ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ ড্র, দ্বিতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মাশরাফিদের হার ৭০ রানে

ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ জেতা হলো না বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২ এপ্রিল ২০১৭

ব্যাটিং বিপর্যয়ে সিরিজ জেতা হলো না বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজ ড্রই হয়ে গেল। তৃতীয় ওয়ানডেতে ৭০ রানে হারল বাংলাদেশ। আর তাতে করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ ড্র হলো। আগে ব্যাট করে কুশল মেন্ডিসের ৫৪, থিসারা পেরেরা ৫২, উপুল থারাঙ্গার ৩৫, গুনাথিলাকার ৩৪ ও গুনারতেœর ৩৪ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৮০ রান করে শ্রীলঙ্কা। মাশরাফি বিন মর্তুজা ৩টি ও মুস্তাফিজুর রহমান ২টি উইকেট নেন। জবাবে সাকিব আল হাসানের ৫৪ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৫১ রানে ২১০ রান পর্যন্ত যেতে পারে বাংলাদেশ। ৪৪.৩ ওভারে গুটিয়ে যায় মাশরাফিবাহিনী। নুয়ান কুলাসেকারা একাই ৪ উইকেট নেন। সুরঙ্গ লাকমাল, দিলরুয়ান পেরেরা ও সেকুগে প্রসন্ন ২টি করে উইকেট নেন। শ্রীলঙ্কার সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর টস জিতে বাংলাদেশ। তাও আবার নেয় ফিল্ডিং। অথচ প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করেই জিতেছিল বাংলাদেশ। আর তাই প্রশ্নও ওঠে, কেন বাংলাদেশ টস জিতে ফিল্ডিং নিল? টস জেতার পর ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত জানানোর সঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি জানান, ‘শেষ দুইদিনে বৃষ্টি ছিল। আবার উইকেটে সামান্য গ্রাসও আছে। দ্রুতই সুইং মিলতে পারে। এমন উইকেটে ২৫০-২৭০ রান আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য ঠিক আছে।’ মাশরাফির কথার সঙ্গে একমত হয়েছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গাও। বলেছেন, ‘আমরাও টসে জিতলে ফিল্ডিংই নিতাম।’ কিন্তু উইকেট বোঝার সঙ্গে আগে ফিল্ডিং করলে গরমে যে বারোটা বেজে যাবে ফিল্ডারদের সেটাও মাথায় রাখার কথা। মাশরাফি বোঝাতে চেয়েছেন, ২৭০ রান হলেও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ম্যাচ বের করে নিতে পারবে। কিন্তু হয়েছে আরও ১০টি রান বেশি। সেই রান বাদ দেয়া যাক। ২৭০ রানই তো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুরুতে ১১ রানের মধ্যেই বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। বুড়ো নুয়ান কুলাসেকারা তামিম ইকবাল ও সাব্বির রহমান রুম্মনকে সাজঘরে ফেরান। ১১ রানের সময় লাকমাল মুশফিকুর রহীমকেও যখন আউট করে দেন, তখন বাংলাদেশ বিপাকে পড়ে যায়। তখনই বোঝা হয়ে যায়, বিপত্তি ঘনিয়ে এসেছে। এরপর সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসান মিলে দলকে একটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ৮৮ রান হতেই দিলরুয়ান পেরেরার বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য (৩৮)। গরমে ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং করতে সমস্যা হচ্ছিল। তা বোঝাই যাচ্ছিল। একটা সময় তো সাকিব মাটিতেই লুটিয়ে পড়েন। সৌম্য আউটের পরও হাল ধরেন সাকিব। ১১১ রানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও যখন প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তখনও ভরসা থাকে। সাকিব যে উইকেটে ছিলেন। সেই সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজও ছিলেন। কিন্তু আর ৭ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই ৫৪ রান করা সাকিবও যখন দিলরুয়ানের বলে আউট হয়ে যান তখন জেতার স্বপ্নই যেন শেষ হয়ে যায়। বাকিটা সময় যেন হারের ব্যবধান কত কমানো যায়, সেই তাড়নাই থাকে। ১২৭ রানে গিয়ে যখন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও অসহায় আত্মসমর্পণ করেন, তখন বাংলাদেশের হার যেন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তখন টস জিতে যে আগে ফিল্ডিং নেয়া হয়েছে, সেটিই কাল হয়ে দাঁড়ায়। আগে ব্যাটিং