ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দীর্ঘদিন একই বিভাগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৩ এপ্রিল ২০১৭

দীর্ঘদিন একই বিভাগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নর ও দুই ডেপুটি গবর্নর চাকরি হারিয়েছেন। ছয়জন মহাব্যবস্থাপকের দফতর পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এখনও বহাল তবিয়তে আছেন কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক ও নির্বাহী পরিচালক। তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা। আইন ও নীতিমালার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর তারা একই বিভাগে কর্মরত আছেন। জানা গেছে, গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় হ্যাকাররা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গবর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। একই দিন ডেপুটি গবর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। নতুন গবর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফজলে কবির বাংলাদেশ ব্যাংকে রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর কিছু দিন আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর কথা বলেছিলেন। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা স্বাস্থ্যকর নয়। এর বিভিন্ন সিস্টেমের বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। ফজলে কবিরের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের মে মাসে ছয়জন মহাব্যবস্থাপককে রদবদল করা হয়। তারপরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বেশ কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক। রিজার্ভ চুরির ঘটনার পর মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে নির্বাহী পরিচালক করা হয় এক কর্মকর্তাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কর্মকর্তা এক বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সর্বোচ্চ ৩ বছর। কিন্তু ৫ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ ও ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি বিভাগের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। এরমধ্যে মাসুদ বিশ^াস একই বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় সাড়ে ৫ বছর ধরে। সম্প্রতি তার অফিস কক্ষে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৮০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়। এছাড়া রিজার্ভ চুরির কিছুদিন পরেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে নির্বাহী পরিচালক করা হয়। যিনি কোনভাবেই রিজার্ভ চুরির দায় এড়াতে পারেন না। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠে ওই সময়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, রদবদলের ঘোষণা দিয়ে ওইসব কর্মকর্তাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে সরানো সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন গর্বনর যোগদান করার পর যারা দীর্ঘদিন ধরে একই বিভাগে ও পদে রয়েছেন তাদের একটি লম্বা তালিকা করা হয় বদলি ও বিভাগ পরিবর্তন করার জন্য। ওই তালিকায় এসব কর্মকর্তারও নাম ছিল। তবে অজানা কারণে তাদেরকে আর বদলি করা হয়নি। এতে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে অন্য কর্মকর্তাদের মাঝে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বদলির বিষয়ে ২০০০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শেখ আব্দুল আজিজ স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে: আন্তঃবিভাগীয় বদলির ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা অর্থাৎ পরিদর্শন বিভাগে ৫ বছর এবং অন্যান্য বিভাগে ৩ বছরের বেশি সময় থাকা যাবে না। কিন্তু এই মহাব্যবস্থাপকদের ক্ষেত্রে এই নীতিমালার প্রয়োগ কেন করা হচ্ছে নাÑ এই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন একই পদে থাকায় সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাজে স্থবিরতা চলে এসেছে। এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক বলেছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে যদি নিয়ম কানুন সঠিকভাবে প্রতিপালন করা না হয় তাহলে কিভাবে সরকারী বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক পরিচালনার দিক নির্দেশনা দেবে সংস্থাটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
×