার্কেটে যুক্তরাজ্য যোগ দেয় এতে কোন ভিন্নতা তৈরি হয়নি এবং তখন স্পেন এটার সদস্য ছিল না। আজও এটার কোন ভিন্নতা তৈরি করা উচিত না। স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তের ৬.৭ বর্গকিলোমিটারের জায়গাটি রক অব জিব্রাল্টার নামে পরিচিত। দ্বীপটি ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরির মর্যাদা ভোগ করছে। সেখানে প্রায় ৩৩ হাজার মানুষের বসবাস। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রনিক জুয়া শিল্প ও অফশোর ফিন্যান্স সেক্টর আছে যা পুরো ইউরোপের সঙ্গে চুক্তি করে। জিব্রাল্টারের নেতা ফাবিয়ান পিকারডো শুক্রবার ইইউর প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটি অপ্রয়োজনীয় ও বৈষম্যমূলক। এক বিবৃতিতে পিকারডো বলেন, সংকীর্ণ ও রাজনৈতিক স্বার্থে নিজের জন্য ইউরোপিয়ান কাউন্সিলকে ব্যবহার করা এটি একটি অপমানজনক প্রচেষ্টা করেছে স্পেন। জিব্রাল্টারের নাগরিকরা ব্রিটেনে থাকতে চায়। ২০০২ সালে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্পেনের সঙ্গে সার্বভৌমত্ব ভাগের ওপর ও যখন তারা একটি গণভোট প্রত্যাখ্যান করে। জিব্রাল্টার বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রণালী হিসেবে পরিচিত। এটি আটলান্টিক মহাসাগরকে ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এর পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর আর পূর্বে ভূমধ্যসাগর। এছাড়া এর উত্তরে রয়েছে স্পেন এবং রক অব জিব্রাল্টার আর দক্ষিণ দিকে রয়েছে মরক্কো এবং উত্তর আফ্রিকা। বিমান আবিষ্কারের আগে আটলান্টিক আর ভূমধ্যসাগরের মাঝে প্রায় সকল ব্যবসায়িক যোগাযোগ হতো এই প্রণালীর মাধ্যমে। বর্তমানেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য এই প্রণালী গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসা নয় ভিন্নধর্মী সব সংস্কৃতিকেও এক করেছে এই জিব্রাল্টার প্রণালী। উত্তরে ইউরোপী ও খ্রিস্টান সংস্কৃতি আর দক্ষিণে মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশগুলোর ইসলামী সংস্কৃতি। কয়েক দশক ধরেই চোরাচালান ও সার্বভৌমত্বসহ বেশকিছু বিষয় নিয়ে জিব্রাল্টার ও স্পেনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ২০১৩ সালে জলসীমা নিয়ে সৃষ্ট বিবাদ মেটাতে ইইউ হস্তক্ষেপ করেছিল। ব্রিটেন ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে এলে ধরনের বিবাদ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে জিব্রাল্টারকে ফের স্পেনের অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহী স্প্যানিশ সরকার ইইউর এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকারের মুখপাত্র ইনিগো মেন্দেজ দে ভিগো সাংবাদিকদের জানান, স্পেন যে আইনী রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে, ইইউ তার স্বীকৃতি প্রদান করায় স্প্যানিশ সরকার সন্তুষ্ট। তবে পিকার্ডো মনে করেন, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্পেন ইউরোপিয়ান কমিশনকে এ সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছে।
×