নিলে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা ভাল করতে পারলে জেতার সম্ভাবনা থাকত। যদি শ্রীলঙ্কার মতো স্কোর করত বাংলাদেশ তাহলে চাপে রাখা যেত। কিন্তু আগে ফিল্ডিং নেয়াতে বিপদ এসেছে। প্রথমত শ্রীলঙ্কা স্কোরবোর্ডে মজবুত রান করে ফেলেছে। উল্টো চাপে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয়ত গরমে ফিল্ডিং করার পর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে। যেটি ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলেছে। তাতে করে বাংলাদেশের হারও হয়েছে। ১২৭ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাশরাফি মিলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ১৫৫ রান পর্যন্ত এগিয়েও যান। কিন্তু এইসময় মাশরাফি আউট হয়ে যান। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরাই যেখানে কিছু করে দেখাতে পারেননি, সেখানে নিচের সারির ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে আর কত রান জমা করতে পারবেন। এরপরও শেষদিকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন মিরাজ। ৫১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তাসকিন আহমেদকে (১৪) নিয়ে এগিয়েও যেতে থাকেন। তাতে আফসোসও বাড়ে। যদি শুরুর দিকের ব্যাটসম্যানরা কিছু করে দেখাতে পারতেন। তাহলে ম্যাচটি হয়ত জিততেও পারত বাংলাদেশ। ২০৯ রানে মিরাজ আউটের পর আর ১ রান যোগ হতেই তাসকিনের আউটের মধ্য দিয়ে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। হারও নিশ্চিত হয়ে যায়। দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো তৃতীয় ওয়ানডেতেও বাংলাদেশ বোলাররা নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। আর তাতে করে ২৮০ রান করে বসে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য শুরুতে যেভাবে খেলছিলেন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা, তাতে মনে হয়েছে ৩০০ রান করে ফেলবে। প্রথম ওয়ানডেতে হারের যন্ত্রণা আছে লঙ্কানদের। আছে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩১১ রান করেও ম্যাচ শেষ করতে না পারার আফসোস। আর তৃতীয় ওয়ানডেতে তো সিরিজ বাঁচানোর তাড়নাই ছিল। অসম চাপ ছিল। সব চাপকে যেন একদিনে জয় করে ফেলল শ্রীলঙ্কা। ব্যাট হাতে দাপুটে শুরুই করেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা ও উপুল থারাঙ্গা। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হন দু’জন। দলকে দারুণ সূচনাও এনে দেন। উদ্বোধনী জুটিতে ৭৬ রান যোগ করেন তারা। এ সময় শুরুতে একবার নতুন জীবন পাওয়া গুনাথিলাকাকে (৩৪) নিজের শিকারে পরিণত করেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার মেহেদী হাসান মিরাজ। কিছুক্ষণ পর তাসকিন আহমেদ ফিরিয়ে দেন ৩৫ রান করা শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গাকেও। খুব একটা বিপদে পড়তে হয়নি স্বাগতিকদের। এখান থেকে দলের হাল ধরেন পরিত্যক্ত হওয়া দ্বিতীয় ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান কুশল মেন্ডিস। তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন দিনেশ চান্দিমাল। তবে এদিন বেশি সময় উইকেটে থাকতে পারেননি চান্দিমাল। ২১ রান করে অদ্ভুত রান আউটের শিকার হয়ে থামতে হয় তাকে। মিলিন্দা সিরিবার্ধনেও টিকতে পারেননি। ১২ রান করে থামেন তিনি। তবে আসেলা গুনারতেœকে নিয়ে আরও কিছুটা পথ পাড়ি দেন কুশল মেন্ডিস। এর মাঝে মেন্ডিস তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম হাফ সেঞ্চুরি। ৫৪ রান করা মেন্ডিজকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। গুনারতেœর ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান। তবে শেষটা রাঙিয়েছেন থিসারা পেরেরা। পেরেরার ঝড়ের মুখেই পড়তে হয় বাংলাদেশের বোলারদের। ৩৭ বলেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে চার ও এক ছয়ে ৫২ রান করেন লঙ্কান অলরাউন্ডার। শেষ মুহূর্তে থিসারা পেরেরার এমন ব্যাটিংয়ে দল দ্রুতই ২৮০ রানের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এই রান শ্রীলঙ্কাকে ম্যাচে জয়ও এনে দেয়। সিরিজও ড্র হয়ে যায়।
×