ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নৈমিত্তিক ঘটনা

ইউরোপে অভিবাসীদের মানবেতর জীবন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২ এপ্রিল ২০১৭

ইউরোপে অভিবাসীদের মানবেতর জীবন

পুলিশের লাঠির বাড়ি, পশ্চাতে ধাবমান কুকুরের হিংস্র গর্জনের মধ্যেই পরিচিত মানব পাচারকারীদের বেত্রাঘাত এবং সর্বস্ব লুট করে নেয়া সার্বিয়ায় আটককৃত অভিবাসীদের কাছ থেকে শোনা একটি সাধারণ গল্প। ইউরোপ যাওয়ার পথে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে ভাগ্যবিড়ম্বিত যেসব মানুষ বলকান অঞ্চলে আটকা পড়ে এটি তাদের জীবন চিত্র। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অভিবাসীদের ঢল ঠেকানোর লক্ষ্যে তার সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার পর কেবলমাত্র সার্বিয়াতে আট হাজারের মতো মানুষ আটকা পড়েছে। কিন্তু এরপরও অভিবাসীরা মানব পাচারকারীদের সাহায্যে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ইউরোপে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে নানারূপ হেনস্থার শিকার হয়। বেলগ্রেডের এক পার্কে বসে পাকিস্তান থেকে আসা ২১ বছরের রাজমিস্ত্রি নাজিম খান তার ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন এভাবে। বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ার এক পরিত্যক্ত বাড়িতে অবস্থানকালে এক সন্ধ্যা রাতে পুলিশ তার সঙ্গে আরও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। তারা প্রথমে অভিবাসীদের থানায় তারপর এক সংরক্ষিত এলাকায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। উভয় স্থানেই তাদের বেদম মারপিট করা হয়। ছাড়া পাওয়ার পর তারা সার্বিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার পথে হাঙ্গেরী সীমান্তের কাছাকাছি এসে ধরা পড়ে যায়। পুলিশ তাদের নিকটস্থ থানায় এনে ঠা-া মেঝেতে শুইয়ে তাদের মুখে বিয়ার ছুড়ে মারে এবং পিঠের ওপর দলবেঁধে পায়ে বুট পরা অবস্থায় দৌড় অনুশীলন করে। এর আগেই নাজিম খান ও অন্য বন্দীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনগুলো কেড়ে নিয়ে সেগুলো ভেঙ্গে ফেলে। তবে শারীরিক নির্যাতন ছাড়া হাঙ্গেরী পুলিশ তাদের কাছে কোন টাকা পয়সা দাবি করেনি। সার্বিয়ার বেলগ্রেডে একই ধরনের নির্যাতনের মুখে পড়েছিল ষোলো বছর বয়সী আফগান কিশোর আত্তাল শফিহুল্লাহ এবং চৌদ্দ বছর বয়সী কাইয়ুম মোহাম্মদী। কাইয়ুম মোহাম্মদীকে মেঝেতে শোয়ায়ে তারা প্রসারিত হাতের ওপর বুট জুতা পরে হাঁটা হয় এবং উরুতে ব্যাটন দ্বারা উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। এক পর্যায়ে নাজিম খান বলেন, স্বদেশী পুলিশের চেহারা কী হয় তা আগে থেকেই জানি কিন্তু সভ্য ইউরোপীয় পুলিশের এ রকম ভয়ঙ্কর রূপ আমি এর আগে কল্পনাই করতে পারিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব সময় মানবাধিকারের কথা বলে এবং হাঙ্গেরী, বুলগেরিয়া ও ক্রোয়েশিয়া এই ইইউ জোটভুক্ত দেশ তা সত্ত্বেও বিশ্ব নীরব, এ ব্যাপারে তারা চোখ বন্ধ করে আছে। এ প্রসঙ্গে মেডিসিন স্যান ফ্রন্টিয়ার্স এমএসএফ নামের একটি চিকিৎসা সেবা সংগঠন জানিয়েছে, অভিবাসীরা যাতে সীমান্ত পার হতে ভয় পায়, সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এসব নিষ্ঠুর কর্মকা- চালানো হয় সার্বিয়ায় শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্রের রাদোস ভুজরোভিক বলেছেন, অভিবাসীরা তাকে জানিয়েছেন যে, হাঙ্গেরীতে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নিষ্ঠুরতা চালানো হয়। তাদের কুকুরের কামড়, ব্যাটন চার্জ এবং হাড়গোড় ভেঙ্গে দেয়ার জন্য ভারি জিনিস দিয়ে আঘাত করা হতো। অনেকে ক্রোয়েশিয়ায় শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ করেছেন। তবে অভিবাসীদের অভিযোগ এসব দেশের কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করেছে। ক্রোয়েশিয়া বলেছে, শারীরিক নিগ্রহের কোন প্রমাণ নেই হাঙ্গেরীর ভাষ্য তারা মানবিক শ্রদ্ধাবোধ দেখে আচরণ করে এবং বুলগোরিয়া বলেছে, তার অভিবাসীদের অভিযোগ তদন্ত করেছে কিন্তু সুস্পষ্ট কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। -এএফপি
×