ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সীতাকুণ্ডে জাহাজের পরিত্যক্ত তেল শোধিত হিসেবে বিক্রি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২ এপ্রিল ২০১৭

সীতাকুণ্ডে জাহাজের পরিত্যক্ত তেল শোধিত হিসেবে বিক্রি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সীতাকুণ্ডে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড থেকে জাহাজের পরিত্যক্ত তেল বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে শোধিত তেল হিসেবে। মূলত এ তেলের সঙ্গে বিভিন্ন তেল কোম্পানির জ্বালানি তেল মিশিয়ে পুনরায় জাহাজে চোরাইভাবে সরবরাহসহ খুচরা তেলের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফৌজদারহাটের সিলিমপুর থেকে সীতাকু-ের মাদাম বিবিরহাট পর্যন্ত ১৫টির বেশি অবৈধ তেল ডিপোতে এ ধরনের কারসাজি চলছে। জেলা পুলিশের ছত্রছায়ায় এ ধরনের অপরাধ চলে আসছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এছাড়া পুকুর ও জলাশয় এ ধরনের দূষিত তেলে সয়লাব হওয়ার অভিযোগও উঠেছে। অথচ পুলিশের বিভিন্ন টিম রাতের আঁধারে এ সমস্ত স্পটে এসে অর্থ কালেকশনের পাশাপাশি অবৈধদের উৎসাহিত করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। প্রশ্ন উঠেছে, অবৈধ এসব তেলের ডিপোতে কিভাবে যমুনা অয়েলের শোধনকৃত অক্টেন, পেট্রোল ও ডিজেল যাচ্ছে ভাউজারে করে। পরিবেশ অধিদফতর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা এ ধরনের অবৈধ তেলের ডিপোর বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ারও নজির নেই। এমনকি পরিবেশ অধিদফতরের অসাধু পরিদর্শকের অর্থবাণিজ্যের কারণে একদিকে পরিবেশের হানিসহ এলাকার পুকুর-জলাশয় পোড়া তেলে দূষিত হচ্ছে। ফলে পুকুর- জলাশয়ের মিষ্টি পানির মাছের প্রজনন বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া অবৈধ এসব তেলের ডিপো যারা পরিচালনা করছে তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ বিভিন্ন তেল শোধনাগার প্রতিষ্ঠানের ভাউজার তাদের সঙ্গে আঁতাত করেই পরিশোধিত তেল সরবরাহ করছে। এমনকি জাহাজের পোড়া তেলের সঙ্গে পরিশোধিত তেল মিশ্রণের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এসব ডিপো থেকে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকরাও অবৈধ এসব তেলের ডিপোর বিপরীতে মাসোয়ারা নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ, অবৈধ এ তেল ব্যবসার যেমন নীতিগত কোন ভিত্তি নেই তেমনি পরিবেশ ও বিস্ফোরক অধিদফতরের ছাড়পত্রও নেই। তবে পরিবেশ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তার কারণে বছরের পর বছর এ ধরনের তেলের ডিপো অবৈধভাবে গড়ে উঠছে। গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের আরডিসি ও সীতাকু-ের এসিল্যান্ড অবৈধভাবে ভূমিতে গড়ে ওঠা এ ধরনের তেলের ডিপোর বিপরীতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করার ঘটনা ঘটেছে। মাদাম বিবিরহাটের মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সকে অবৈধভাবে জাহাজের পোড়া তেলের সঙ্গে যমুনা অয়েলের তেল মিশ্রণের অপরাধে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। জানা গেছে, সীতাকু-ের ফৌজদারহাটের সিলিমপুর থেকে শুরু করে রেললাইন ঘেঁষে কুমিরার মাদাম বিবিরহাট পর্যন্ত ১৫টিরও বেশি অবৈধ তেলের ডিপো রয়েছে। এসব ডিপোতে এক সময় জাহাজের পরিত্যক্ত তেল ও বিটুমিন বিক্রি হতো। বিটুমিন রাস্তার ঢালাইয়ের কাজে আর পরিত্যক্ত তেল ব্যবহার হতো নৌকাসহ কাঠের তৈরি বিভিন্ন খুঁটি এবং বৈদ্যুতিক কাঠের খুঁটিতে। কিন্তু বর্তমানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন তেল শোধনাগার থেকে ভাউজারের মাধ্যমে জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে এসব অবৈধ ডিপোতে। রিফাইন তেলের সঙ্গে জাহাজের পোড়া তেল মিশ্রণে তৈরি হচ্ছে খোলা মবিলসহ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল লুব্রিকেন্ট। গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের আরডিসি ও সীতাকু-ের এসিল্যান্ড রুহুল আমিন মাদাম বিবিরহাটের মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামে একটি তেল ডিপোতে অভিযান চালায়। এ সময় তেল ডিপোর মালিক মোঃ ইমনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জাহাজের পোড়া তেল সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বিভাজনের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় যমুনা অয়েল কোম্পানি থেকেও ভাউজারে (কুষ্টিয়া-ঢ-৪১-০০১৯) তেল ক্রয় করা হয়। এসব তেল মিশ্রণ করে বিভাজনের মাধ্যমে দেশীয় পদ্ধতিতে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। বিস্ফোরক অধিদফতর ও পরিবেশ অধিদফরের ছাড়পত্র ছাড়া এমনকি যমুনা অয়েলের তেল ক্রয়ের বৈধ কোন কাগজপত্রও তাদের নেই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের আরডিসি রুহুল আমিন জনকণ্ঠকে জানান, যমুনা অয়েলের ভাউজার থেকে তেল সংগ্রহ করা হচ্ছে বিশাল বিশাল চৌবাচ্চায়। চৌবাচ্চাগুলোয় রয়েছে জাহাজের পোড়া তেল।
×