ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনে আশার আলো

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২ এপ্রিল ২০১৭

প্রতিবন্ধী শিশুদের জীবনে আশার আলো

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ বিশেষ শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে টানতে সোসাইটি ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব অটিস্টিক চিলড্রেন সোয়াক বিশেষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমব্যথী পাঁচ অটিস্টিক শিশুর মা তাদের সন্তান ও সমাজের আরও অটিস্টিক শিশুকে অন্যরকম একটা পৃথিবী দেয়ার আশায় ২০০০ সালে এ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ স্কুলে বর্তমানে ১২০ জন বিশেষ শিশু পড়াশোনা করছে। এদের মধ্যে ১৬ জন আছে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের, যাদের বিনা খরচে পড়তে সাহায্য করছে সোয়াক। এ স্কুলেই শিশুদের বয়সের ভিত্তিতে পড়াশোনা, ভোকেশনাল ট্রেনিংসহ সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে তাদের অবস্থার পরিবর্তন করা হচ্ছে। পাঁচ বছর থেকে শুরু করে ৩৫ বছর বয়স্ক বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের এখানে হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়া হয়। রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত সোয়াক স্কুলের বিশেষ এ শিশুরা ঘরের শোপিস থেকে শুরু করে কুশন কভার, ম্যাট ন্যাপকিন, জুয়েলারি- সবই তৈরি করতে শিখছে নিখুঁতভাবে। তাদের কাজ দেখলে অবাক হতে হয়। তাদের তৈরি দ্রব্যাদি নিয়ে বিভিন্ন মেলায় আবার বিক্রিও করা হয়। এখানেই পড়াশোনা করে ভোকেশনাল ট্রেনিং নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের ২২ বছরের ইরফান এখন একটি গার্মেন্টসে কাজ করছে। বিশেষ এ স্কুলের প্রিন্সিপাল সাবিনা হোসেন জানান, আমার ছেলেও একজন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। সেও এ স্কুলে পড়ছে। আজ সে স্বাবলম্বী। অটিজম একটি নিউরোলজিক্যাল বা স্নায়ুবিক সমস্যা। এ সমস্যার শিশুদের মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। এতে ওই শিশু কথা বলতে বা বুঝতে, নতুন জিনিস শিখতে এবং সমাজে চলতে সমস্যার সম্মুখীন হয়। অটিজমকে আমরা সাধারণত একটি স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার বলে থাকি। কারণ এর উপসর্গ নানারকম হতে পারে এবং ক্ষেত্রবিশেষে একসঙ্গে হতে পারে। একই সঙ্গে এ রোগের প্রভাব ব্যক্তিবিশেষে আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। কোন শিশু হয়ত সামান্য সাহায্য পেলেই স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে পারে আবার কেউ হয়ত সম্পূর্ণরূপে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়। এ রকম শিশু যখন কোন মায়ের কোলে আসে তখন কোন কোন পরিবার মাকে সহযোগিতা করলেও অনেক পরিবার নানাভাবে অসহযোগিতা করে। এমন মায়েদের পাশে থাকাই সোয়াকের লক্ষ্য। অটিস্টিক শিশুর এক মা বলেন, তার বাচ্চাকে নিয়ে পরিবার সব সময় তাকে খোটা দেয়। তাই তার শিশুকে নিয়ে তিনি কোথাও যান না। প্রথমে এমন সব শিশুর মা মানতে পারেন না তার শিশু অটিস্টিক। তার পরে মনে হয় কোন্ পাপে তার এমন সন্তানের জন্ম হলো। এর পরে শুরু হয় তাকে নিয়ে হতাশা, এ শিশুর ভবিষ্যত কী হবে? এ বিষয়ে প্রিন্সিপাল সাবিনা হোসেন বলেন, কিছু অটিস্টিক শিশু গান, ছবি আঁকা, গণিত অথবা কম্পিউটারে অভাবনীয় দক্ষতা প্রদর্শন করে থাকে। তবে অটিজমের কোন জাদুকরী চিকিৎসা নেই। যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করে সুষ্ঠু ও সঠিক পদ্ধতিতে এ শিশুদের সঙ্গে কাজ করা যায় তত দ্রুত এদের উন্নয়ন সম্ভব। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়াম ও উন্মুক্ত স্থানে খেলাধুলা করা অটিস্টিক শিশুদের মানসিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। যত শীঘ্রই সম্ভব এমন শিশুকে শনাক্ত করে বিশেষ স্কুলে দিলেই শুরু হতে থাকে তাদের উন্নয়ন। এক্ষেত্রে বাবা ও পরিবারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান তিনি। স্কুলের ডেপুটি ডিরেক্টর মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, সোয়াকের প্রভাতী ও দিবা শাখায় তাদের শিক্ষার্থীরা শিখছে। স্কুলে চারজন শিক্ষার্থীর জন্য আছেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। সে হিসাবে স্কুলে মোট ৫১ জন শিক্ষক আছেন। অটিস্টিক শিশুদের সামগ্রিক উন্নয়নে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি এ্যাপ্রোচের মাধ্যমে একটি টিম গঠন করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতি সেকশনে ছয়জন ছাত্রছাত্রীর জন্য তিনজন শিক্ষক ও একজন আয়া রয়েছেন। একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের পাশাপাশি আরও রয়েছেন ক্যাফে শিক্ষক, ক্রীড়া শিক্ষক, কম্পিউটার শিক্ষক, সুপারভাইজার, সঙ্গীত শিক্ষক, আর্ট শিক্ষক, ভোকেশনাল শিক্ষক, স্পিচ এ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, টিচার ইনচার্জ ও সাইকোলজিস্ট। পনেরো বছরের উর্ধ ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে প্রিপারেটরি ওয়ার্ক এ্যান্ড এ্যাকটিভিটি সেন্টার, যেখানে তারা ব্লক, টাই ডাই, সেলাই, বাটিক ও পেপার টেকনোলজির কাজ করে। তাছাড়া ‘সোয়াক’ ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত অটিস্টিক শিশুকে প্যাকেজ প্রোগ্রামের আওতায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
×